RANIGANJ-JAMURIA

রানিগঞ্জে সোনার দোকানে ডাকাতি, অন্ডাল থেকে আরো একজন গ্রেফতার, ১২ দিনের পুলিশ হেফাজত

বেঙ্গল মিরর, রানিগঞ্জ ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ ( Raniganj Senco Dacoity Case ) রানিগঞ্জে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার সাতদিনের মাথায় আরো একজনকে গ্রেফতার করলো রানিগঞ্জ থানার পুলিশ। শনিবার রাতে অন্ডাল থানার দক্ষিণখন্ড থেকে গ্রেফতার হওয়া ধৃত যুবকের নাম শশীকান্ত মালি। তার বাড়ি বিহারের রামগড়ের মালিগড়ায়। রবিবার সকালে পুলিশ ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ তাকে আসানসোল আদালতে পেশ করে। বিচারক ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম প্রতিকা রায় তার জামিন নাকচ করে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে রানিগঞ্জের এই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সনু সিং ওরফে বিশ্বজিৎ কুমার শা ‘ ও আসানসোলে শুট আউটের ঘটনায় সুরজ কুমার সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দুজনেই পুলিশ হেফাজতে আছে।  তবে সনু সিংয়ের গুলি লাগায় সে আপাততঃ আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।


জানা গেছে, শনিবার রাতে গ্রেফতার হওয়া শশীকান্ত মালি ও সনু সিং ছোটবেলার বন্ধু। বলতে গেলে, একই জায়গায় থাকার কারণে তাদের এই বন্ধুত্ব। বেশ কয়েক বছর আগে, শশীকান্ত বিহার ছেড়ে অন্ডালে চলে আসে। সেখানে তার ফুল ও ফলের রসের ব্যবসা আছে। মাসখানেক আগে সনু সিং বন্ধু শশীকান্তর কাছে আসে। তারপর তারা দুজনে রানিগঞ্জের সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে। সবকিছু তারাই করে। গোটা এলাকার  ” রেকি ” ও এই দুজনই করেছিলো । কোন জায়গা দিয়ে তারা দোকানে ডাকাতি করবে ও ডাকাতি করার পরে বেরিয়ে যাবে সহ  সবকিছু প্ল্যান করে সনু বিহার থেকে তার সঙ্গীদের অন্ডালে ডেকে নেয়। সেখানে একটি হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেছিলো সনু। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনায় থাকলেও, ডাকাতির সময় শশীকান্ত সনুদের সঙ্গে রানিগঞ্জে ছিলোনা। তবে, পুলিশ আধিকারিকরা মনে করছেন, ডাকাতির বখরা শশীকান্তের পাওয়ার কথা ছিলো।


এই প্রসঙ্গে এদিন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, রানিগঞ্জের ডাকাতির ঘটনায় আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে হেফাজতে নিয়ে এই ঘটনার আরো তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করা হবে।
উল্লেখ্য, রানিগঞ্জ ও আসানসোলের ঘটনার অন্য অভিযুক্তদের ধরতে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের তিনটি দল বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে রয়েছে।
এদিকে, দিন তিনেক আগে সনুর এক ভাই আসানসোল জেলা হাসপাতালে এসেছিলো, তাকে দেখতে। কিন্তু পুলিশ সেলে ভর্তি থাকা সনুকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় নি। জানা গেছে, পুলিশ আধিকারিকরা সনুর ভাইকে তথ্য পেতে জেরাও করেছে।
প্রসঙ্গতঃ,  গত রবিবার ৯ জুন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ৭/৮ জনের একটি ডাকাত দল রানিগঞ্জ শহরে ৬০ নং জাতীয় সড়ক বা এনএসবি রোডের তারবাংলা এলাকায় একটি সোনার দোকানে হানা দেয়। মিনিট পাঁচেক অপারেশন করে ডাকাতরা ৪ কোটি টাকারও বেশি সোনার গয়না লুঠ করে। কিন্তু বেরোনোর সময় তাদেরকে পুলিশের গুলির সামনে পড়তে হয়। সেই সময় ঐ সোনার দোকানের সামনে কাজে এসেছিলেন আসানসোলের জামুড়িয়া থানার শ্রীপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ মেঘনাদ মন্ডল। তিনি বুঝতে পারেন যে, ঐ সোনার দোকানে ডাকাতি হচ্ছে। এরপর তিনি সোনার দোকানের কাছে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির আড়ালে গিয়ে ডাকাতদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। দুপক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই শুরু হয়।


ডাকাতদের একজনের গায়ে মেঘনাদের চালানো গুলি লাগতেই তারা বোঝে, এবার তাদেরকে এলাকা ছেড়ে দ্রুত চম্পট দেওয়া ছাড়া আর গতি নেই। কোনমতে জখম সঙ্গীকে টেনে বাইকে তুলে নেয় দুই যুবক। নিজেদের একটি বাইক দোকানের সামনে ফেলে, ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকার সোনা ও হীরের গয়না ব্যাগে নিয়ে অন্য দুটি বাইকে করে পালায় সাতজন। একটি বাইক ছাড়াও ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে জামাকাপড় ভর্তি দুটি পিঠের ব্যাগ , ৪২ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার গয়না সমেত একটি ব্যাগ।

গোটা ঘটনা দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তাতে দেখা গ্রেফতার হওয়া সোনু সিং প্রথমে দোকানে হাতে কার্বাইন নিয়ে ঢুকছে। বেরোনোর সময় পুলিশের গুলি তার কোমরে লাগে। সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন তার সঙ্গীরা তাকে মোটরবাইকের বসিয়ে চম্পট দেয়। পরে এরা আসানসোলের মহিশীলা কলোনিতে আসে। সেখানে চক্রবর্তী মোড়ে দূর্গাপুরের বাসিন্দা নয়ন দত্ত নামে এক যুবককে গুলি করে তার চারচাকা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। রবিবার রাতেই ঝাড়খণ্ডের গিরিডি পুলিশ ঐ চারচাকা গাড়ি সহ সরিয়া এলাকার জঙ্গল থেকে সুরজ সিং নামে একজনকে ধরে। পরে ধরা পড়ে কোমরে গুলি লাগা সনু সিং। প্রথমে তাকে ধানবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পরে তাকে নিয়ে আসা হয়, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুদিন পরে তাকে নিয়ে আসা হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। গিরিডি পুলিশ সুরজ সিং ও সনু সিংয়ের কাছ থেকে পাওয়া ঐ গাড়ি থেকে ডাকাতি করা প্রায় পুরো সোনার গয়না উদ্ধার করে। পাওয়া যায় বেশ কিছু কার্তুজ।

Leave a Reply