ASANSOL

আসানসোল জেলা হাসপাতালে প্রৌঢ়র মৃত্যু, দেহর দাবিদার নিয়ে মা ও স্ত্রীর টানাপোড়েন, হলোনা ময়নাতদন্ত

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত* : আসানসোলে জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া এক প্রৌঢ়র মৃতদেহ কে নেবে? দুই দাবিদার। সম্পর্কে তারা হলেন বৃদ্ধা মা কানন দে ও স্ত্রী শুক্লা দে। আর এই টানাপোড়েনের জেরে মঙ্গলবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে প্রৌঢ়র মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হলো না। আপাততঃ দেহ পড়ে রয়েছে জেলা হাসপাতালের মর্গের ঠান্ডা ঘরে। এই ঘটনার জেরে আসানসোল শহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আসানসোল দক্ষিণ থানার আসানসোল পুরনিগমের ৪৩ নং ওয়ার্ডের জিটি রোডের গোধূলি বাইলেনের বাসিন্দা মৃত প্রৌঢ়র নাম বিশ্বনাথ দে (৬০)। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোটা বিষয়টির আইনগত সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন মোতাবেক মৃতদেহ কে পেতে পারেন বা লিগ্যাল হেয়ার কে তা জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের ৪৩ নং ওয়ার্ডের গোধুলি বাই লেনের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দে আসানসোল বাজারে একটি দোকানে কাজ করতেন। তিনি সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাড়ি আসেন। এরপর তিনি বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। বাড়ির লোকেরা সঙ্গে তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

বিশ্বনাথ দের স্ত্রী শুক্লা দে মঙ্গলবার অভিযোগ করে বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের নির্যাতন ও অত্যাচারের কারণে আজ এমন পরিস্থিতি এসেছে যে স্বামীর মৃতদেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে হাসপাতালে যাওয়া পরেও আমি মৃতদেহ দেখতে পাচ্ছিনা। মৃতদেহ আমাকে দেওয়া হচ্ছে না। আমার একটি ছেলে আছে। যে তার মৃত বাবাকে দেখতেও পাচ্ছে না। আমাদের বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তার শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালিকা তাকে নির্যাতন করতে শুরু করে ।এমনকি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অশালীন অভিযোগও করা হয়েছে শ্বশুরবাড়ির তরফে। তাকে তার স্বামীর কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বাধ্য হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়ি ও ধাদকায় বাপের বাড়ি এলাকায় থাকি । আসানসোল পুরনিগমের ক্যান্টিন এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় আমার সাথে তার কথা হয়েছিল, হঠাৎ কি হলো স্বামী মারা গেলেন তা বুঝতে পারছি না। শুক্লাদেবী বলেন, আমার দেওরেরা স্বামীর মৃতদেহ নিতে বাধা দিচ্ছে। তারা শাশুড়ির নাম করে দেহ নিতে চাইছে। কিন্তু আইনগত দিক থেকে আমি ও আমার ছেলে তো দাবিদার। পুলিশ থেকে বলা হয়েছে, কাউন্সিলারের কাছ থেকে লিখিয়ে আনতে। কিন্তু ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমনা খাতুনও সাহায্য করছেন না। তিনি লিখে দিচ্ছেন না। আমি আইনজীবীর পরামর্শ নিচ্ছি।

এদিকে, মৃত প্রৌঢ়র ভাই অমিত দে বলেন, বৌদি বেশ কয়েক বছর হলো দাদাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। এমনকি রাস্তায় দাদাকে ধরে বৌদি মানসিক নির্যাতন করতো। দাদা সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে যান। আমরা সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন চিকিৎসক বলেন, তার মৃত্যু হয়েছে। বৌদির সঙ্গে দাদার যখন এখন আর সম্পর্ক নেই, তাই আমরা পুলিশকে বলেছি, মা’কে মৃতদেহ দেওয়ার জন্য। পুলিশ কি করে দেখি।

অন্যদিকে, পুলিশ জানায় ,এই ঘটনায় আপাততঃ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। দেহের দাবিদার নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় মঙ্গলবার দেহর ময়নাতদন্ত হয়নি। গোটা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এই জটিলতার মধ্যে বুধবারও প্রৌঢ়র মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়।

Leave a Reply