DURGAPUR

কারখানার পাঁচিল চাপা পড়ে মৃত্যু দুই ঠিকা কর্মীর, বিক্ষোভ, ভাঙচুর

বেঙ্গল মিরর, দূর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* বেসরকারি কারখানার পাঁচিল ভেঙে তার তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হলো দুই ঠিকা কর্মীর। আহত হয়েছেন আরো ২ জন। শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের বামুনাড়া গোপালপুর শিল্প তালুকে। মৃতরা হলো গোপালপুর পশ্চিমপাড়ার মাল পাড়ার বাসিন্দা চন্দন মাল (৩৫) ও করণডাঙা আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা রামু টুডু (৪০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলু মাল ও আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের সুরেশ কুমার নামে আরো দুই কর্মী ।


জানা গেছে, এই কারখানার কারখানার পাঁচিল ঘেঁষে  আরো একটি কারখানা রয়েছে। অভিযোগ সেই কারখানার ঘেস ফেলা হয় এই পাঁচিলের গায়ে। ঘেসের চাপে পাঁচিলটি বিপজ্জনকভাবে হেলে যায় । সেই হেলা যাওয়া পাঁচিলের গায়ে একটি বিকাশি নালা নির্মানের কাজ চলছিল। বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা কর্মী সেখানে কাজ করছিল।  বিপজ্জনকভাবে হেলে থাকা পা়ঁচিলটি আচমকাই দুপুর নাগাদ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে কর্মরত কর্মীদের উপর। ভেঙে পড়া পাঁচিলের তলায় চাপা পড়েন কর্মরত কর্মীরা। আশপাশের লোকেরা দৌড়ে আসেন। চন্দন মাল ও রাম টুডুর মৃত্যু ঘটনাস্থলেই হয় বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বুলু মাল এবং সুরেশ কুমার নামে আর দুই কর্মী গুরুতরভাবে আহত হয় । আশঙ্কজনক অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে  হাসপাতালে পাঠানো হয়। ক্রেন এনে, তার সাহায্যে ভেঙে পড়া পাঁচিল সরানোর কাজ শুরু হয়। আর কোন কেউ চাপা পরে থাকতে পারে, এই আশঙ্কায় উদ্ধার কাজ দ্রুত করা হয়। এদিকে স্থানীয় শ্রমিকেরা চরম বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা, এসিপি ( কাঁকসা) সুমন জয়সওয়াল ও আই সি পার্থ ঘোষ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় ছুটে আসেন।
মৃত চন্দন মাল গোপালপুর গ্রামের মাল পাড়ার বাসিন্দা। স্বজন হারিয়ে শোকাহত বাড়ির লোক ও এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন । তারা কারখানার ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কারখানার প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ করে কারখানার নিরাপত্তা রক্ষীরা। এই ঘটনা নিয়ে ঐ কারখানা কতৃপক্ষের তরফে কাউকে পাওয়া যায় নি।


ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান, কারখানার ভেতরে উত্তেজিত মানুষেরা বেশ কিছু জায়গায় ভাঙচুর চালায়। পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কোনভাবে কারখানার পাঁচিল ভেঙে পড়ে। তার তলায় কয়েকজন চাপা পড়ে যায়। যাদের উদ্ধার করা হয়, তাদের মধ্যে দুজন আহত দুজন মারা গেছেন। এখনো পর্যন্ত জানতে পেরেছি। আরো কেউ চাপা পড়ে আছে কিনা তার খোঁজ চলছে।


প্রসঙ্গতঃ, পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের বামুনাড়া গোপালপুর শিল্প তালুকে থাকা বেসরকারি ইস্পাত কারখানাগুলির মালিকেরা কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কোন রকম গুরুত্ব দেয় না বলেই অভিযোগ। এই নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগও করা হয়। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়না কারখানা কতৃপক্ষগুলি। লোকসভা নির্বাচনের আগেই বামুনাড়ায় একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানায় একটি ঘটনায় এক মৃত্যু হয়েছিলো। অভিযোগ উঠেছিল কারখানার কতৃপক্ষ সেই কর্মীর মৃতদেহ লোপাট করার চেষ্টা করেছিলো। তা নিয়ে তুমুল বিক্ষোভও হয়। তারপর শুক্রবার আবারও ঘটনা ঘটলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *