করোনা আবহে পশ্চিমবঙ্গ – ঝাড়খন্ড সীমান্তে ডিউটি থাকার সময় আসানসোল জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টদের নিম্ন মানের সুরক্ষা সামগ্রীর যোগান ও প্রশাসনের অসহযোগিতার দাবি তুলে বিক্ষোভ; সি এম ও এইচ কে উদ্দেশ্য করে হাসপাতাল সুপারকে ডেপুটেশন
করোনা পরস্থিতির তৃতীয় দফার লক ডাউন প্রায় শেষের মুখে। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে চতুর্থ দফার লক ডাউন ঘোষিত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার কথা বলেছেন। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাস্তব পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য এবং কোভীড ১৯ মোকাবিলার জন্য চিকিৎসাব্যবস্থার পরিকাঠামোর ঠিক কোন জায়গায় দাড়িয়ে আছে তার একটি উদাহরণ আজ পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্তর্গত আসানসোল জেলা হাসপাতালে দেখা গেলো।
আজ দুপুর ৩ টের সময় আসানসোল জেলা হাসপাতালের ডি এন বি রুমে হাসপাতাল সুপারিনটেনডেন্টর সামনেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন জেলা হাসপাতালের প্রযুক্তিগত কর্মীরা। এর পর তারা তাঁর কাছে সি এম ও এইচ কে উদ্দেশ্য করে একটি ডেপুটেশন দেন। এই সমস্ত টেকনিশিয়ানদের মধ্যে মূলত ছিলেন প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট এবং ব্লাড ব্যাংকের কর্মীরা। তাদের এই বিক্ষোভের কারণ হিসেবে মূলত ছিল,
করোনা মোকাবিলার জন্যে তাদেরকে আপদকালীন পরিস্থিতিতে আসানসোলের কাছে ভীন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজে পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খন্ড সীমান্তে ডুবুরডিহি চেকপোষ্টে ডিউটিতে ডেকে নেওয়া হলেও কোভিড – ১৯ মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত নিম্ন মানের পি পি ই কিট , গ্লাভস দেওয়া হচ্ছে।
ফলে সংক্রমনের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এরই সঙ্গে এই টেকনিশিয়ানদের রাত্রিযাপনের জন্যে যে স্থানে রাখা হচ্ছে সেটির ব্যবস্থাও অত্যন্ত নিম্নমানের।
প্যাথলজি বিভাগের এক টেকনিশিয়ান বৃন্দাবন মন্ডল বলেন, ” করোনা মোকাবিলায় আমরা অবশ্যই প্রস্তুত। কিন্তু এটাও দেখতে হবে আমাদের আপদকালীন পরিস্থিতিতে ডেকে নিলে জেলা হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের জন্যে স্বাভাবিক পরিষেবা ব্যাহত হবে। এছাড়া অত্যন্ত নিম্ন মানের পি পি ই কিট এবং গ্লাভস দেওয়া হচ্ছে, এন ৯৫ এর নাম করে নিম্নমানের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।
ঠিক মত সাইজের না হওয়ায় সেগুলো একবার পরলেই ছিড়ে যাচ্ছে এবং দ্বিতীয়বার দেওয়া হচ্ছেনা। ফলে সংক্রমনের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এতে আমরা কাজ করতে সুরক্ষিত বোধ করছিনা। এই ব্যাপারে সি এম ও এইচ, ডেপুটি সি এম ও এইচ এবং এ সি এম ও এইচ (যিনি আবার কোভিড ১৯ সংক্রান্ত বিষয়ের জেলার নোডাল অফিসার) নির্বিকার। এসব কারণেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি “।
তিনি আরো অভিযোগ করেন যে শুধুমাত্র আসানসোল এবং দুর্গাপুর রাজ্য সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের করোনা মোকাবিলার কাজে ব্যবহৃত করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেল, রেল, ই সি এল এছাড়াও অন্যান্য সংস্থা থেকে আপদকালীন পরিস্থিতিতে হেলথ টেকনিশিয়ান কর্মীদের ডেটাবেস তৈরী করে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছেনা।
অন্য এক ব্লাড ব্যাংক বিভাগের টেকনিশিয়ান ঋদ্ধেশ রায় বলেন, ” কোনো লিখিত অর্ডার ছাড়াই মৌখিক ভাবে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে আমাদের ডেকে নেওয়া হচ্ছে রাতে চেকপোষ্টে। কিন্তু চেকপোষ্টে পৌঁছে কোনো ডেটা এন্ট্রি অপারেটর কাউকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমাদের যে স্কুলের ভেতর রাখা হচ্ছে সেটিও অপরিষ্কার এবং থাকার অযোগ্য। খাবার এবং জলের কোনো ব্যবস্থা নেই। শৌচালয়ের ব্যবস্থাও নেই যেখানে আমাদের ডিউটিরত থাকতে হচ্ছে অথবা যে স্থানে আমাদের রাখা হচ্ছে। এছাড়া শেষ যেদিন ডিউটি করতে যাই সেদিন ভোর ৪ টের সময় আমাদের যেখানে রাখা হয় ওই স্কুল ঘরেই অজানা কিছু আমার হাতে দংশন করে এবং রক্ত বের হয়। আমরা মোটেই সুরক্ষিত নই।”
অন্য এক প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান কস্তুরী রায় বলেন,” আমরা কাজ করতে অবশ্যই প্রস্তুত কিন্তু আমাদের ন্যুনতম দরকারি সুরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছেনা। লিখিত অর্ডার ছাড়াই ডেকে নেওয়া হচ্ছে। ফলে হাসপাতালের প্যাথলজি এবং ব্লাড ব্যাংক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে এত কম স্টাফ থাকার জন্যে।”
এ ব্যাপারে জেলা হাসপাতাল সুপার ড: নিখিল চন্দ্র দাস বলেন,” আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে সব কিছু জানাবো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সি এম ও এইচ কে। ডাক্তার এবং টেকনিশিয়ানরা এই আপদকালীন করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করে চলেছেন। হয়ত অনিচ্ছাকৃত কোনো পরিকল্পনাগত ত্রুটি রয়ে গেছে। তাদের কাজ করার পরিবেশ নিয়ে যে সমস্যা সেটি অবশ্যই পৌঁছে দেওয়া হবে সি এম ও এইচ এর কাছে এবং আশঙ্কা যায় দ্রুত সমস্যার সমাধান ঘটবে।”
ডেপুটেশন দেবার সময় টেকনিশিয়ানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রকান্ত সরকার, কালীদাস মিত্র, দেবরাজ চৌধুরী, তিথি মাজি, রমারঞ্জন মন্ডল, সঞ্জীব সরকার, শুকদেব গাঙ্গুলি, শুভমিতা গোস্বামী, দেবাশীষ সরকার, গৌতম নায়েক, দীপঙ্কর চ্যাটার্জী এবং আরও অনেকে।
করোনা আবহে জেলা হাসপাতালের টেকনিশিয়ানদের এই বিক্ষোভ স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিকল্পনাগত ত্রুটির দিকটা বেআব্রু করল বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান ঘটে সেটাই লক্ষনীয় বিষয়।