ASANSOL-BURNPUR

বার্নপুরের বাসিন্দা খোয়ালেন ১ কোটি ২৭ লক্ষ, তদন্তে আসানসোল সাইবার থানা

আবারও ডিজিটাল এ্যারেস্টের ঘটনা, মুম্বাই পুলিশ ও সিবিআইয়ের নামে ভয় দেখানোর অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* আবারও সাইবার অপরাধীদের খপ্পরে পড়ে ” ডিজিটাল এ্যারেস্ট ” করে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ঘটলো। চলতি আগষ্ট মাসের প্রথম দিকে এই ঘটনাটি ঘটেছে। মুম্বাই পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্নপুরের রবীন্দ্রনগরের ডলি লজ এলাকার এক বাসিন্দার কাছ থেকে ১,২৭,০৪,৩৩২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার অপরাধীরা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতারণার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রতারিত হওয়া তপন কুমার মাজির অভিযোগ, সাইবার অপরাধীরা তাকে ডিজিটালভাবে গ্রেফতার করেছিলো। পরে মুম্বাই পুলিশ এবং সিবিআই পরিচয় দিয়ে ১,২৭,০৪,৩৩২ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে সাইবার অপরাধীরা। এরপরে, তিনি আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে পুরো ঘটনাটি জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতে সাইবার থানার পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএসের ৩০৮ (৬), ৩১৬ (২), ৩১৮ (৪), ৩১৯ (২), ৩৩৬ (৩), ৩৩৮, ৩৪০ (২), ৬১ (২) নং ধারায় মামলা দায়ের করেছে। শুরু করা হয়েছে তদন্ত।বার্নপুরের বাসিন্দা তপন কুমার মাজি বার্নপুর সেল আইএসপি বা ইস্কো কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী।

তিনি জানিয়েছেন, গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার সময় তার কাছে একটি নম্বর থেকে জনৈক রাহুল রায় নামে একজন ফোন করেন। ডিজিসিএর নামে সেই ফোন আসে। ঐ ব্যক্তি তাকে বলেন যে মুম্বাইতে একটি মোবাইল সিম কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। সেখানে তার আধার নম্বর ব্যবহার করে কানাড়া ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই অ্যাকাউন্ট থেকে ২,০০,০০,০০০ টাকার লেনদেন করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে সেই সিম কার্ড এবং টাকা অবৈধ কার্যকলাপ এবং বেআইনি ভাবে পাচারের অপরাধে জড়িত। এরপরে, আবার একটি অজানা মোবাইল নম্বর থেকে তপনবাবুর হোয়াটসঅ্যাপে একটি কল আসে। সেখানে বলা হয় এই কল মুম্বাই পুলিশ ও সিবিআই থেকে এসেছে। হোয়াটসঅ্যাপে কল করা ঐ ব্যক্তি তার মুম্বাই পুলিশ আইডি দেখিয়েছিলেন। এমনকি তিনি পুলিশের পোশাক পড়েছিলেন। তিনি তাদের প্রতারণামূলক নম্বর সম্পর্কে বলেন।

এও বলেন যে কানাড়া ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট তার নামে খোলা হয়েছে। সেই একাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ লেনদেন হয়েছে এবং তা একটি গোষ্ঠীকে অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পরে, তিনি সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ডেবিট কার্ডের ছবি পাঠিয়েছিলেন। এছাড়াও, তিনি বলেন যে তাকে অর্থ পাচারের মামলায় ডিজিটালভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঐ ব্যক্তি এরপরে তপনবাবুর কাছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গ্রেফতার পরোয়ানা, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নথিও পাঠান। এরপর ঐ ব্যক্তি ভিডিও কলটি অন্য এক ব্যক্তিকে দেন। যাকে তিনি পুলিশের একজন অফিসার বলা হয়। তিনি পুলিশের পোশাকও পড়েছিলেন। ঐ ব্যক্তি তপনবাবুকে ৪ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটালভাবে তাকে গ্রেফতার করে রাখেন।

২৪ ঘন্টা ধরে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলের মাধ্যমে তার উপর নজর রাখা হয়। এরপর তাকে ভয় দেখিয়ে ১৩টি কিস্তিতে মোট ১,২৭,০৪,৩৩২ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এরপরে তপনবাবু বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তখন গোটা ঘটনাটি জানিয়ে তপনবাবু আসানসোল সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।এই প্রসঙ্গে সাইবার থানার এক আধিকারিক বলেন, ঐ ব্যক্তি দিন দুয়েক আগে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে একাধিক ধারায় মামলা করে, তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *