RATHYATRA 2021: রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজবাড়ি, করোনা বিধি মেনে পুজো হলেও ১৮৪ বছরের রথের দড়িতে পড়লো না টান
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১২ জুলাইঃ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের ঐতিহ্যশালী রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজবাড়ির রথের দড়িতে টান পড়লো না এবছরও । করোনা বিধি মেনে এবছর তা হলোনা। সিয়ারশোলের মালিয়া পরিবার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কূল দেবতা দামোদর চন্দ্রের পুজো করে রথে চাপিয়ে আবার নামিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতো বিশালকার পেতলের রথটিকে বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিলো। এই ফলে ১৮৪ বছরের পুরানো ঐতিহ্যের ছেদ পড়লো এবারে রানিগঞ্জের রথে ।
রথের দড়ি টানায় ছেদ পড়ার পাশাপাশি রথযাত্রা উপলক্ষে ১৫ দিনের যে মেলা হতো, তার এবছর বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে করোনা বিধি মেনে রাজবাড়ির কূল দেবতা দামোদর চন্দ্রের পুজো করা হয় এদিন নিষ্ঠা সহকারে। পুজো করে দামোদর চন্দ্রকে রথে চাপিয়ে রথ প্রদক্ষিণ করিয়ে আবার মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। করোনা বিধি মেনে রাজবাড়িতে এদিন দর্শণার্থীরা আসেন ও পুজো আর্চা করেন।
ইতিহাস বলে, ১৮৩৬ সালে জমিদার গোবিন্দপ্রসাদ পণ্ডিতের উদ্যোগে রানিগঞ্জের সিয়ারশোলের রথযাত্রা শুরু হয়। এখন অবশ্য রথযাত্রা পরিচালনায় রয়েছে সিয়ারশোল স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোবিন্দপ্রসাদের উত্তরসূরি বিঠলভাই মালিয়া বলেন , পুরনো কাঠের রথটি পুড়ে যায়। ১৯২২ সালে ফের পিতলের আচ্ছাদনে ৩৫ ফুট উঁচু রথ তৈরি করা হয়।
মাহেশের আদলে তৈরি সিয়ারশোলের রথে থাকেন রাজবাড়ির কুলদেবতা দামোদর চন্দ্র। নতুন জমিদার বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে পুরানো জমিদারবাড়ি পর্যন্ত রথ টানা হয় প্রতিবছর। উল্টোরথ হয় নবম দিনে। সেদিন রথ না টানা হলেও একই ভাবে করোনা বিধি মেনে পুজো হবে।
একই সঙ্গে এদিন রেল শহর চিত্তরঞ্জনের ৭০ বছরের পুরনো ৬ এর পল্লী ও ফতেপুরের রথ মন্দিরের ভেতরে থেকে গেলো। তারমধ্যে রইলেন জগন্নাথ ,সুভদ্রা ও বলরাম। আসানসোলেও এবছর ইসকনের রথযাত্রার হলো না।
চিত্তরঞ্জন রেল শহর তথা এই শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বড় রথযাত্রার আয়োজন হয় চিত্তরঞ্জনের ৬ -এর পল্লী ও ফতেপুরে। কিন্তু এবার কোথাও রথ বাইরে বেরোলো না। ফতেপুরে জগন্নাথ দেবের স্থায়ী মন্দির আছে। কমিটির সহ-সম্পাদক প্রফুল্ল নায়েক বলেন, মন্দির থেকে মূর্তি রথে তোলা হবে। কিন্তু সেই রথ থাকবে মন্দির চত্বরে । প্রথা অনুযায়ী পূজা অর্চনা শেষে আবার রথ থেকে মন্দিরে মূর্তি তুলে রাখা হবে। অন্যদিকে ৬ এর পল্লিতে রথ আটকে আছে ছাউনির নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যেই। এখানে প্রথা অনুযায়ী অসিত পালের বাড়িতে রথযাত্রা উপলক্ষে পূজার্চনা হয়। উল্টো রথের উপাচার হবে দীনেশ পন্ডিতের বাড়িতে।
অন্যদিকে, আসানসোলের গাড়ুইয়ে ইসকনের রথযাত্রা উপলক্ষে হওয়া পুজোয় এদিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইন ও পূর্ত মন্ত্রী মলয় ঘটক। এছাড়াও ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য অভিজিৎ ঘটক সহ অন্যান্যরা।
তবে করোনার জন্য পূজার্চনা হলেও রাস্তায় রথ না বেরোনো ও মেলা না বসায় কচিকাঁচারা বেশ হতাশ।