রানিগঞ্জে শিল্পতালুক থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ, ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি
উদ্বেগ প্রকাশ করে, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে চিঠি রানিগঞ্জ বিধায়কের
বেঙ্গল মিরর, রানিগঞ্জ ও আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল ও দূর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া বা শিল্প তালুক হলো আসানসোল মহকুমার রানিগঞ্জ শহরের অদূরে থাকা ” মঙ্গলপুর “। সেই মঙ্গলবার শিল্প তালুক থেকে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক হারে দূষণ ছড়াচ্ছে। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করলেন রানিগঞ্জের তৃনমুল কংগ্রেসের বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায়। আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায় দূষণ আটকে, এলাকার বাসিন্দাদের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জানিয়ে দিন দুই আগে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলমকে চিঠি লিখেছেন। তাপসবাবু তার লেখা চিঠি গোটা এলাকার সার্বিক ছবিটা তুলে ধরেছেন। এলাকার বাসিন্দারা এই দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট সহ একাধিক রোগে ভুগছেন বলে তিনি জেলাশাসককে জানিয়েছেন। তাপসবাবু, জেলাশাসককে গোটা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দূষণ ঠেকাতে প্রশাসনিক স্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান।
রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্প তালুক বাম আমলে ২০০০ সালে তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে এই শিল্প তালুকে একাধিক স্পঞ্জ আয়রন কারখানা আছে। এই শিল্প তালুকের আশপাশে সাতটির মতো গ্রাম আছে। সেই গ্রামগুলোতে কয়েক হাজার মানুষের বাস। এইসব গ্রাম ছাড়িয়ে রয়েছে রানিগঞ্জ শহর।
অভিযোগ, মঙ্গলপুর শিল্প তালুকের কারখানাগুলিতে দূষণ ঠেকাতে কাগজে-কলমে ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা বাস্তবে কতটা কার্যকর আছে বা হয়, তা দূষণ ছড়ানোর ফল দেখলেই বোঝা যায়। এই এলাকার বাতাসে কালো ছাই সবসময় উড়ে। সেই ছাইয়ের আস্তরণ পড়ে গাছের পাতা, বাড়ির খোলা বারান্দা থেকে ছাদ সহ বাইরের সবকিছুতেই। এইসব এলাকার বাসিন্দাদেরকে সবসময় বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তাতেও দূষণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। দরজা-জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে ধোঁয়া ও ধুলো।
প্রসঙ্গতঃ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে এলাকা ভিত্তিক বাতাসের গুণগত মান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স মাপা হয়ে থাকে। তাতে দেখা যাচ্ছে রানিগঞ্জে গত সাতদিনে গড়ে বাতাসের গুণগত মানের সূচক রয়েছে ২০০ থেকে ২৭৫ এর মধ্যে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতে, ২০১ থেকে ৩০০ হলো অস্বাস্থ্যকর। এই সূচক শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগে যারা ভোগেন, তাদের পক্ষে মোটেই ভালো নয়।
রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় বলেন, ঐ শিল্প তালুক সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা আমাকে বারবার বলছেন, ঐসব কারখানা থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। তারজন্য তারা নানা ধরনের রোগে ভুগছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা। তিনি আরো বলেন, আমি রানিগঞ্জের বিধায়ক হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু কোনকিছুই করা হয়নি। তা আমি এবার পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। বলেছি দূষণ ঠেকাতে প্রশাসনিক স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এদিকে, রানিগঞ্জ বনিকসভার সাধারণ সম্পাদক রোহিত খৈতান শিল্প তালুকের এইসব কারখানা থেকে যে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন। তিনি এদিন বলেন, অভিযোগ সত্যি। সবমিলিয়ে এই ধরনের ছয়টি কারখানা আছে। আমরা তাদেরকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বারবার বলে থাকি। কেউ কেউ মানে। আবার কেন তা করেনা। আমাদের তাদের প্রতি, আবেদন শিল্প করুন, ব্যবসা করুন। কিন্তু তা করুন সরকারি নিয়ম ও আইন মেনে। বনিকসভার তরফে আমরা আবার কারখানা মালিকদেরকে বিষয়টি নিয়ে বলবো।
অন্যদিকে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের আসানসোলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা কোন কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এরমধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পরে নজরদারি শুরু করা হয়েছে। কোন খামতি পাওয়া গেলে আইননুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।