করোনা পরিস্থিতিতে চতুর্থ দফার লকডাউন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ কি বললেন রাজ্যবাসীর প্রতি
কলকাতা, ১৮ ই মে , বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত :
করোনা পরিস্থিতিতে চতুর্থ দফার লক ডাউন ঘোষনা করবার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর প্রতি বেশ কিছু বার্তা দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,
“কেন্দ্র গতকাল নিশ্চিত করেছে, তাই আমরাও ৩১ মে পর্যন্ত চতুর্থ দফার লকডাউন চালু রাখছি এখানে।”
(১) “বুথ অনুযায়ী এবং গ্রামগুলিতে কন্টেনমেন্ট জোনকে ৩টি ভাগে ভাগ করেছি। আমরা। এ, বি, সি। এ- অ্যাফেক্টেড জ়োন, বি- বাফার জ়োন, সি- ক্লিন জ়োন।
এ জ়োন ছাড়া বাকি জায়গায় বড় দোকান সব খুলে যাবে ২১ মে থেকে।”
(২) “হকার মার্কেটগুলি কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গড়া হবে ২৭ তারিখের মধ্যে।”
(৩) “পুলিশ ও পুরসভা জোড় ও বিজোড় সংখ্যা পাস দেবে। জোড়-বিজোড় তারিখের নিয়ম মেনে মার্কেট খুলবে। দোকানে দোকানদারদের গ্লাভস ও মাস্ক বাধ্যতামূলক।”
(৪)” আন্তঃরাজ্য বাস ২১ তারিখ থেকে চালু করব। সরকারি বাস চালানো হবে। বেসরকারি বাস মালিকদের বলছি সোশাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে বাস চালাতে পারেন।”
(৫)” অটোরিকশা ২৭ তারিখ থেকে চলবে। কিন্তু অটোতে ২ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না।”
(৬) “খেলা চলবে। কিন্তু মাঠে কোনও দর্শক থাকতে পারবেন না।”
(৭)”সেলুন তথা চুল কাটার দোকান ও বিউটি পার্লার খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে নাপিত ভাইদের বলা হচ্ছে, যে সামগ্রী দিয়ে চুল দাড়ি কাটবেন তা স্যানিটাইজ করে নেবেন।”
(৮) “সব শিল্পক্ষেত্রও কিন্তু সরকারি দফতরের মতো চালু হয়ে গেল। ৫০ শতাংশ কর্মচারী নিয়ে কাজ করা যাবে।”
(৯) “কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে রাত ৭ টা থেকে সকালে ৭ পর্যন্ত কার্ফু থাকবে। তবে আমরা বলছি না কার্ফু। আমরা বলছি, সন্ধে ৭ টার পর বাড়ির ভিতরে থাকবেন। মুক্তমনে থাকবেন।”
(১০) “সামনে ঈদ রয়েছে। কিন্তু যেহেতু কেন্দ্র লকডাউন করে দিয়েছে, তাই বলছি বাড়িতে বসে ঈদ পালন করুন।”
(১১) আমি জানি এটা মারাত্মক কঠিন। কিন্তু আমি জানি আপনারাই পারেন, কেউ যাতে ষড়যন্ত্র না পারে, অপপ্রচার করতে না পারে সেটা আপনারা নিশ্চিত করতে পারেন।”
(১২) “বাংলাদেশ থেকে বিমানে আজ ১৭০ জন এসেছেন। তাঁদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ লোক ট্রেনে বাসে করে এসেছেন।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে বলব, এটা রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনীতিতে উস্কানি দিলে তা কোভিডকেই উস্কানি দেওয়া হবে।”
(১৩) “এর মধ্যে ১৬টা ট্রেন এসে গেছে। আগে প্রতি ট্রেনে ১২০০ লোক আসছিল, এখন ১৮০০ লোক আসছে। ট্রেনে আসার পর শ্রমিকদের চেক আপ করতে হচ্ছে। তার পর বাড়ি পাঠাতে হচ্ছে। কতগুলো জায়গা বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। চেন্নাই, মুম্বই, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, ইনদোরে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে।”
(১৪) “আমি বলব, ধৈর্য ধরুন। ২০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক নেই। ওটা ভুল সংখ্যা। প্রকৃত সংখ্যা তার থেকে কম।
এক দিনের আমার ঘাড়ের উপর ঠেলে দিলে, অত লোককে কোথায় ঢোকাব। গ্রামের থেকেও তো বাধা আসছে। তা ছাড়া বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অত ব্যবস্থাও তো নেই।”
(১৫) “কোভিড সামলাব, নাকি ঘূর্ণিঝড় সামলাব। কেউ কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। প্লিজ তা করবেন না এখন।”
(১৬) “১১৫টা ট্রেন চেয়েছি। পনেরো দিনের মধ্যে আরও ১২০টা ট্রেন চাইব। আমরা চেষ্টা করব ১৫ দিনের মধ্যে যথাসম্ভব শ্রমিককে ফিরিয়ে আনার। রোজ দশটা করে ট্রেন ঢোকাব।
২৩৫টা ট্রেন ঢুকছে মানে বোঝা যাচ্ছে সাড়ে চার লক্ষ লোক ঢুকে যাবে।
ওই শ্রমিকরা যেখানে পৌঁছবে, সেখানে নজর রাখতে হবে। আমি যদি হাজার হাজার করোনা ছেড়ে দিই, মানুষ কি ছেড়ে দেবে?
