Bengali NewsDURGAPURLatestNewsPURULIA-BANKURA

জলের কারণে সমস্যা হতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে

২৪ ঘন্টার বেশি সময় পার হলেও, শুরু করা গেলো না দূর্গাপুর ব্যারাজের লক গেট মেরামতের কাজ

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দূর্গাপুর, ১ নভেম্বরঃ প্রশাসনিক তৎপরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও এখনও দামোদর নদের জলের স্তর নামল না। আর এর জেরে দূর্গাপুর ব্যারেজের ভেঙ্গে যাওয়া ৩১ নং লকগেট মেরামতির কাজে রবিবার দুপুর পর্যন্ত তেমনভাবে শুরু করতে পারলো না সেচ দপ্তর।


এদিন সকাল থেকে দূর্গাপুর ব্যারেজেই ছিলেন সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। কিন্তু জল না নামায় মেরামতির কাজে হাত দিতে পারলেন না সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা। দামোদর নদীর জলের স্তর শনিবারের মতো না থাকলেও রবিবার সকাল থেকে ভাঙা গেট দিয়ে হু হু করে জল ঢুকতে থাকে৷ যা এখন লক গেট মেরামতির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে।

durgapur barrage lockgate
file photo

রবিবার সকালে সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত দাস পরিদর্শন করেন দূর্গাপুর ব্যারেজ। তিনি কথা বলেন বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু জলের স্তর না নামা পর্যন্ত ভাঙা লকগেট মেরামতি করা সম্ভব নয় বলে পরে জানান জয়ন্ত বাবু।
রবিবারই সেচ দফতরের সচিব সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একটি দল দূর্গাপুর ব্যারেজ পরিদর্শনে আসছেন বলে সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু কখন বা কবে থেকে ভাঙা লকগেট মেরামতির কাজ শুরু করা যাবে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।


লকগেট মেরামতির কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার বলেন, বালির বস্তা ফেলে ৩১নং গেট পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা বানানোর কাজ চলছে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও কাজ ধীর গতিতে করতে হচ্ছে। এই কাজে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে দামোদরের জলের স্তর।

আতঙ্ক এখন গ্রাস করেছে দূর্গাপুর ও বাঁকুড়ার সাধারণ মানুষকে

প্রসঙ্গতঃ, শনিবার সকালে দূর্গাপুর ব্যারেজের ৩১নং গেট আচমকাই ভেঙে যায়। একই ভাবে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ১নং লকগেট ভেঙে গেছিলো। যে কারণে সেই সময় একই বিপত্তি হয়েছিলো। দেখা দিয়েছিলো জলের সংকট। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে না তো এইবারও। এখন সেই আতঙ্ক এখন গ্রাস করেছে দূর্গাপুর ও বাঁকুড়ার সাধারণ মানুষকে। কারণ ইতিমধ্যেই দূর্গাপুর শহরের বেশ কিছু এলাকায় জলের সংকট শুরু হয়েছে, এখন লকগেট মেরামতির কাজ যত তাড়াতাড়ি শুরু হবে ততো তাড়াতাড়ি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে এদিন দূর্গাপুর ব্যারেজ পরিদর্শন করেন সেচ দপ্তরের সচিব নবীন প্রকাশ। আগামীকালের মধ্যে ভেঙে যাওয়া লক গেট মেরামতির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।


দূর্গাপুর ব্যারেজের ৩১ নং লক গেট ভেঙে যাওয়ায় সম্পূর্ণভাবে দুর্গাপুর ব্যারেজকে জল শুন্য করে তা মেরামতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজ্য সরকার । নবীন প্রকাশ আরো জানান, ব্যারেজের গেট গুলি অনেক পুরনো। ২০১৭ সালে দূর্গাপুর ব্যারেজের ১ নং লকগেট ভেঙে যাওয়ার পরে সব গেট মেরামতি বা নতুন গেট লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সেচ দপ্তর। সেইমতো কাজ শুরু হয়েছে। খুব দ্রুত দূর্গাপুর ব্যারেজ সহ অন্যান্য ব্যারেজের কাজ শেষ হয়ে যাবে। যেহেতু গেটগুলো অনেক পুরনো সেক্ষেত্রে মেরামতি বা নতুন গেট বসানোর ক্ষেত্রে সময় লাগছে৷

জল সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ডিভিসির বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না


অন্যদিকে, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দূর্গাপুর ব্যারাজের লক গেট মেরামত করে জল সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ডিভিসির বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না। শুধু মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পেই নয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে ডিভিসির দূর্গাপুর স্টিল থার্মাল পাওয়ার স্টেশনেও।

এই দুই বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি। ফলে ৪৮ ঘন্টার পর জল সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দেশের যে সব এলাকায় ডিভিসি বিদ্যুৎ-এর যোগান দেয় সেখানে ঘাটতি দেখা দেবে। মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের ডিজিএম প্রবীর চাঁদ বলেন এমটিপিএসে দুটি রিজার্ভার রয়েছে।জলধারন ক্ষমতা ১৫ লক্ষ কিউবিক মিটার ।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত যতটা সম্ভব পাম্প হাইস থেকে জল ভরে নেওয়া হয়েছে। তাতে দুদিন মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্প সুরক্ষিত। এখানে ৮ টি ইউনিট চালাতে দৈনিক দেড় লক্ষ কিউবিক মিটার জল প্রয়োজন ।এছাড়াও ডিভিসির আবাসনে পানীয় জলের সরবরাহ করতে হয়। আমরা মাইকিং করে জল খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি।

৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে

তিনি আরো বলেন, শুনেছি লক গেট মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গেছে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলেই ডিভিসি আপার ভ্যালির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু করবে। কিন্তু ২০১৭ সালে ১ নং লক গেট ভেঙে যাওয়ায় ৫ দিন সময় লেগেছিলো। এবার দু’দিনের বেশি সময় লাগলে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply