BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

ইসিএলে এক বড় ধরনের কয়লা চুরির ঘটনা

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য। আসানসোল। কয়লা চুরি নিয়ে রাজ্যজুড়ে যখন সিবিআই এবং সিআইডি আলাদা আলাদা তদন্ত চালাচ্ছে সেই সময় ইসিএলে এক বড় ধরনের কয়লা চুরির ঘটনা ঘটলো। কয়লা বোঝাই তিনটি ডাম্পার ২৪ কিলোমিটার দুই ঘণ্টার পথেসময় লাগল দশ ঘন্টা।  আর ততক্ষনে বিশেষ যাদু বলে সব কয়লা মাঝপথে উধাও হয়ে পরিবর্তে চলে এলো পাথর। জানা গেছে ইসিএলের সালানপুর এরিয়া গৌরান্ডি কোলিয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার তিনটি ডাম্পারে করে  মোট( ২৬ x৩ মোট-৭৮) ৭৮ মেট্রিক টন কয়লা বনজেমারী রেলওয়ে সাইডিং এ আসছিল। মাত্র ২৪ কিলোমিটার রাস্তায় যেতে যেতে এইসব ডাম্পার গুলোই কয়লার পরিবর্তে বড় বড় পাথর বোল্ডার এবং মাটিতে পরিণত হয়। এই আশ্চর্যজনক ঘটনা পর ওই তিন ডাম্পারের মালিক এবং পলাতক ড্রাইভার, চালক ও সহ চালকের বিরুদ্ধে সালানপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনটি পাথর এবং অন্যান্য জিনিস বোঝাই ডাম্পারগুলো এখন সালানপুর থানার পুলিশের কব্জায় বলে ই সি এলের সালানপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার অমিত  রঞ্জন নন্দী জানান।তিনি বলেন তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে এই চোরাই চক্রের তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশকেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযোগ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এই তিনটি ডাম্পারকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

ইসিএলের বোনঝি মারি কোলিয়ারির সিকিউরিটি দপ্তরের সাব ইন্সপেক্টর জয়নুল আনসারী করা অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে  ঐদিন গৌরান্ডি  কোলিয়ারি থেকে ৭৮ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে তিনটি ডাম্পার দুপুর ১ টা ১০, ১টা ১৫ মিনিট এবং ১টা ১৭ মিনিটে রওনা হয় বনজেমারি রেল সাইডিং এর উদ্দেশ্যে তিনটি চালান নিয়ে। যার নম্বর গুলি হল৫৪১৭,৫৪১৮,৫৪১৯। ২৪ কিলোমিটার রাস্তা বড়জোর দু’ঘণ্টা লাগা উচিত। শুধু তাই নয় প্রতিটি ডাম্পারের সাথেই জিপিএস ব্যবস্থা থাকলেও এইগুলি মাঝপথে কোথাও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এদের খোঁজ মিলছে না দেখে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর ইসিএলের আধিকারিকরা তাদের নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মীদের কাজে লাগায়। দশ ঘণ্টা পর রাত্রি এগারোটা নাগাদ যখন বনজেমারী  রেল সাইডিং এর কাছে ঢোকে তখন তার চালক এবং খালাসিরা লক্ষ্য করেন বেশ কয়েকজন সিকিউরিটি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এর ফলে তারা কিছুটা আগেই ডাম্পার গুলো দাঁড় করে নেমে পালিয়ে যায়। ইসিএলের নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের অবশ্য ধরতে না পারলেও ডাম্পার গুলি রেলওয়ে সাইডিং এর কাছে নিজেদের ওয়ে ব্রিজের সামনে এনে দাড় করায়। দেখা যায় প্রত্যেকটিতে  একটুও কয়লা নেই। রাস্তায় সেই কয়লা গুলি কোথাও বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। পরিবর্তে তার মধ্যে পাথর, বোল্ডার, মাটি জাতীয় জিনিস রয়েছে।

 এই খবর পৌঁছানোর পর সালানপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার অমিত রঞ্জন নন্দীর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হয় ।এই কমিটিতে আছেন বনজেমারী কলিয়ারীর   ম্যানেজার মনোজ কুমার সিং, বনজেমারী সাইডিংয়ের ম্যানেজার বিজয় কুমার ঠাকুর এবং গৌরান্ডি কোলিয়ারি ম্যানেজার সন্দীপ কুন্ডু। এরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হোন গৌরান্ডি কলিয়ারী থেকে নির্দিষ্ট  চালানোর ভিত্তিতেই ৭৮ মেট্রিকটন কয়লা পাঠানো হয়েছিল ।কিন্তু মাঝ রাস্তায় ডাম্পার থেকে সেই কয়লা নামিয়ে দিয়ে  পাথর বা অন্যান্য জিনিস ভরে নিয়েছে। এটা একটা বড় চক্রের কাজ এবং এর আগেও এই ধরনের কাজ হয়ে থাকতে পারে। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই দুটি ঝাড়খন্ড নম্বরের ডাম্পার এবং একটি পশ্চিমবঙ্গ নম্বরের ডাম্পার কে কালো তালিকাভুক্ত করা সিদ্ধান্ত হয় বলে জেনারেল ম্যানেজার জানান। যারা এই কোম্পানির মালিক এবং যারা এর চালক ও খালাসির কাজ করেছে তারা প্রাথমিকভাবে এ কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারে। এর বাইরে ও ইসিএলের কেউ যুক্ত কিনা তাও খোজ নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে কারা এই কয়লা কিনেছে, কতদিন ধরে এই ধরনের কয়লা পাথর পাঠানোর কাজ চলছে এবং এর সাথে বড় রেকেট  আছে কিনা সবই তদন্ত করা হবে বলে জেনারেল ম্যানেজার জানান ।অন্যদিকে ইসিএলের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য সিকিউরিটি  আধিকারিক মুকেশ কুমার বলেন এই বিষয় তিনটি নম্বরের মালিক এবং তাদের চালক ও সহচালকদের বিরুদ্ধে সমস্ত ঘটনাটি জানিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ সালানপুর থানায় জানানো হয়েছে।

Leave a Reply