কুয়ো থেকে উদ্ধার নিখোঁজ কিশোরীর মৃতদেহ, খুনের অভিযোগ পরিবারের, এলাকায় উত্তেজনা
বেঙ্গল মিরর, কুলটি ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত লাইনপার প্রিয়া কলোনি এলাকার একটি কুয়ো থেকে দুই দিন ধরে নিখোঁজ এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হলো। ১৯ বছর বয়সী কিশোরীর নাম মনিকা মণ্ডল। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে বাড়ির অদূরে কুয়ো থেকে কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর থেকেই এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এবং মনিকার মৃত্যু নিয়ে খুনের সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। পুলিশ এই ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।




অন্যদিকে, মৃত কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বুধবার নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখান। তারা আরো তিনজনের বিরুদ্ধে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন।মনিকা মন্ডলের পরিবারের সদস্যরা বলেন , সোমবার ভোররাত তিনটে নাগাদ কাউকে কিছু না বলেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়স্বজন এবং অন্যান্যরা তার খোঁজ করেন। কিন্তু তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারা এই ব্যাপারে নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে কোন অভিযোগও দায়ের করেননি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা লাইনপার এলাকার একটি কুয়োর জলে তার মৃতদেহ ভাসতে দেখেন। তারা নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় আসে। স্থানীয়দের সাহায্যে পুলিশ মৃতদেহটি কুয়ো থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়। নিখোঁজ কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরে এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠছে।এলাকার কিছু লোক বিশ্বাস যে, মনিকা কুয়োয় ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে তাকে খুন করা হয়েছে। সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যখন মনিকার চটি তার বন্ধু বুনি বাউরির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সন্দেহ হয় যে বুনি এই বিষয়ে কিছু জানে অথবা খুনের সাথে তার হাত থাকতে পারে।
কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বুনির বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু বুনি বলে যে মনিকা তার বাড়িতে এসে চটি রেখে চলে গেছে। কিন্তু সে কোথায় গেছে তা সে জানে না। এলাকায় বাসিন্দাদের দাবি, মনিকার বুনির ভাই শুভম বাউরি ওরফে পুচার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা দুজনেই প্রায়শই ফোনে কথা বলতো। নিজেদের মধ্যে দেখাও করতো। দাবি করা হয়েছে, কোন কারণে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিলো। যা মনিকার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।একই সাথে, একাংশের দাবি, মনিকার তার পরিবারের সাথে ঝগড়া হয়েছিলো। যে কারণে পরে সে ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বুনির বাড়িতে পৌঁছায়।
সেখানে শুভমের সাথে কথা বলার পরে, সে সেখানে থেকে কুয়োয় ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এইসব প্রশ্নের মধ্যেই এদিন সকালে মনিকার পরিবারের সদস্যরা বুনির বাড়িতে গিয়ে পুলিশের সামনেই বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেম। সেই সময় বুনির ভাই সৌরভ বাউরি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরিবারের তরফে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশ সৌরভ এবং তার ভাই রোহন বাউরিকে আটক করে। তাদেরকে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে মনিকার মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।এরপর পরিবারের সদস্যরা মনিকার মৃতদেহ নিয়ে নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে পৌঁছায়।সেখ তারা বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন।
তারা বুনি, শুভম এবং রোহনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে তাদেরকে গ্রেফতার এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। নিয়ামতপুর পুলিশ শুভম এবং রোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে বুনিকে এখনও আটক করা হয়নি। পুলিশ গোটা বিষয়টির তদন্ত শুরু করছে। পাশাপাশি পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে। যা মনিকার মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করতে পারে। এলাকায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাদেখা দেয়। পুলিশ এলাকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বলে জানা গেছে ।পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।