ASANSOLASANSOL-BURNPURBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJANKULTI-BARAKAR

তেল ট্যাঙ্কার পাচার ও হাইজ্যাকের আন্তঃরাজ্য চক্রের হদিশ পেলো আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ, গ্রেফতার ৬

https://fb.watch/v/U3BfeHyR/

বেঙ্গল মিরর , রাজা বন্দোপাধ্যায় , দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ১৩ জুলাইঃ আন্তঃরাজ্য ভোজ্য তেল ট্যাংকার পাচার ও হাইজ্যাক চক্রের হদিশ পেলো আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই চক্রের আরো ৭ জন এখনো ফেরার রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আসানসোলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা জানান ডিসিপি ( সেন্ট্রাল) ডাঃ কুলদীপ এস এস ও এডিসি ((ডিডি) সৌমিক সেনগুপ্ত।


জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা জনৈক গোপাল লাল শর্মা ২২ চাকার ট্যাংকার করে প্রায় ৪২ হাজার কেজি ভোজ্য তেল বাঁকুড়ার উদ্দেশ্য পাঠান। এই তেলের বর্তমান বাজারদর প্রায় ৫৯ লক্ষ টাকা। ট্যাঙ্কারটি ৪ মে রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে আসানসোল উত্তর থানার ২ নং জাতীয় সড়কে টোলপ্লাজার কাছে ছিলো। এরপর কিছু দুষ্কৃতি দুটি গাড়ি নিয়ে ঐ ট্যাঙ্কারটির পিছু ধাওয়া করে। কিছুক্ষুনের মধ্যে ট্যাঙ্কারটিকে হাইজ্যাক করা হয়। দূষ্কৃতিরা ট্যাঙ্কারের চালক রাজেন্দ্রর সিং ও খালাসি জয়পাল সিংকে জলের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচৈতন্য করে দেয়। ৫ মে চালক ও খালাসিকে অচৈতন্য অবস্থায় উড়িষ্যার বালাসোর হাসপাতাল থেকে পাওয়া যায়। এরপর ১০ মে ট্যাঙ্কার মালিক আসানসোল উত্তর থানায় গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে ২ নং জাতীয় সড়কের উপর ট্যাঙ্কারটিকে হাইজ্যাক করা হয়। ট্যাংকার মালিক ট্যাংকারের মধ্যে জিপিএস সিস্টেম লাগানো জন্য তা জানতে পারে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ।

আসানসোল রেল ‘দ্য হেরিটেজ ওডিসি’ কফি টেবিল বইয়ের মোড়ক উন্মোচন


তারা জানতে পারে মাত্র ২৯ সেকেন্ডের মধ্যে ট্যাঙ্কারটি হাইজ্যাক করার পর আরো ৬ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ট্যাঙ্কারের মধ্যে থাকা জিপিএস সিস্টেমটি খুলে ফেলে দুষ্কৃতিরা কলকাতার দিকে নিয়ে চলে যায়। এই সমস্ত তথ্য বিভিন্ন থানায় আসানসোল পুলিশ জানানোর পর হাওড়া সিটি পুলিশ ইমরান খান ও বসন্ত জয়সোয়াল নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে হাওড়া থেকে। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গোয়েন্দা দপ্তর (ডিডি) ঐ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দমদম এয়ারপোর্টের বাইরে এক হোটেল থেকে মনজিন্দার সিং সান্ধু কে গ্রেফতার করে। যে অসমের তিনসুকিয়ার বাসিন্দা। পুলিশের কাছে খবর ছিলো মনজিন্দার সিং কিছুক্ষণের মধ্যেই হোটেল থেকে বেরিয়ে প্লেনে করে মুম্বাই যাওয়ার প্লান কষেছিল। ঠিক তার আগেই আসানসোল পুলিশ তাকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পাঞ্জাবের অমৃতসরের বাসিন্দা কমলজিৎ সিং ওরফে পাপ্পু সর্দারকে কলকাতা থেকে ধরে পুলিশ । এই পাপ্পু সর্দার সাধারণতঃ এমভিআইয়ে দালালির কাজ করে। সে গাড়ির নম্বর বদল করে নতুন নম্বর দিয়ে মূলত রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কাজ করে। এরপরে ধরা পড়ে কলকাতা থেকে ধরা হয় মহঃ আজাদকে। সে খিদিরপুরে চোরাই গাড়ি কাটিংয়ের কাজ করতো। তার আগে ধরা হয় নিজামউদ্দিন খানকে এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে ট্যাংকারের চালক ও খালাসিকে অচতৈন্য করে একটি ট্রাকে চাপিয়ে উড়িষ্যার বালাসোরে ফেলে এসেছিলো ।


পুলিশ জানতে পেরেছে, এরা সাধারণত বিহার ও ঝাড়খণ্ড এলাকায় এইভাবে তেলের ট্যাঙ্কার বা হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটায়। কিন্তু এই ট্যাঙ্কারটিকে হাজারিবাগ থেকে ফলোআপ করতে করতে আসার পর বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্ত অতিক্রম করে আসানসোল উত্তর থানা এলাকায় চলে আসে। তবে উত্তর প্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দা বর্তমানে কলকাতার খিদিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ খান সহ ৭ জনকে পুলিশ এখনো খুঁজে পাইনি । এই মাসুদ খান এই চক্রের কিং পিন বা মাস্টার মাইন্ড। পাশাপাশি দূষ্কৃতিরা ৫৯ লক্ষ টাকার রিফাইন কোর্ন ওয়েল বা ভোজ্য তেল কোথায় বিক্রি করেছে, তার হদিশ এখনো করতে পারেনি পুলিশ। ধৃতদের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ও আসানসোলের গোয়েন্দা দপ্তর।


এই ঘটনার পর গুজরাট, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ,ওড়িশা, বিহার ঝাড়খন্ড, অসম ও এ রাজ্যের বিভিন্ন থানা আসানসোল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কারণ এই চক্রটি গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে মহঃ ইমরান ও মহঃ আজাদ নামে মাসুদ খানের পুরনো দুই সঙ্গী ঝাড়খন্ড ও বিহারে ইতিমধ্যেই আলাদা করে একটা দল তৈরি করে সেখানেও একই ধরনের অপারেশন করেছে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে । এই ঘটনায় ট্যাঙ্কারটিকে কাটাইয়ের কাজ হয় ডানকুনি ও খিদিরপুরের গ্যারাজে। সেই গ্যারাজের মিস্ত্রি ও মালিকদেরকেও পুলিশ গ্রেফতার করবে বলে জানা গেছে ।

Leave a Reply