শেখ শাহজাহানের হাতে ছিলো মাসিক বেতন নেওয়া ২০০ জনেরও বেশি দূষ্কৃতি, সন্দেশখালিতে চলতো নিজস্ব আইন দাবি বিজেপির
বেঙ্গল মিরর, সন্দেশখালি ও কলকাতাঃ* উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালির দিকে এখন তাকিয়ে গোটা দেশ। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়। গোটা দেশের মানুষ জানতে চায় সন্দেশ লখালিতে কি হচ্ছেআ? জানার কারণ অবশ্যই আছে। কারণ গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালি এলাকায় রেশন কেলেঙ্কারি মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি টিম অভিযান চালাতে আসে। তখন শেখ শাহজাহানের প্রায় এক হাজার সমর্থক একসাথে ইডি টিমের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এতে ইডি টিমের আধিকারিক এবং তাদের সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বেশ কয়েকজন জওয়ান গুরুতর আহত হয়। অনেক কষ্টে ইডি টিম এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী শেখ শাহজাহানের সমর্থকদের কবল থেকে পালিয়ে যান। তারা কোনমতে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সফল হন।
ঘটনার খবর পেয়ে নেজাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই ঘটনার পর থেকে শেখ শাহজাহান পলাতক ছিল। পরে ইডি মামলা করে। নিজেদের উপর প্রাণঘাতী হামলা, শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একটি বা দুটি নয়, তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। যা জামিন অযোগ্য। শাহজাহান ফেরার থাকায় এলাকার লোকজনেরা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে। এতে অনেক মহিলাও এগিয়ে আসেন।
শেখ শাহজাহান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ নিয়ে নারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপরদিকে এলাকার লোকজনেরা অভিযোগ করেন, শাহজাহানদের বিরুদ্ধে তাদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। এইসব জমিতে মাছের ভেড়ি করার অভিযোগ রয়েছে। এলাকার মানুষদের কথা বিশ্বাস করলে শেখ শাহজাহান তার ক্ষমতার জোরে ওই এলাকার তিন লাখ ১২ হাজার বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন। তা ছাড়া ঐ এলাকায় প্রায় ৬০০টি ইটভাটা রয়েছে। এইসব ইটের ভাটায়ও তার নিয়ন্ত্রণ আছে। এই দুই ব্যবসার ওপর তার শাসন চালাতে শেখ শাহজাহান একটা-দুটি নয়, ২০০-এর বেশি গুন্ডা রেখেছেন বলে অভিযোগ। যাদেরকে তিনি মাসিক ৬ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেন। শেখ শাহজাহান মোটরসাইকেলে করে এসব ব্যবসা পরিচালনা করতেন। যারা শেখ শাহজাহানের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত তাদের মারধর করে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো।এমনকি শেখ শাহজাহান বাংলাদেশ থেকে লোক এনে মাছের পুকুর ও ইটভাটায় কাজ করাতেন। সেখান থেকে তিনি কমিশন পেতেন। মজুরি হিসাবে ৪০০ টাকা দেওয়া হলেও, বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদেরকে মাত্র ২০০ টাকামজুরি দিয়ে কাজ করা হতো।
রাজ্য বিজেপি নেতা ঐ এলাকার ইনচার্জ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, শেখ শাহজাহান ধরা পড়েছেন। শেখ শাহজাহানদেরও সঙ্গীদেরও ধরতে হবে। ২০২১ সাল থেকে এই এলাকায় পরিস্থিতি এই রকম ছিলো বলে জানান তিনি। তিনি দলের কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এলাকায় দ্বারে দ্বারে সভা-সমাবেশ করে চলেছেন এবং সংগঠন বাড়াতে ও শক্তিশালী করার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে শেখ শাহজাহানের সঙ্গীরা তাকে অনেকবার ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেও তিনি রাজি হননি। শেখ শাহজাহান তার অপকর্মের ফল পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খুব শিগগিরই ঐ এলাকা শেখ শাহজাহানের হাত থেকে মুক্ত হবে। এলাকা হিংসামুক্ত হবে। এখানকার মা-বোনেরা মাথা উঁচু করে যে কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই যে কোনো জায়গায় আসতে পারবেন। কারো বাড়ি-ঘর-দোকান দখল হবে না।