আসানসোল পুরনিগমের ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মধ্যপ্রদেশ থেকে ধৃত দুই
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ বাতিল চেকে জাল সই করে আসানসোল পুরনিগমের ৪০ লক্ষ টাকারও বেশি আর্থিক জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করলো আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের (এডিপিসি) সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। সাইবার ক্রাইম থানার অফিসারদের নিয়ে তৈরি সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল আসানসোল পুরনিগমের ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার এই ঘটনায় রবিবার মধ্যপ্রদেশের (এমপি) জব্বলপুর থেকে এই দুজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম হলো মাধব সারোগী ও প্রিয়াংশু সাহু। তাদের মধ্যে মাধবের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের আনুপুরে ও প্রিয়াংশুর বাড়ি ছত্রিশগড়ের পেন্দ্রায়। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে বাতিল চেকে সই জাল করার পরে আসানসোলের একটি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে এই টাকা তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে ট্রানজিট রিমান্ডে আসানসোলে আনা হয়।
পরে এদিনই দুজনকে আসানসোল আদালতে পেশ করে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হয়েছে আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানার তরফে। বিচারক সেই আবেদনের ভিত্তিতে দুজনের জামিন নাকচ করে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর আসানসোল পুরনিগমের ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষেরও বেশী টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হয়। স্বাভাবিক ভাবেই পুর প্রশাসনের অন্দরে শোরগোল পড়ে। কিন্তু কি করে এই টাকা উধাও হয়েছে? রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ঐ শাখা থেকে পুরনিগমকে জানানো হয় যে, তাদের লেডার প্যাডে একটি চিঠি জমা দেওয়া হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে তারা ফোন নম্বর পরিবর্তন করতে চায়। তখন পুরনিগমের তরফে বলা হয়, এমন কোন আবেদন তারা করেনি। এরপর জানা যায়, ঐ ব্যাঙ্কে থাকা পুরনিগমের একাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষ ৫০১ টাকা টাকা ট্রান্সফার হয়েছে মধ্যপ্রদেশের একটি ব্যাঙ্কে একাউন্টে। সবকিছু খতিয়ে দেখে জানা গেছে, টাকা ট্রান্সফারে একটি বাতিল হওয়া চেকে সই জাল করে গোটা বিষয়টি করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক গোটা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতো করে কিছু করার আগেই ৪০ লক্ষ টাকার মধ্যে ২৮ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ঐ ব্যাঙ্কে পড়ে আছে ১২ লক্ষ টাকা। সেই টাকা তোলা আটকানো হয়।
এরপর আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের নির্দেশে পুরনিগমের ফিনান্স অফিসার (এফও) আহমেদ কামাল ফরিদিহ ৩০ অক্টোবর আসানসোলে সাইবার ক্রাইম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে বলা হয় রাজ্য সরকারের একটি ফান্ড থেকে কিছু ব্যক্তির দ্বারা ব্যাঙ্কে একটি জাল স্বাক্ষর জমা দেওয়ার পরে ৪০ লক্ষ ৫০১ টাকার সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম থানা
তদন্ত শুরু করার জন্য ( নং ৯১/২৪ ), ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৩১৯(২), ৩১৮(৪), ৩১৬(২), ৬১(২), ৩৩৮, ৩৩৬(৩) ও ৩৪০(২) নং ধারায় একটি মামলা করে। এরপর সাইবার ক্রাইম থানার অফিসাররা আসানসোলের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায় তদন্ত করতে যান। তারা দেখতে পান আসানসোল ব্যাঙ্ক থেকে এই টাকা মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের একটি ব্যাঙ্ক একাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে৷
এরপর আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি বা সিট) জব্বলপুরে পৌঁছায়। রবিবার অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা মাধব সারোগী ও প্রিয়াংশু সাহুকে। তাদেরকে সেখানকার আদালতে পেশ করা হয়। সেই আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে দুজনকে মঙ্গলবার আসানসোলে নিয়ে আসা হয়।
এই প্রসঙ্গে, মঙ্গলবার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (হেডকোয়ার্টার) ডাঃ অরবিন্দ কুমার আনন্দ বলেন, ঐ ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে মধ্যপ্রদেশ থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো তদন্তের জন্য তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আসানসোল পুরনিগমের সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে, বিভিন্ন ট্যাক্স থেকে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ ব্যাঙ্কে জমা না করায় কুলটি থানায় দায়ের করা হয়েছিল আসানসোল পুরনিগমের তরফে। সেই ঘটনা ঘটেছিলো ২০২১ সালে। টাকার পরিমাণ ছিলো ৮৭ লক্ষ টাকা। কুলটি বোরো অফিসের এক কর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো।