প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : প্রয়াত হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বালিগঞ্জে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। রেখে গেলেন স্ত্রী ও এক সন্তানকে। দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবন। প্রথমে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধবাবু।
বুদ্ধদেবের ১১ বছরের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছর বাংলার রাজনীতিতে নানা দিক থেকেই এক সরগরম পর্ব। এই রাজনৈতিক উত্তাপের গোটাটাই ছিল তাঁর শিল্পায়ন-নীতিকে ঘিরে। ২০০৬ সালে ২৩৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ বছর পরই শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে অবসান হয় সাড়ে ৩৪ বছরের একটানা বাম শাসনের।
বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। সকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রাতঃরাশ করেছিলেন। তার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই খবর পাওয়ার পর রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীরা সেখানে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজফফর আহমেদ ভবনে তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। ২০২৩ সালের ৯ অগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব বট্টাচার্য। ২৯ জুলাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে কদিন তাঁকে ভেন্টিলেশন (ইনভেনসিভ) সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকরা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। তার সঙ্গে ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তারপর ১২ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। বাড়িতে ফিরে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ছিলেন তিনি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন আদর্শ কমিউনিস্ট হিসাবে জীবনযাপন করতেন। তাঁর লেখা এবং পাণ্ডিত্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। তাঁর একাধিক বই আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বুদ্ধবাবু। অসুস্থতার কারণে শেষ কয়েক বছর গৃহবন্দিই ছিলেন। আগেও কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাঁকে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর খোঁজ রাখতেন। বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারে ১৯৪৪-এ উত্তর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৬১-তে কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ১৯৬৪-তে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাংলা ভাষায় স্নাতক হন। স্কুলজীবনেই এনসিসি-তে যোগদান করেন। কলেজ জীবনেও এনসিসি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন। কলেজ জীবনে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। এরপর সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরোর সদস্য হন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রথম বাম সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৯-তে উপমুখ্যমন্ত্রীর হন। ২০০০-তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্যোতি বসু সরে দাঁড়ালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০১১, পর পর দুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর কিছুদিন সক্রিয় ছিলেন রাজ্য–রাজনীতিতে এবং যেতেন পার্টি অফিসে। সেখানেই একদিন নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর থেকেই আসতে আসতে সরে যেতে শুরু করেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে। পরে একেবারেই আর যখন পারলেন না তখন বাড়িতেই থাকতে শুরু করলেন। ২০২১ সালের মে মাসে কোভিডে আক্রান্ত হন তিনি। সেখান থেকেও সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এবার রাজ্যবাসীকে চির বিদায় জানালেন তিনি।