ASANSOL

আসানসোলে সর্বভারতীয় ডার্মাটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ, লন্ডনবাসী প্রবীণ বাঙালি চিকিৎসক ও সাংবাদিককে সম্বর্ধনা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* লন্ডনে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করা ও মেডিকেল পরীক্ষার অন্যতম পরীক্ষক ৮৬ বছরের প্রবীণ বিশিষ্ট বাঙালি চিকিৎসক দিলীপ বন্দোপাধ্যায় ও সাংবাদিকতায় ৫০ বছর পূর্ণ করা শিল্পাঞ্চলের প্রবীণ সাংবাদিক বিশ্বদেব ভট্টাচার্যকে সর্বভারতীয় ডার্মাটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান জানানো হলো। আসানসোল ক্লাবে রবিবার সন্ধ্যায় হওয়া এক অনুষ্ঠানে তাদেরকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তাদের হাতে এই সম্মান হিসাবে স্মারক তুলে দেন সংগঠনের সর্বভারতীয় প্রাক্তন সভাপতি প্রবীণ চিকিৎসক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ রঘুবীর বন্দোপাধ্যায়, প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায় আইএমএর ডাঃ অজয় সেন, আসানসোল ক্লাবের সভাপতি সোমনাথ বিসোয়াল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সাহিত্যকর্মী, চিকিৎসক সহ অন্যান্যরা । কেন এই দুজনকে বেছে নেওয়া হলো? এই প্রসঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য তাদের কাজ ব্যাখ্যা করেন ডঃ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।


তিন বলেন দামোদর, সিঙ্গারিনি ,তামলা নুনিয়া এইসব নদীগুলো ভয়ংকর ভাবে দূষিত হচ্ছে। তাদের গতিপথ রুদ্ধ করা হচ্ছে, চরিত্র বদলানো হচ্ছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিশেষ করে দামোদর সহ পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য নদীর জল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, নদীর দুপাশে থাকা ছোট বড় নানান ধরনের কারখানার বর্জ্য ও রাসায়নিক তরল নদীতে মিশে গিয়ে জলকে দূষিত করছে। আবার এই নদীগুলোর দুপাশে থাকা বাসিন্দাদের চর্মরোগ সহ নানান ধরনের শারীরিক রোগ বাড়ছে। এর থেকে শিশুরাও বাদ যাচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক হিসাবে আমরা পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড বা এই শিল্পাঞ্চলে এই ধরনের অনেক রুগী পাই। এই ব্যাপারে সরকার, রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে সবাইকে আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নিয়মিত সবকিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, সিঙ্গারিনি গারুই, নুনিয়া নদী ক্রমশই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এটাও দেখা উচিত।


কলকাতার  ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে  দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরেই লন্ডনে থাকা চিকিৎসক ডাঃ দিলীপ বন্দোপাধ্যায় বলেন, আমি মাঝেমধ্যে ভারত ও এই শিল্পাঞ্চলে এসে দেখেছি নদীর জলকে দূষিত করা। যদি নদীর জলকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা না যায় তাহলে কিন্তু চর্মরোগ সহ নানান রোগ আরো বাড়বে। লন্ডন বা ইউরোপে এ ব্যাপারে সরকারিভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয়। অভিজ্ঞ ব্যক্তি এমনকি প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা আদালতের মানুষজনদের নিয়ে এই কাজে নজরদারি করা উচিত। তিনি আরো বলেন, এই রাজ্যে ব্লক স্তরে বা মহকুমা স্তরে চিকিৎসার পরিষেবাকে আরো বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে হবে। তা না হলে মেডিকেল কলেজগুলির চাপ কমানো যাবে না। লন্ডন বা ঐ দেশে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় পুলিশ ও প্রশাসন। বর্তমান সময়ে যারা চিকিৎসার কাজে আসছেন, তাদেরকে রুগীর প্রতি আরো মানবিক হওয়ার কথা তিনি বলেন।
সভায় ঝাড়খণ্ডের নিরসার প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ঝাড়খন্ডে দামোদর নিয়ে আমরা এখনো আন্দোলন করে চলেছি।  ঝাড়খন্ড সরকার ও ডিভিসির কাছে বিষয়টি নিয়ে বারবার দেখার কথা বলেছি।


সাংবাদিক বিশ্বদেব ভট্টাচার্য ১৯৭৪ সালে কিভাবে সাংবাদিকতার শুরু করেছিলেন ও কি ধরনের অন্ততদন্তমূলক সাংবাদিকতা বিশেষ করে বিহারে একের পর এক গণহত্যা, নদি দূষণ সহ ,অবৈধ কয়লা ও বালি পাচারের খবর করতে গিয়ে কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা সভায়  তুলে ধরেন।
এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে সমগ্র আলোচনার বিষয়টিকে গুরুত্ব ও প্রাথমিকভাবে বক্তব্য রেখে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন চিকিৎসক ডাঃ রঘুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *