স্থায়ীকরণ ও বেতন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস সহ ৫ দফা দাবিতে কর্মবিরতি
পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিএমওএইচ অফিসে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বিক্ষোভ ও ধর্ণা
বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১১ ডিসেম্বরঃ স্থায়ীকরণ ও বেতন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস সহ ৫ দফা দাবিতে ওয়েষ্ট বেঙ্গল ন্যাশান্যাল হেল্থ মিশন জয়েন্ট এ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা শাখার তরফে শুক্রবার আসানসোলের কল্যানপুরে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ অফিসে একদিনের বিক্ষোভ ও ধর্ণা কর্মসূচি করা হয়। সেই বিক্ষোভ ধর্ণায় জেলার এনএইচএম ও এনইউএইচএমের অধীনে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা অংশ নেন।এই জেলায় এই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পে ১ হাজারের মতো চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন।
সংগঠনের জেলা সভাপতি অনিমেষ চন্দ ও সম্পাদক প্রকাশ দাসের নেতৃত্বে এদিন স্বাস্থ্য কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। তারা একটি মিছিলও করেন। সভাপতি বলেন, আমরা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের একটা অংশ। ২০০৪ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ন্যাশালান রুরাল হেল্থ মিশন ( এনআরএইচএম) প্রকল্প শুরু করে। পরে পুর এলাকার জন্য ন্যাশানাল আরবান হেল্থ মিশন বা এনইউএইচএম গঠন করে তার আওতায় নিয়ে আসা হয় । এই মিশনের মূল উদ্দেশ্যগুলি ছিল শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানাে, নারীস্বাস্থ্য , শিশুস্বাস্থ্য , জল , পরিচ্ছন্নতা , প্রতিষেধক বা টিকাকরণ ও পুষ্টির মতাে সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া ।
এছাড়াও সংক্রামক , অসংক্রামক ও আঞ্চলিকভাবে প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন রােগের প্রতিষেধক ও নিয়ন্ত্রণ করা। এই লক্ষ্যগুলি পুরনের উদ্দেশ্যে মিশন কতগুলি কৌশল অবলম্বন করা হয়। তিনি আরো বলেন, এত বড় মিশনকে বাস্তবায়ন করতে জাতীয় থেকে ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী , মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারন স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে আমাদেরকেগ্রুপে নিয়ােগ করা হয় । বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছি।
উর্ধ্বমুখী বাজার দরে তা দিয়ে সংসার চালানো দুঃসাধ্য
সম্পাদক বলন, ২০০৯ সালে সারা ভারতে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ২১২ ( প্রতি লক্ষ ) ও পশ্চিমবঙ্গে ১৪৫। ২০১৬ সালে ভারতে ১১৩ , পশ্চিমবঙ্গে ১০১। বর্তমানে এই সংখ্যাটা ১০০ – এর নীচে নেমে গেছে । ২০১১ সালে ভারতে নবজাতক মৃত্যুর হার ছিল ৪৩ ( প্রতি হাজারে ) , পশ্চিমবঙ্গে ৩২ । ২০১৭ সালে ভারতে ৩১.৪ ও পশ্চিমবঙ্গে ২৪ জন। বর্তমানে তা আরো কমেৃ গেছে । এই তথ্য পরিসংখ্যান দেখেই বােঝা যায়
এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও সাধারণ মানুষের সহযােগীতার ফলে শুধুমাত্র মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য নয় , স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে । এইভাবে পরিষেবা দেওয়ার পরেও আমরা অবহেলিত। বর্তমানে আমরা বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি । আমাদের অধিকাংশ কর্মী বন্ধুর বেতন ৭৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে । উর্ধ্বমুখী বাজার দরে তা দিয়ে সংসার চালানো দুঃসাধ্য ।
স্থায়ীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিষেবা দিতে থাকলেও আমরা এখনাে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে রয়েছি। সাম্প্রতিককালে স্থায়ী কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি করলেও আমাদের প্রতি কারোর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ।
চাকুরীরত অবস্থায় আমাদের কারাে মৃত্যু হলে পরিবারকে কোনকিছু দেওয়া হয় না । এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা একাধিবার ব্লক স্তর থেকে রাজ্যস্তরের বিভিন্ন আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আলােচনা করেছি। তাদের কাছে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সহকারে বিবেচনা করার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কোন সদুত্তর পাই নি ।
৪ ) তাই আমরা বাধ্য হয়ে ৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য কর্মবিরতি পালন করে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে এসে ধর্ণায় বসেছি। সংগঠনের পক্ষে থেকে দাবি করা হয়েছে, যারা ডিউটিতে রয়েছেন, তারা সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আন্দোলনে যোগ দান করেননি।প্রসঙ্গতঃ, বর্তমান কেন্দ্র সরকার এই প্রকল্প দুটি ২০২১ সালের ৩১ মার্চ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।