ASANSOL

রাজ্যে এই প্রথম, আসানসোল জেলে অভিনব উদ্যোগ পাঁচ বন্দীর সঙ্গে দেখা পরিবারের সদস্যদের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* “ ইন্টারন্যাশনাল ফ্যামিলি ডে” বা “আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস” পালিত হয়েছে বৃহস্পতিবার।সেই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগার (জেল) বা স্পেশাল কারেকশনাল হোমে এক অভিনব উদ্যোগ বা মানবিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। আসানসোল জেল কতৃপক্ষের সহযোগীতায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাহায্যে পশ্চিম বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি এই মানবিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এদিন আসানসোল জেলে থাকা চারজন বিচারাধীন বন্দী এবং একজন দোষী সাব্যস্ত বন্দীকে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের তরফে আসানসোলের এসডিও বা মহকুমাশাসক (সদর) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ও ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সচিব আম্রপালি চক্রবর্তীর সঙ্গে জেল সুপার চান্দ্রেয়ী হাইত উপস্থিত ছিলেন। মুলতঃ তাদের তত্ত্বাবধানেই সমস্ত নিয়ম মেনে এই পাঁচজন বন্দীকে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করানো হয়। এই প্রসঙ্গে আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) , জেল সুপার ও ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সচিব বলেন, এদিন আমরা জেলের যা ছবি দেখলাম, তা অত্যন্ত আবেগ পূর্ণ।

তারা বলেন, আমরা আইন মেনে কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও, আজ এখানে যা দেখলাম তা যে কারোর চোখে জল আনার জন্য যথেষ্ট। ভাবা যায়, প্রায় চার বছর পরে ছোট মেয়ে তার মায়ের সাথে দেখা করছে। তার মা এই জেলে রয়েছে। সে তার ঠাকুমার সঙ্গে এসেছে। নাতনির সঙ্গে তিনি নিজের পুত্রবধূকে দেখলেন। একইভাবে এক বাবা তার ছেলের সাথে দেখা করলেন। এক মা তার ছেলের সাথে দেখা করলেন। ছেলেও তার বাবা বা মাকে দেখা করার পর আধ্যাত্মিক শান্তি অনুভব করেছিল। প্রশাসনের আধিকারিকরা বলেন, জেল বা কারাগার, যাকে বর্তমানে সংশোধনাগার বলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পরিস্থিতি বা অন্য কোনও কারণে যদি কেউ অপরাধের পথ বেছে নেয়, তবে তাকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। তার পরিবারকে কাছে পাওয়ার পর, প্রতিটি ব্যক্তি অবশ্যই পরিবর্তনের অনুভূতি বোধ করেন।

তারা বলেন, এই দিনটা একটি ঐতিহাসিক দিন। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথমবার আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসকে সামনে রেখে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।জেলে বন্দী নিজের মায়ের সাথে দেখা করতে আসা ছোট্ট মেয়ের সাথে কথা বললে, সে জানায় যে আমি ৪ বছর পর মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছি। সে এতটাই ছোট যে সে মনেও করতে পারে না যে সে শেষবার কখন তার মায়ের সাথে দেখা করেছিল। তার মায়ের মুখও মনে নেই তবে সে তার ঠাকুমার সঙ্গে মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছে। ঠাকুমা আসানসোলের সালানপুরের বাসিন্দা নেহালি পাতর বলেন, ভালো লাগছে, আবার খারাপও লাগছে। ছেলেকে খুন করে বৌমা জেলে রয়েছে। ছোট নাতনিকে মানুষ করছি। আধিকারিকরা বলেন, যখন এই মেয়েটি তার মায়ের সাথে দেখা করেছিল, তখন মা এবং মেয়ে দুজনেই অঝোরে কাঁদছিল। তারা আশা করেন, সেই মায়ের অশ্রুধারার সাথে অপরাধের সঙ্গে তার সম্পর্কও ধুয়ে যাবে। সে আবার একদিন সমাজের মূলধারায় যোগ দিতে পারবে।ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সচিব বলেন, এই কাজ করাটা আমাদের কাছে খুব একটা সহজ ছিলোনা। কেন না, কেউ অপরাধ করে জেলে থাকলে, তার সঙ্গে পরিবার ও সমাজ যোগাযোগ রাখতে চায়না। অনেকে জেলে দেখা করতে আসতে চাননা। আমরা এমনই বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীর কথা ভেবে, তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে কাউন্সিলিং করি। তবেই এটা সম্ভব হয়েছে। মহকুমাশাসক (সদর) বলেন, সত্যি এমন একটা দিনের সাক্ষী হতে পারাটা গর্বের। একই মত পোষণ করেন আসানসোল জেল সুপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *