ASANSOL

কসবার পরে আসানসোল, স্বাস্থ্য কর্মী না হয়েও, শিবিরে মহিলাকে ভ্যাকসিন দিয়ে বিতর্কে প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র

তদন্ত চায় বিজেপি / ঠিক কাজ করেননি, মত চিকিৎসকদের / নিজের দায়িত্বে করেছেন, মন্তব্য পুর প্রশাসকের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ৩ জুলাইঃ চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্য কর্মী না হয়েও, যৌনপল্লীতে হওয়া শিবিরে গিয়ে হাতে সিরিঞ্জ নিয়ে এক মহিলাকে করোনার ভ্যাকসিন দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তবস্সুম আরা। শনিবার সকালে আসানসোলের কুলটি পুর এলাকার চবকার যৌন পল্লীতে হওয়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু আসানসোল শিল্পাঞ্চল বা পশ্চিম বর্ধমান জেলা নয় গোটা রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। কসবার ভুয়ো ভ্যাকসিন কান্ডের মধ্যেই আসানসোলের এই ঘটনা স্বাস্থ্য দপ্তরেও শোরগোল ছড়িয়েছে।

আসানসোল পুরনিগমের বিদায়ী পুর বোর্ডের প্রাক্তন তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলার তবস্সুম আরা বর্তমানে পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য। বিতর্ক শুরু হওয়ায় তবস্সুম আরা পরে সাফাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি হাতে সিরিঞ্জ নিয়েছিলাম। মহিলাকে ভ্যাকসিন দিইনি। যদিও ছবিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, তিনি পাশে থাকা এক নার্সের হাত থেকে প্রায় জোর করে ভ্যাকসিন থাকা সিরিঞ্জ নিয়ে সামনে বসে থাকা মহিলাকে হাতে ইনজেকড্ বা পুশ করছেন। সেই সময় সেখানে পুরনিগমের চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা থাকলেও কেউ তার এই কাজের প্রতিবাদ করেননি বা বাধা দেননি। এমনকি যে, মহিলাকে তিনিও পরে বলেন, আমাকে এক নার্স হাতে সিরিঞ্জ নিয়ে ভ্যাকসিন দিতে যাচ্ছিলেন। তখন অন্য একজন সেই সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে ফুটিয়ে দেয়।

পরে জেনেছি, ঐ মহিলা চিকিৎসক বা নার্স নন। তিনি আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র। যদিও, এরপরেও তবস্সুম আরা সবকিছু অস্বীকার করে সাফাইয়ের সুরে বলেন, আমি ঐ মহিলাকে ইনজেকশন দিইনি। মানুষ ভ্যাকসিন নিতে ভয় পাচ্ছে। তাই সেই ভয় কাটাতে ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হাতে সিরিঞ্জ নিয়েছিলাম। এর পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, আমি ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম, তখন নার্সিং কোর্স করেছিলাম। এমনকি তার ইনজেকশন দেওয়ার কোন অভিজ্ঞতাও নেই বলে তিনি বলেন।


তার এই কাজ করা যে পুরনিগম কতৃপক্ষ একবারেই ভালো ভাবে নেয়নি তা পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য ও প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র হিসাবে তিনি অনুচিত কাজ করেছেন। তার এই কাজ করা একবারে উচিত হয়নি। এই কাজ তিনি নিজের দায়িত্বে করেছেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে ঐ মহিলার যদি কিছু হয়, তাহলে সেই দায়িত্ব তার। আমি পুরনিগমের স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছি। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।


অন্যদিকে, পুরনিগমের স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ দীপক গাঙ্গুলি বলেন, আমি সেখানে ছিলাম না। কি হয়েছে তাও বলতে পারবো না। যে চিকিৎসক ঐ শিবিরের ছিলেন, তার কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছি। তবে স্বাস্থ্য কর্মী, নার্স ও চিকিৎসক যাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রশিক্ষন নেওয়া আছে তারাই এটা দিতে পারে। অন্য কেউ নয়। যদি এই কাজ কেউ করে তাকে, তা ঠিক নয়।


এদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ অশ্বিনী কুমার মাজি বলেন, ঐ শিবির করছে আসানসোল পুরনিগম। আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকেই, শুনেছি স্বাস্থ্য কর্মী না হয়েও একজন সেখানে কোন মহিলাকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন। আমি রিপোর্ট চেয়েছি।


কুলটি বিধান সভা বিজেপি বিধায়ক ডাঃ অজয় পোদ্দার বলেন, গোটা রাজ্য এমনটাই চলছে। স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসক ও নার্স না হয়েও কি করে প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ভ্যাকসিন দিলেন, তার তদন্ত হওয়া উচিত। এই কাজ খুবই নিন্দনীয়। মহিলার কিছু হলে, তার দায়িত্ব পুরনিগমের।
প্রসঙ্গতঃ, চবকার নিষিদ্ধ পল্লীতে দূর্বার মহিলা সমিতির সাহায্য আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য দপ্তর করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার শিবির করছে।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *