ASANSOL

আর্থিক বোঝা ও অনিয়মের অভিযোগ, প্রাক্তন মেয়রের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলো পুর বোর্ড

দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৩ আগষ্টঃ ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস দল ও আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান বা প্রশাসকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এবার সেই জিতেন্দ্র তেওয়ারির বিরুদ্ধে নানান আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করলো আসানসোল পুরনিগম। শনিবার সেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা।


অন্যদিকে, বর্তমান পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রাক্তন মেয়রের বিরুদ্ধে আরো একটি বড় অভিযোগ এনে বলেছেন, তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক বোঝা বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ডের উপর চাপিয়েছেন। বিপুল পরিমান এই টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা আজ নয়তো কাল এই টাকা পুরনিগমকে কড়ায়গণ্ডায় মেটাতে হবে।
যদিও এই অভিযোগেরকে তেমনভাবে গুরুত্ব দিতে চাননি জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তিনি বলেন, সমস্ত নিয়ম মেনে তদানীন্তন পুর বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে আসানসোল পুরনিগমের পুর কমিশনারের দপ্তরের মাধ্যমে এইসব কাজগুলি কার্যকরী করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মেয়র বা পুর প্রশাসক হিসাবে তার কোনো ভূমিকা নেই।


আসানসোল পুরনিগমের বিগত বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমান পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিরুদ্ধে প্রাক্তন মেয়র পারিষদ গোলাম সরবর সহ বেশ কয়েকজন নানান অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই অভিযোগগুলি তদন্তের জন্য পুরনিগমের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুরনিগমের সচিব, অর্থ দপ্তরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়াররা আছেন। শনিবার সেই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। একই সঙ্গে অমরবাবু বলেন, জিতেন্দ্র তেওয়ারি মেয়র থাকাকালীন প্রায় ১০ কোটি টাকায় আসানসোল রবীন্দ্রভবনের সংস্কার করেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে একটা নতুন রবীন্দ্রভবন হতে পারত।

এছাড়াও রবীন্দ্র ভবনের ঠিক পাশে ১ কোটি ২ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি কফি হাউস করা হয়েছে। তার একটি টাকাও কিন্তু দেওয়া হয়নি। পুরোটাই বাকি রয়েছে। এছাড়াও আসানসোল পুরনিগম এলাকায় স্মার্ট আলো লাগানো ও তার রক্ষনা বেক্ষনের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে নানান অভিযোগ উঠে এসেছে। এইসব কাজের সঙ্গে জলের পাইপ লাইন ও অন্যান্য অনেক কাজ তিনি করিয়েছেন। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। এই টাকা তিনি দিয়ে যাননি। এই সব বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার পরেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।


অন্যদিকে, অন্যতম অভিযোগকারী গোলাম সরবর বলেন আমি আলো লাগানোর দায়িত্ব পাওয়া ঐ বেসরকারি সংস্থার বিদ্যুতের সরঞ্জাম সরবরাহ ও কাজ করার সংস্থার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছিলাম রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রীকে। তিনি এছাড়াও পাইপলইনের কাজ নিয়ে দুর্নীতিসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক অনিয়মের নির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর থাকে জেলাশাসকের কাছে এইসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল।


এই প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, যিনি এখন পুর প্রশাসক পদে বসে অভিযোগ করছেন সেই অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় তো আমি মেয়র থাকাকালীন সেই পুর বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। পুরনিগমের সমস্ত উন্নয়ন মুলক কাজ করার সিদ্ধান্ত বোর্ড মিটিংয়ে নেওয়া হতো। সেই সিদ্ধান্তগুলিতে কিন্তু অমরনাথবাবুই পুর চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাক্ষর করেন। তারপর সেগুলো পুরকমিশনারের কাছে চলে যায়। কমিশনারের পক্ষ থেকে টাকা থাকলে বা টাকা না থাকলে টেন্ডার করার বিষয় সেই দপ্তর সিদ্ধান্ত নেন। আমি যখন মেয়র হয়েছিলাম তখন আগের বোর্ডের অনেক টাকায় বকেয়া ছিলো। যা পরে আমরা শোধ করেছিলাম। এটাই নিয়ম।

আর যেমন কুলটির জল প্রকল্প কাজ হয়েছে। কিন্তু পুরো টাকা আসেনি। সেই টাকা এলে বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। গ্রীন মিশন ,হাউসিং সব ক্ষেত্রেই একই নিয়ম । আমি এই কারণে টাকা চেয়ে বারবার পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরে চিঠি পাঠাতাম টাকার জন্য ।তাছাড়াও আমি মেয়র থাকাকালীন পুরনিগমের রাজস্ব আদায়ের উপরে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলাম। সেইখাতে অনেক টাকা তুলেছিলাম। বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ড তো কর আদায়ে পুরোপুরি ব্যর্থ। যদিও এই সমস্ত অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় । তিনি পাল্টা বলেন, আগে তদন্ত রিপোর্ট আসুক। তারপর সব জানা যাবে। কে কি করেছে।


শুক্রবার আসানসোল পুরনিগম সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্র ভবনের সংস্কার নিয়ে যে তদন্ত করা হচ্ছে তার দায়িত্ব পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য পূর্ণশশী রায়কে দেওয়া হয়েছেন।
যেকোন সময় আসানসোল পুরনিগমের নির্বাচন হবে। সেই দিক থেকে বলতে গেলে বিজেপিতে যাওয়া জিতেন্দ্র তেওয়ারির বিরুদ্ধে টেন্ডার না করে কাজ দেওয়া বা আর্থিক অনিয়মের যেসব অভিযোগ এখন উঠেছে তা অবশ্যই পুর নির্বাচনে ইস্যু হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয় আর্থিক বোঝা চাপানো ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে শাসক ও বিরোধী দল কতটা লড়াইয়ের ময়দানে নেমে ভোটের কাজে তা লাগাতে পারে।

Leave a Reply