ASANSOL

টানা বৃষ্টিতে শিল্পাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত, জলমগ্ন সব নিচু এলাকা, ভেঙে পড়েছে ৫০টিরও বেশি বাড়ি , মৃত এক শিশু, ব্যহত বিদ্যুৎ সরবরাহ

জল ছাড়া হলো মাইথন, পাঞ্চেত ও দূর্গাপুর ব্যারাজ থেকে

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল ও দূর্গাপুর, ৩০ জুলাইঃ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে আসানসোল শহর সহ গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে। শুক্রবার দুপুর দুটোর শেষ খবর, বৃষ্টির পরিমান তো কমেনি। বরং এদিনের সকালের পর বৃষ্টির পরিমান আরো বেড়েছে। আসানসোল পুরনিগম এলাকায় প্রবল বৃষ্টিতে একটি মাটির বাড়ি ভেঙে, তার তলায় চাপা পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঐ একই জায়গায় আরো একটি মাটির বাড়ি ভেঙে আরো দুই শিশু আহত হয়েছেন। এদিন সকালে আসানসোলের জিটি রোডের আসানসোল বড় বাজারে একটি পুরনো বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে। সেই ঘটনায় দুজন আহত হয়।

সবমিলিয়ে দুপুর দুটো পর্যন্ত পাওয়া খবরে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ৫০টিরও বেশি বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। আসানসোলের সেনরেল রোডের রেলের ফুট ওভারব্রিজ সহ সহ একাধিক ব্রিজ ও রাস্তা জলের তলায় চলে যায়। বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি গাছ ও ইলেকট্রিক পোষ্ট ভেঙে পড়ে। এর জেরে আসানসোলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হয়েছে বলে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের আসানসোল ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে। এই বৃষ্টির জলে আসানসোল শহরের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলের শতাধিক নিচু এলাকা জল মগ্ন হয়ে যায়।

ঐসব এলাকায় জমে যাওয়া বৃষ্টির জলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টির কারণে শহরের নিচু অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গাড়ুই নদীর তীরে রেলপার এলাকায় কয়েকশ ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এর ফলে কয়েক হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে।


এই বৃষ্টিতে সময়ে আসানসোল শহরের দিলদার নগর, বার্নপুরের শাস্ত্রী নগর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। আসানসোল পুরনিগমের ১৫ নং ওয়ার্ডে কেডি সিং কোলিয়ারির বোরিংপাড়া এলাকায় পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ড সদস্য শ্যাম সোরেনের বাড়ির কাছেই দুটি মাটির বাড়ি বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়ে। ভেঙ্গে পড়া মাটির বাড়ি ধ্বংসস্তূপের চেহারা নেয়।
ভেঙে পড়া একটি বাড়িতে থাকা ২ শিশু ও অন্য একটি বাড়ির একটি শিশু চাপা পড়ে আহত হয়। স্থানীয় লোকজনেরা দৌড়ে এসে আহত তিন শিশুকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে আনেন।সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এক শিশুকে ভর্তি করা হয়। নিখিল বাস্কি নামে ৫ বছরের ঐ শিশুর পরে মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় এলাকার শোকের ছায়া নেমে আসে। এই খবর পাওয়ার পরে আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য শ্যাম সোরেন ঐ এলাকায় ছুটে আসেন। স্থানীয় লোকজনদের সাহায্যে দুটি বাড়ির সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।


এদিকে এদিন সকালে আসানসোল পুরনিগমের জলমগ্ন হয়ে যাওয়া বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের নিজের নিজের এলাকায় নজর রাখতে বলেন। পরে অমরনাথবাবু বলেন, গোটা পরিস্থিতির দিকে নজরদারি করা হচ্ছে।
টানা বৃষ্টিতে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল খুবই কম।


বৃষ্টিতে দূর্গাপুরের বেশকিছু এলাকায় জল জমেছে। তবে আসানসোলের মতো পরিস্থিতি দূর্গাপুরে নেই।
অন্যদিকে, আবহাওয়া অফিস আগেই বলেছিলো ৩০ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি হবে। এদিন আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার রাতের আগে বৃষ্টি কমবে না।
এদিকে, শুক্রবার সকালে ডিভিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, মাইথন থেকে ১২ হাজার, পাঞ্চেত থেকে ২২ হাজার ও দূর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ৫১ হাজার ৮০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার বলে জানা গেছে। ডিভিসি জানিয়েছে, বৃষ্টির পরিমান বাড়লে জল ছাড়ার পরিমান বাড়ানো হবে। দূর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলার দামোদর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে।

Leave a Reply