BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্ত থেকে উদ্ধার যুবতীকে ফিরিয়ে নিলো না বাড়ি, পুরুলিয়ার মানসিক হাসপাতালে পাঠালো রুপনারায়নপুর ফাঁড়ির পুলিশ

বেঙ্গল মিরর, রুপনারায়নপুর ও আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ঘড়ির কাঁটা বলছে রাত তখন অনেকটাই হয়েছে। রাস্তাঘাট একেবারো ফাঁকা। পথচলতি মানুষ বলতে গেলে নেই। অন্যদিনের মতো রাস্তায় পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছে। সেই গাড়িতে থাকা পুলিশ কর্মীরা হঠাৎই দেখেন রাস্তায় একা একটি মেয়েকে হেঁটে যাচ্ছে। পুলিশ কর্মীরা বুঝতে পারেন যে, কিছু একটা হয়েছে। তা না হলে, এতো রাতে এমন একটা জায়গায় একা একা একটা মেয়ে ঘুরে বেড়াবে কেন ? সালানপুরের রূপনারায়ণপুরে ঝাড়খন্ড ঢোকার মুখে চেকপোষ্টের রাস্তায় মেয়েটিকে দেখার পরে পুলিশ গাড়ি তার সামনে এসে থামে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মীরা মেয়েটির কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন যে, বিষয়টা কি? কিছুক্ষনের মধ্যে তারা বুঝতে পারেন সে, মেয়েটি মানসিকভাবে সুস্থ নয়।

এরপরে গোটা বিষয়টি ঐ পুলিশকর্মী রা জানান রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসরিন সুলতানাকে। সবকিছু শোনার পরে ফাঁড়ি ইনচার্জ নাসরিন সুলতানা সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে ঐ চেকপোষ্টের কাছে দুই মহিলা সিভিক ভলেন্টিয়ার সহ পুলিশের আরও একটি গাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর মেয়েটিকে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় ফাঁড়িতে। সেখানে মেয়েটি নিজে নিজেই কথাবার্তা বলতে থাকে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে। তখনই অসংলগ্নতা ফুটে উঠে তার আচার-আচরণ ও কথাবার্তায়। ফাঁড়ির ইনচার্জ নিজে তাকে চেম্বারে এনে বসান। কিছু খাবারও তাকে দেওয়া হয়। তার মধ্যে কিছু খাবার মুখে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে সে। এরই ফাঁকে নাসরিন সুলতানা মেয়েটির সঙ্গে একটুআধটু কথা বলে জানার চেষ্টা করেন যে, সে কোথায় থাকে? কোথা থেকে সে এখানে এলো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছুটা সময় পরে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মেয়েটি নিজের থেকেই বলে তার বাড়ি রাঁচিতে।

একইসাথে ফাঁড়ির সকলকে অবাক করে দিয়ে নিজের বাড়ির ফোন নম্বর গড় গড় করে বলতে থাকে। সবকিছু শুনে ফাঁড়ি ইনচার্জ কিছুটা নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু তখন তার জানা ছিলো না যে, আরো কিছু অপেক্ষা করছে এই মেয়েটিকে ঘিরে। এরপর মেয়েটির দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হয় রাঁচিতে তার বাড়িতে। কিন্তু বাড়ির লোকজনেরা মেয়েটিকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হননি। কথাবার্তায় ইনচার্জ জানতে পারেন মেয়েটির ভাই পুনেতে চাকরি করেন। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগের কোন সূত্র পাওয়া যায়নি। দৃশ্যতই কিছুটা হলেও সবকিছু শুনে ও বুঝে হতাশ হন নাসরিন সুলতানা। এমন পরিস্থিতিতে বছর কুড়ির মেয়েটিকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিতে তার মন সায় দিচ্ছিলও না। কারণ তিনি পুলিশ আধিকারিক হলেও একজন মহিলা। সেই হিসেবে তিনি যথার্থই উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে, একা এই মেয়েটির কি অবস্থা হতে পারে। তখনই তিনি মনে মনে ঠিক করেন মেয়েটিকে এমন জায়গায় আশ্রয় দিতে হবে যে, সেখানে থেকে তাকে ভাল করে তোলার চেষ্টা করা যায়।

সেইমতো তিনি আসানসোল আদালতে মেয়েটিকে নিয়ে আসেন। আদালতের বিচারকের অনুমতিতে তাকে পাঠান পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার মেয়েটিকে পুলিশের গাড়িতে করে পাঠানো হয় পুরুলিয়ায়। সঙ্গে যান এক পুলিশ অফিসার ও মহিলা কনস্টেবলকে। কিছু পোশাক ও শুকনো খাবার মেয়েটির হাতে তুলে দেওয়ার সময় কিছুটা হলেও ভারাক্রান্ত হন নাসরিন সুলতানা। তবে রুপনারায়নপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ সহ সব পুলিশ কর্মীদের আশা, মেয়েটি খুব শীঘ্রই মানসিকভাবে সুস্থ হবে ও তারপর সে ফিরে যাবে তার নিজের বাড়িতে। তারপরই হয়তো জানা যাবে, কিভাবে সেই রাঁচি থেকে সে চলে আসে বাংলা-ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া এই রূপনারায়ণপুরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *