ASANSOL-BURNPUR

সম্পত্তির হাতাতে দুই বোনকে খুন, গ্রেফতার দাদা ও এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৩১ মেঃ আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের সাঁতাডাঙ্গার সারদাপল্লীর বাসিন্দা সোমা ওরফে সীমা পালের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে তার দাদা বিধান চন্দ্র পালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরার পরে পুলিশ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক তাপস সেনকেও ধরে। দুজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানতে পারে যে, সীমা পালকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে তার দাদাই। শুধু তাই নয় গত ১৪ এপ্রিল দাদা তার আরো এক বোন শম্পা পালকেও খুন করেছিলো একইভাবে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে মৃত্যুর কারণ হিসাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন । প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পারে , নিজের দুই বোনকে সরিয়ে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই সারদাপল্লীর বিশাল জমির উপর তিনতলা বড় বাড়ির মালিক হয়ে যাবে দাদা বিধান চন্দ্র পাল। বিধান অনলাইনে জুয়া খেলত বলে তারই খুড়তুতো ভাইয়ের সূত্র থেকে পুলিশ জানতে পারে।


আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি প্রতীক রায় বলেন, সীমা পালের মৃত্যুর ঘটনায় তার দাদা ও এক চিকিৎসককে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসে।
প্রসঙ্গতঃ মৃত সোমা পালের কাকার ছেলে অর্থাৎ মৃতার খুড়তুতো ভাই প্রণব পাল বলেন, জ্যাঠা প্রভাকর পালের সাঁতাডাঙ্গার সারদাপল্লীতে তিনতলা একটি বাড়ি আছে । বিধান পাল, শম্পা পাল ও সোমা পাল তিনজনই অবিবাহিত। একমাস আগে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পারি বড় মেয়ে শম্পা পাল মারা গেছে ও গভীর রাতে গাড়ি করে তার মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দেওয়া হয়েছে । পরে বিধান পালকে জিজ্ঞেস করাতে প্রতিবেশীদের সে জানায় শম্পা নিখোঁজ। তার কোন খবর নেই। আবার পরে বিধান বলেছিল সে মারা গেছে। প্রণব পাল বলেন, গত বুধবার ২৬ মে সকালে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পাই বিধানের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় কোন মৃতদেহ সেই গাড়িতে তোলা হবে । খবর পেয়ে আমি এসে দেখি দিদি সোমা পালের মৃতদেহ গাড়িতে তোলা হচ্ছে।এরপর সবাই মিলে সেই গাড়ি আটকে হিরাপুর থানার পুলিশকে খবর দিই। বিধান চন্দ্র পাল তখন বলে দিদি অসুস্থ ছিল মারা গেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু সে বলেনি। তিনি আরো বলেন, কোন কাজ বিধান করে না। সে অনলাইনে জুয়া খেলে। এক মাসের মধ্যে দুই দিদির মৃত্যু এভাবে হতে পারে না । টাকার কারনে বাড়ি ও সম্পত্তি হাতিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার জন্যই তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়।


প্রনব পালের অভিযোগের ভিত্তিতে হিরাপুর থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়। বিধান পালকে আটক করা হয়। ময়নাতদন্তের পরে পুলিশ জানতে পারে, সীমা পালকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। এরপর প্রথমে বিধান পালকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাপস সেন যে, ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিল তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা দুজনেই হিরাপুর থানায় ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।


পুলিশ সূত্র থেকে জানা গেছে, ধৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সীমা পালের যে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাতে তিনি লিখেছেন ” কার্ডিয়াক ফেলিওর ” ও ব্রেকেটে লিখেছেন ” স্ট্রোক” । মৃত্যুর সময় হিসেবে তিনি ডেথ সার্টিফিকেটে একটা নির্দিষ্ট সময়ও লিখেছেন। ময়নাতদন্তে যাকে শ্বাসরোধ করে খুন করার কথা বলা হলো তাকে কিভাবে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে হ।দরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কথা বলা হলো? আবার যে সময় তার মৃত্যু হয়েছে বলা হয়েছে, সেই সময় ঐ চিকিৎসক কি সেখানে ছিলেন ? তাহলে তিনি মৃত্যুর সঠিক সময়টা জানলেন কি করে? সাধারণতঃ হাসপাতালে ভর্তি থাকা কোন রোগীর মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসকরা বলতে পারেন। একজন মেডিকেল অফিসার এই ধরণের ডেথ সার্টিফিকেট সাধারণত দেন না। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগেই সীমার দিদির মৃত্যু হয়। সেক্ষেত্রেও এই চিকিৎসক একই কারণ দেখিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন বলে সূত্রে জানা গেছে।


প্রাথমিকভাবে হেফাজতে থাকা ঐ চিকিৎসক পুলিশের জেরা স্বীকার করে নিয়েছেন, তিনি ভুল করে সীমা পালকে না দেখেই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন ।
পুলিশের অনুমান, সম্পত্তির লোভে অনলাইনে জুয়া খেলা দাদা দুই বোনকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। আর ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া চিকিৎসক বিএইচএমএস স্বীকৃত কিনা তারও খোঁজ করতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ বলে জানা গেছে।

Leave a Reply