রানীগঞ্জের প্রদীপ সাইকেলে রওনা দিল কেদারনাথ
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ :১৮ বছর বয়স, মানে না কোন মানা, ১৮ বছর বয়স এগিয়ে চলার ব্রত, ১৮ বছর বয়স স্বপ্ন জয়ের চেষ্টা। এবার সেই ১৮ বছর বয়সকে অতিক্রান্ত করে, নিজের মনের অভিলাশা সম্পূর্ণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বছর ১৮র প্রদীপ কুমার গড়াই, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গণ্ডি থেকেই, পক্ষাঘাতগ্রস্থ বাবা বাড়িতে রয়েছে পড়ে,আর চানাচুর কারখানায় কর্মরত মা কে সঙ্গে নিয়ে, রানীগঞ্জের টিডিবি কলেজের, বি. এ. প্রথম বর্ষের এই ছাত্র, মঙ্গলপুরে এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে, তার স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যে কেদারনাথ যাত্রার জন্য পাড়ি দিল সাইকেলে করে।
এলাকার বেশ কিছু মানুষজনদের কাছে কেদারনাথ সম্পর্কে জেনে, জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কে বিস্তর পত্রপত্রিকায় নানান বিষয় লক্ষ্য করে, কেদারনাথ সফর নিয়ে বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও ফলো করার পর, চার জ্যোতির্লিঙ্গ প্রসঙ্গে নানান কথা জানার আগ্রহ নিয়ে, সেখানে জ্যোতির্লিঙ্গে পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল সে। এক সময় মনে মনেই সেখানে যাওয়ার একটা অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। তবে তার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তার বয়স। বাড়ির সদস্যরা তাকে জানাই ১৮ বছর না হলে, যেতে দেওয়া হয় না কেদারনাথ, তাই অগতা নিজের ১৮ বছর বয়স হওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটাতে থাকে সে। শেষমেষ ১৮ বছর বয়স হতেই শুরু হয়ে যায় তার কেদারনাথ যাত্রা যাওয়ার প্রস্তুতি।
বাড়িতে একটু একটু করে সঞ্চিত করে রাখা, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে, একটি সাইকেল খরিদ করে, চলে বেশ কিছুদিন ধরে কেদারনাথ যাওয়ার জন্য তোড়জোড়। তবে সেসময় বন্ধ হয়ে যায় কেদারনাথ যাওয়ার সময়সীমা।এরপর আবারো দীর্ঘ অপেক্ষা, আর সেই অপেক্ষার পরই চলে আসে সেই বিশেষ মহেন্দ্রক্ষণ। প্রদীপ জানতে পারে কেদারনাথ যাওয়ার জন্য উঠে যাচ্ছে সকল প্রতিবন্ধকতা, কিছুদিনের মধ্যেই খুলে যাবে কেদারনাথ দর্শনের দরজা, আর তারপরেই সশ্রদ্ধ কেদারনাথজির দর্শন করতে পারবে সকলে। এই বিষয় জানতে পেরেই অবশেষে সাইকেলে করে, নিজের যেটুকু গুছিয়ে রাখা সামগ্রী ছিল তাই থলেতে ভরে, পিঠ ব্যাগে নিয়ে মঙ্গলবার রাণীগঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকা অবস্থিত তার বাড়ি থেকে, বাড়ির সদস্যদের চোখের জলের বাধা পেরিয়ে, বন্ধুবান্ধবদের ও পাড়া-প্রতিবেশীদের শুভেচ্ছা নিয়ে, পাড়ি দিল দেবাদী দেব মহাদেবের জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রার উদ্দেশ্যে।
তার দাবি কুড়ি বাইশ দিনের যাত্রা পথে, সে পৌঁছে যেতে পারবে তার গন্তব্যে। প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহ থাকায় সকাল সকাল সে তার যাত্রা শুরু করে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি কে সঙ্গী করে, কারো সাথে নয়, একাই বেরিয়ে পড়ে সে। চার ধামে পৌঁছে পুজো দেওয়াই তার মূল উদ্দেশ্যে । সকলেই এই যুবকের অদম্য ইচ্ছেকে কুর্নিশ জানিয়েছে, এখন দেখার কত দ্রুত, সে পৌঁছতে পারে তার গন্তব্যে।