পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মৃতার মা, মেয়ের দেহ নিয়ে কাঁকসা থানায় বিক্ষোভ ইভটিজিংয়ের তত্ত্ব উড়িয়ে রেষারেষি বললেন সিপি
বেঙ্গল মিরর, কাঁকসা ও দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ গাড়ির নম্বর থেকে মালিকের নাম পাওয়া গেছে। অথচ ঘটনার ১৮ ঘন্টা পরেও সোমবার সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত কাউকে ঐ গাড়ির মালিক বা গাড়িতে থাকা কাউকে আটক পর্যন্ত করা হয় নি।
অথচ পানাগড়ে দুর্ঘটনায় চন্দননগরের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্ণধার যুবতী মৃত্যুর ঘটনায় এদিন সন্ধ্যা সাতটার সময় তড়িঘড়ি কাঁকসা থানায় সাংবাদিক সম্মেলন করে মৃত যুবতীকে ইভটিজিং করার বিষয়টি অস্বীকার করলেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সিপি বা পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। তার বদলে তিনি গোটা ঘটনাটি রেষারেষি থেকে হয়েছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করলেন। তার স্বপক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ কিছু সিসিটিভির ফুটেজ দেখানো হয়।




সিপি বলেন,বুদবুদের আগে একটি পেট্রোল পাম্পে যুবতীর গাড়ি তেল ভরে। তারপর তারা গয়ার উদ্যেশ্যে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এগোতে থাকেন। পানাগড় ঢোকার মুখে পানাগড়ের যুবকদের সাদা গাড়িটি আগে ঢোকে। তার পেছনে যুবতীর গাড়ি ধাওয়া করে। পরে অন্য একটি সিসিটিভি ফুটেজে ( দুর্ঘটনাস্থলের কয়েক মিটার দূরের) একটি দেখিয়ে সিপি দাবি করেন, সেখানেও যুবতীর গাড়ি ধাওয়া করছে পানাগড়ের যুবকদের গাড়ি সেটাই স্পষ্ট দেখা গেছে। রবিবার রাতে পারাজ থেকে পানাগড় পর্যন্ত মাঝে কি কি ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায় নি। যুবতীর সঙ্গে গাড়িতে থাকা একজনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সাদা গাড়িতে ( যাতে পানাগড়ের যুবকেরা ছিলেন) কতজন ছিলো তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।
সিপি আরো বলেন, সকাল থেকে কিছু মিডিয়া গোটা ঘটনাটিকে অন্য রকম বলে চালানোর চেষ্টা করছে। সেই দিকটাও আমরাও দেখছি।
অন্যদিকে, এদিন বিকেলের পরে যুবতীর দেহ ময়নাতদন্তের পরে নিয়ে মৃতার মা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে চন্দননগরের দিকে রওনা হন। কিন্তু যাওয়ার পথে সন্ধ্যার সময় বর্ধমান থেকে তারা ঘুরে কাঁকসা থানায় দেহ নিয়ে এসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। যাকে কেন্দ্র করে থানা চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
থানায় মৃতার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ, এখানে একটা ঘটনায় মেয়ের মৃত্যু ঘটেছে। তার সাথে গাড়িতে যারা ছিলো তারা আহত হলো। তাদের কে না ছেড়ে দিয়ে সকাল থেকে আটকে রাখা হয়। যারা অপরাধী, তাদের এখনো আটক করা হলো না কেন বলে দাবি করেন তিনি। দেহ থানায় রেখে বিক্ষোভ দেখানোর পরিস্থিতি পুলিশ কোনমতে সামাল দেয়। পরে তাদেরকে বুঝিয়ে চন্দননগরে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে, এদিন মৃত যুবতীর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন আরজি করের ঘটনায় মৃত্যু হওয়া অভয়ার মা। তিনি তাকে নিজের মেয়ের কথা বলে, পাশের আশ্বাস দেন।
এদিকে, এদিন এর আগে, পশ্চিমবঙ্গে বারে বারে একই ঘটনা ঘটছে, কেউ বিচার পাচ্ছে? কেউ পাচ্ছে না। জাতীয় সড়কে দুষ্কৃতীদের গাড়ির ধাক্কায় গাড়ি উল্টে মেয়ের মৃত্যুর পর রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মৃত যুবতীর মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বারবার একই ঘটনা ঘটছে। পুলিশের গাফিলতি আছে। পুলিশের কোন নজরদারি ছিল না রাত দুপুরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলো। এতক্ষণ সময় পেরিয়ে গেল এখনো কাউকে ধরতে পারলো না। আমার স্বামী মারা গেছেন আট মাস আগে। আমার মেয়েই একমাত্র রোজকারের ভরসা ছিল। তিনি বলেন, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে যেতো আমার মেয়ে। সেইসব রাজ্যে কোনদিন মেয়েকে কোন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। আমাদের রাজ্যেই নিরাপত্তার অভাবে আমার মেয়ের মৃত্যু হল। মেয়ের কারো সাথে কোন শত্রুতা ছিল না। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আমরা শুধু শাস্তির দাবি করছি।
।
এরপর ছোট গাড়িটি প্রথমে একটি দোকানে ধাক্কা মারে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়া ঐ ছোট গাড়িটি রাস্তার ধারে শৌচাগারে ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে ব্যবসায়ীদের রাখা লোহার যন্ত্রাংশের উপর উল্টে যায়। তাতে গাড়িতে থাকা যুবতীর মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। বাকি চারজনই আহত হন। সেই সুযোগে মদ্যপ অবস্থায় ধাওয়া করা যুবকেরা তাদের গাড়ি সেখানে ফেলে পালিয়ে যায়। চন্দননগরের গাড়ির আহত চারাজনের মধ্যে ২জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কাঁকসার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাঁকসা থানার পুলিশ। দুটি গাড়িকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে।
পিছু ধাওয়া করা গাড়ির নম্বর দেখে পুলিশের অনুমান, সেটি ঐ এলাকারই। সেই নম্বর খতিয়ে দেখে পুলিশ গাড়ির মালিক ও রাতে গাড়িতে কারা ছিলো, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। সোমবার সকালে যুবতীর মৃতদেহ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে হবে পুলিশ জানায়। মৃত যুবতীর পরিবারের সদস্যরা ঘটনার খবর পেয়ে দুর্গাপুরে আসছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।