আসানসোলে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে আন্তঃরাজ্য জালিয়াতি চক্রের হদিশ, উদ্ধার প্রচুর নথি সহ নগদ টাকা ও সোনার গয়না
মুল অভিযুক্তের সঙ্গে ধৃত অটো চালক
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* রেলে চাকরি দেওয়ার নামে বড়সড় আন্তঃরাজ্য জালিয়াতি চক্রের হদিশ দুদিন আগেই পাওয়া গেছিলো শহর আসানসোলে। সেই চক্রের মুল চাঁই বা মাস্টার মাইন্ডকে আগেই গ্রেফতার করেছিলো আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। রবিবার রাতে আসানসোল শহরের সেনরেল রোডের সৃষ্টিনগরে হানা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করলো এই চক্রের আরো এক সদস্য অটো চালককে। ধৃতর নাম অবধেশ যাদব। তার বাড়ি আসানসোল দক্ষিণ থানার দূর্গামন্দির এলাকায়। সোমবার ধৃতকে আসানসোল আদালতে পেশ করে পুলিশ তদন্তের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে ৬০ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার রাতে আসানসোল দক্ষিণ থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা জনৈক লক্ষণ ঘোষাল এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনায় শনিবার রাতে মুল অভিযুক্ত হিসাবে একজনকে গ্রেফতার করেছিলো আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। ধৃতর নাম হরিন্দ্রর সিং। তার বাড়ি বিহারের আড়া জেলায়। রবিবার ধৃতকে ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে আসানসোল আদালতে পাঠিয়েছিলো আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। বিচারক সেই আবেদনের ভিত্তিতে ধৃতর জামিন নাকচ করে ১২ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেন। ধৃতকে জেরা করে পুলিশের হাতে এই চাকরি সংক্রান্ত বেশ কিছু সূত্র আসে।




তার ভিত্তিতে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ আসানসোল উত্তর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় আসানসোলের সেনরেল রোডে আসানসোল সৃষ্টিনগরের ” সংহতি ” আবাসন এলাকায় হানা দেয়। তখন সেখান থেকে একটি অটো রিক্সা বেরোচ্ছিলো। সেটিকে পুলিশ আটকায়। তল্লাশিতে সেই অটো থেকে এই অভিযোগ সংক্রান্ত প্রচুর নথি পাওয়া যায়। অটো সহ সেইসব নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেফতার করা হয় চালককে। পরে ঐ আবাসন এলাকায় দুটি ফ্ল্যাটে হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে এই চাকরি দেওয়া সংক্রান্ত নথি পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে নিয়োগ পত্র, ওয়েমার শিট, রেল চাকরির নিয়ম সংক্রান্ত একাধিক বই, মেডিকেল পরীক্ষা সার্টিফিকেট। এছাড়াও পাওয়া গেছে নগদ ১০ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা ও ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনার গয়না। দুটি ফ্ল্যাটকে সিল করে দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ঐ আধিকারিক আরো বলেন, মহারাষ্ট্রের এক ব্যক্তি এই ব্যাপারে যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাতে মোট ৬ জনের নাম আছে। তবে ঠিক কতজনকে প্রতারিত করা হয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার হয়। মুল অভিযুক্তর কলকাতাতেও ফ্ল্যাট আছে। চক্রের সদস্যরা আসানসোলে রেলে চাকরিতে জয়েন করানোর কথা বলেছিলো। সেই মতো অন্য রাজ্যে চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিলো। রেলের হাসপাতালে তাদের মেডিকেল পরীক্ষাও করানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কারোরই চাকরিতে জয়েন করা হয়নি। কিন্তু ততক্ষণে হরিন্দ্রর সিং রেলে চাকরি দেওয়ার নামে ৬০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে জানা যায়, পুরোটাই ভুয়ো বা জাল। এরপরই তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ আধিকারিক বলেন, সবকিছু খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে।