ASANSOLBengali NewsHealth

Good News: আসানসোল জেলা হাসপাতালে বিনামূল্যে ক্যান্সারের চিকিৎসা

শিল্পাঞ্চলের মানুষেরাই নয় পার্শ্ববর্তী বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ,এমনকি ঝাড়খন্ড থেকেও বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল: এ যেন সত্যিই জেগে স্বপ্ন দেখার মত। ক্যান্সার আক্রান্ত শুধু আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষেরাই নয় পার্শ্ববর্তী বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ,এমনকি ঝাড়খন্ড থেকেও বহু মানুষ এই রোগের চিকিৎসা করতে এতদিন কেউ কলকাতায় কেউবা দক্ষিণ ভারতে যেতেন। এখন সেই চিকিৎসার জন্য বিনামূল্যে আসানসোল জেলা হাসপাতালে তারা পৌঁছে যাচ্ছেন। মাত্র দু মাস আগেই আসানসোল জেলা হাসপাতালে করোনার নতুন আউটডোর চালু হয়েছে। একইসঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে তার অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এই রোগের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আর ওষুধ তাদের কিনতে হচ্ছে না ।

ASANSOL DISTRICT HOSPITAL
ASANSOL DISTRICT HOSPITAL

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে হাজার হাজার টাকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে এইসব রোগীদের । বিশাল খরচের কারণেই এতদিন এই অসুখে আক্রান্ত মানুষেরা অসুখের যন্ত্রণার পাশাপাশি চিকিৎসার বিপুল পরিমাণ খরচ বহন করার কথা ভেবে আরো বেশি মাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়তেন ।আজ  রাজ্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিল চন্দ্র দাসের সহযোগিতা ও দুই অংকলজিস্ট অমিত মুখোপাধ্যায় এবং দেবজ্যোতি মান্নার প্রচেষ্টায় গত দু’মাসে চালু হওয়া এই ক্যান্সার দপ্তর ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত মে মাসে ৪৮জন রোগী হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা এবং কেমোথেরাপি করা হয়েছে। জুন মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে ৬৮ তে পরিণত হয়েছে।

এখানকার বিশিষ্ট অনকোলজিস্ট অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন আমরাও চাই এই এলাকার সব মানুষ জানুক জেলা হাসপাতাল এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। আমরা সমস্ত রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনে অস্ত্রপ্রচার করে কেমোথেরাপি দিচ্ছি। যাদের কেমোথেরাপি শুধু দিতে হচ্ছে বাইরে আগে থেকেই হয়তো চিকিৎসা হয়েছে তাদেরও বিনামূল্যে তা এখানে তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও যাদের রেডিয়েশন থেরাপির দরকার তাদের জন্য আমরা কলকাতায় এন আর এস মেডিকেল কলেজ এবং বর্ধমান মেডিকেল কলেজের দপ্তর এর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করে রেখেছি। আমরা এখান থেকে যে রোগীকে পাঠাবো  ঐ দুই মেডিকেল কলেজে সেখানেই তাদের রেডিয়েশন হবে। বাকি চিকিৎসাটা আমরাই করব ।অমিত বাবু বলেন একটা একজনের কেমোথেরাপি করতে যেকোনো বেসরকারি জায়গায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। উত্তর ভারতের একটি রাজ্য থেকে একজন মহিলা আমাদের এখানে আসেন আসানসোলের তার আত্মীয় থাকার সুবাদে।

তাকে পরীক্ষা করে তার চিকিৎসা শুধু নয় তার দুটি অস্ত্রোপ্রচার হয়। আবার বার্নপুর এলাকার একজন দিনমজুর যিনি কখনো ভাবতেই পারেননি তার ক্যান্সারের চিকিৎসা বাড়ির কাছেই জেলা হাসপাতালে হবে, তারও আমরা ইতিমধ্যেই চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছি। বীরভূম থেকেও এমন একাধিক কেস এসেছে । সুরোজ গুপ্ত নামে ঝাড়খণ্ডের এক রোগী বলেন আমি আসানসোলের হাসপাতাল ক্যান্সারের চিকিৎসার   যে সুযোগ সুবিধা পেলাম তা কোনদিন ভুলবো না ।সেইসঙ্গে বিনামূল্যে আমাকে ওষুধ দেয়া হল।

আর একজন মহিলা তার শরীরের এই মারণ রোগ এতটাই আক্রমণ করেছে যা এখানের চিকিৎসাতে গত দু’মাসে অনেকটাই তিনি ভাল হয়ে গেছেন। তিনি বলেন আমাকে অনেকেই বলেছিলো মুম্বাইতে গিয়ে চিকিৎসা করালে সুস্থ হবেন। আমি ভাবতেই পারছি না যে আমি শিল্পাঞ্চলে থেকে বিনামূল্যে এমন চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর বিনিময়ে এখানকার হাসপাতালে সুপার এবং আমার চিকিৎসক অমিত মুখোপাধ্যায় সমস্ত ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক মহিলা বলেন আমার পরিবারের সেই অর্থে কেউ নেই ।আমি একসময় পরিচারিকার কাজ করতাম। এই রোগ হয়েছে শুনে খুব ভয় পেয়েছিলাম কেননা লোকবল বা  অর্থবল নেই ।আমাকে স্থানীয় এক বাসিন্দা খবর দিয়েছেন যে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমি ছুটে এসেছি এবং এক মাসের চিকিৎসায় আমি ভালো আছি। আমার একটি অস্ত্রপ্রচার করা হয়েছে।

জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিল চন্দ্র দাস বলেন আমি মহকুমা হাসপাতালের সুপার হিসেবে এখানে প্রথম এসেছিলাম। তারপর বর্তমান সরকারের আমলে এটা জেলা হাসপাতাল এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। বহু দিন বহু গরীব দুস্থ মানুষের কাছে শুনেছি যে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রচুর খরচ খরচ বহন করতে পারেন না। এখন স্বাস্থ্য সাথী কার্ড তো আছেই। তার সাথে এই চিকিৎসা আমাদের এখানে দুই চিকিৎসক অমিত মুখোপাধ্যায় এবং দেবজ্যোতি মান্নার নেতৃত্বে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রচুরসংখ্যক রোগীকে কেমো থেরাপি দেয়া হয়েছে। তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা হয় এবং স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকায় আমরা তার মাধ্যমেই আমাদের স্থানীয় দোকান থেকে তাদের ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এইজন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের যে উদ্যোগ তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

Leave a Reply