জেলায় কোথায় কত লোক ঢুকতে পারবে, কতটা ক্যাপাসিটি রয়েছে, তাও তো দেখতে হবে।”
(১৭)”গ্রাম বাংলায় অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে।”
(১৮)”একদিকে কোভিড নিঃশ্বাস ফেলছে, ওদিকে আমফান নিঃশ্বাস ফেলছে, অন্যদিকে নার্সদের নিয়ে চলে যাচ্ছে, শ্রমিকরা ঢুকছে—কোন দিকে যাব।
মুখ্যসচিবকে বলেছি, নার্স নিয়োগ করুন। দরকার হলে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে কাজে নিন। যেমন মেল হেল্পার বা ফিমেল হেল্পার। তারা ভেন্টিলেটর লাগাতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু অক্সিজেন তো লাগাতে পারবে। আমাকে সাধারণ মানুষ ভুল বুঝবেন না। এটা এক্সপার্টদের থেকে শোনা নয়। আমি কাগজপত্র পড়ে জেনেছি।”
(১৯) “ধরুন আমি বাজার থেকে ফিরে এসে ব্যাগ খুলে আনাজ বের করে রান্না করলাম। ব্যাগটা অন্তত ৬ ঘণ্টা রেখে দিন।”
(২০)”দোকানে গিয়ে ভিড় করবেন না। কারও শ্বাস-প্রশ্বাস বা স্পর্শ থেকে দূরে থাকলে তো নিজে ও আপনার পরিবার বাঁচবে।”
(২১)”পরিকাঠামোগত প্রচুর কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি।
(২২) “কথায় কথায় কার্ফু করার পক্ষে আমরা নই। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যে সরকারকে কোনও কিছু করতে বাধ্য হতে হয়।
চার দিন ধরে আপনারা অনেক রাজভোগ, রসগোল্লা, বিরিয়ানি দেখলেন।
আদতে আমরা ঋণ নিতে পারব মাত্র ০.৫ শতাংশ। কারণ, তার থেকে বেশি নিতে গেলে শর্ত মানতে হবে।
রাজ্য সরকারের কাজে অহেতুক নাক গলানো এই সময়ে ঠিক নয়। অনেক রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ মাইনে কেটেছে। কেউ বলছে, ১২ মাসে ১ মাসের মাইনে কাটবে। কিন্তু তার মধ্যেও যদি বলে, তোমার বিদ্যুৎ আমি সবটা নিয়ে নেব। আমি বলব পারব না। আমাকে যদি কেউ বলে আর্বান ট্যাক্স বাড়াও, আমি বলব পারব না।
কেউ যদি বলে রেশন কার্ডে তাদের ছবি লাগিয়ে পাঠাবে, আমি বলব পারব না।
মানুষের সঙ্গে থেকে যে ক্ষমতা লাভবান হয়, আমি সে দিকে। ওটা আরেকটা অশ্বডিম্ব। চার দিনে চারটে বিগ জিরো।
কারণ, না আছে রাজভোগ, না আছে রসগোল্লা, না আছে জিলিপি না আছে বোঁদে, সবটাই কাঁচকলা।
নানারকম ভাবে বাংলাকে বঞ্চনা করা, বাংলার নামে অপপ্রচার করা এটা নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে গেছে।”
(২৪) “পরিযায়ী শ্রমিকরা কেউ ফিরে না গেলে আমি খুশি। আমি চাইব ওরা কখনওই যেন না যায়। একটু সময় লাগবে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করে নেব।”
(২৫) “বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের মারফত কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপ করছে স্পষ্টতই।
আমফান নিয়ে কেন্দ্রে কী আলোচনা হচ্ছে, আমিও কিছু জানি না মুখ্যসচিবও কিছু জানেন না। মিটিং হতেই পারে। কিন্তু সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়ম মেনে হওয়া উচিত। এটা অসৌজন্য।
সমস্যা সামলাবে রাজ্য, সবটা করেছে রাজ্য, সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য, অথচ তাকে কিছু বলা হচ্ছে না। ভগবানই জানে।”
চতুর্থ দফার লক ডাউনের প্রাক্কালে এই সমস্ত কথা গুলোই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনা গেলো।