ASANSOL

আসানসোলের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২০০ পার করবে না বিজেপি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ তৃনমুল কংগ্রেসের সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে শনিবার দুপুরে কুলটির পরে আসানসোলের উষাগ্রাম বয়েজ হাইস্কুল মাঠে নির্বাচনী সভা থেকে বিজেপির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রে এখন জনবিরোধী সরকার চলছে। দেশে মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব চরমে উঠেছে। তবে এইসব কিছু নিয়ে বিজেপি চিন্তিত নয়। তারা ধর্মের নামে মানুষদেরকে  বিভক্ত করে  রাজনীতি করে আবার ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার যখন জোরের সঙ্গে রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে, তখন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বঞ্চিত করার জন্য সব পন্থা অবলম্বন করছে। ২০১১ সালে বাংলায় তৃনমুল কংগ্রেসের সরকার গঠনের পর থেকে আসানসোলের উন্নয়ন হয়েছে। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। আসানসোলে একটি জেলা তৈরি করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেক কাজ হয়েছে। যা এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করেছে। কিন্তু বিজেপি সে সব কিছু দেখতে পায়না বলে মনে হয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি মানুষকে চাকরি দিতে পারছে না। বিজেপির কারণে এই রাজ্যে ২৬ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন যে তাদের কাছে এখনও ১০ লক্ষ চাকরি রয়েছে. কিন্তু বিজেপির কারণে তিনি সেইসব চাকরিতে নিয়োগ করতে পারছেন না। কারণ যখনই নিয়োগ করতে চাইছি তখন বিজেপি ও তাদের সঙ্গীরা আদালতে গিয়ে নিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।  বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করে তিনি বলেন, বিজেপি নেতারা বলছেন, তারা লক্ষ্মী ভান্ডার বন্ধ করে দেবেন, সাহস থাকলে তা বন্ধ করে দেখান। এর যোগ্য জবাব দেবে বাংলার নারীরা। কুলটির মতো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোলের জনসভাতেও সন্দেশ খালির ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছিল। তারপর বলা হচ্ছে যে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঐ অস্ত্রগুলো যে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার প্রমাণ কি আছে? এমনও হতে পারে যে, সেই অস্ত্রগুলো সেখানে এনে রাখা হয়েছিল। নির্বাচনের দিন তৃণমূলকে বদনাম করার জন্যই তা উদ্ধার করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে দেশের মানুষ ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে গর্বিত ছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার গঠনের পর থেকেন ভারতের সেই গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ন হলে সারা বিশ্বে দেশের বদনাম হবে। তবে তাতে নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপির কিছু যায় আসে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোলের সভা থেকে স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলায় বিজেপিকে থামানোর জন্য একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই যথেষ্ট। এবারের লোকসভা নির্বাচনে শুধু যে বাংলা বিজেপিকে হারাবে এমনটা নয়,  বাংলার পাশাপাশি দেশের মানুষেরা মনস্থির করেছেন যে এবারের নির্বাচনে বিজেপিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেন, ২০২১ এর বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতারা বলেছিলেন যে এবার ভোটে ২০০ পার ( ইসবার দোশো পার) করবে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেলো ৮০টি আসনও পাননি। এখন বিজেপি নেতারা দাবি করছেন যে তারা এই লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ এর বেশি আসন পাবে। কিন্তু তার দাবি, এবার বিজেপি ২০০ র কম পাবে।

  আসানসোলের উষাগ্রাম বয়েজ হাইস্কুল মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা, তাঁর স্ত্রী পুনম সিনহা, রাজ্যের আইন ও শ্রম  মন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক, পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং, রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান  তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান তথা শত্রুঘ্ন সিনহার ইলেকশন এজেন্ট অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ পশ্চিম বর্ধমান জেলার সমস্ত তৃণমূল নেতা এবং বিভিন্ন শাখা সংগঠনের পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন কুলটির সভা শেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ চপারে আসানসোলের সভায় আসেন। সবমিলিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা আসানসোলের সভায় থেকে পৌনে চারটে নাগাদ চপারে দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চপার নামার জন্য কুলটি ও আসানসোলে সভাস্থলের পেছনে অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *