ASANSOL

আসানসোলের বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙ্গচুর, ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা , নিরাপত্তা রক্ষীদের মারধর

বেঙ্গল মিরর , রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৭ আগষ্টঃ ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আসানসোলের সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। রোগীর পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা রোগী মৃত্যুর পরে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙ্গচুর করে। তাদের বিরুদ্ধে বেসরকারী হাসপাতালের এক নিরাপত্তা রক্ষী ও এক সিকিউরিটি সুপারভাইজারকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও রোগীর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ভাঙ্গচুর ও মারধর করার কথা অস্বীকার করেছেন। রোগীর পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত রোগীর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত এদিন বিকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের তরফে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা রোগীর পরিবারের দিকেই গাফিলতির অভিযোগ করেছেন।


একইসঙ্গে হাসপাতালের তরফে পুরো ঘটনা নিয়ে আসানসোল উত্তর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আরো জানা গেছে, পুলিশ এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের ধরমপুরের বাসিন্দা মৃত রোগীর নাম সবেরা খাতুন (৫৫)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সবেরা খাতুন দিন পনের আগে বাড়িতে মুখ ধুতে গিয়ে পড়ে মাথায় আঘাত পান। পরিবারের সদস্যরা তাকে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা ঠিক না হওয়ায়, তাকে বৃহস্পতিবার সকালে আসানসোলের সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসক মহিলাকে পরীক্ষা করে বলেন, তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। তারজন্য অস্ত্রোপচার করতে হবে। এরপর বাড়ির লোকেরা দুপুরে তাকে ঐ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের তরফে রোগীর পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকার চিকিৎসার প্যাকেজ বলা হয়। রোগীর পরিবার ৫০ হাজার টাকা জমা দেয়।


এদিন রোগীর স্বামী মহঃ ইরা বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলাম৷ স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বাড়ি আসি। তখন হাসপাতালের তরফে আমাকে কিছু বলা হয়নি। আচমকাই রাত সাড়ে দশটার পরে আমাকে ফোন করে বলা হয়, রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। তার অস্ত্রপচার করা হচ্ছে। আপনারা বাকি টাকা হাসপাতালে এসে জমা দিয়ে যান। আমি বলি, আমার সই ছাড়া কি করে অস্ত্রোপচার করবেন? কিন্তু হাসপাতালের তরফে আমাকে কোন সদুত্তর দেওয়া হয়নি। শুক্রবার সকালে আমি হাসপাতালে এসে জানতে পারি স্ত্রী মারা গেছে। মহঃ ইরা প্রশ্ন তুলে বলেন, রোগী কি করে মারা গেলো? তিনি হাসপাতালে ভাঙ্গচুর ও মারধর করার কথা অস্বীকার করেন।


এদিকে অভিযোগ, এই রোগী মৃত্যুর পরেই পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তারা হাসপাতালের রিসেপশানে প্রথম ভাঙ্গচুর করে। পরে তারা আইসিইউতে জোর করে ঢুকতে চেষ্টা করে। সেই সময় নন্দন নাগ নামে এক নিরাপত্তা রক্ষী তাদের বাধা দেন। তখন তাকে মারধর করার পাশাপাশি আইসিইউের দরজার কাঁচ ভেঙ্গে দেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর খবর পেয়ে সেখানে হাসপাতালের সিকিউরিটি সুপারভাইজার সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছুটে এলে তাকেও মারধর করা হয়। এই ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ হাসপাতালে আসে। বেশ কিছুক্ষুনের চেষ্টায় পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পুলিশ জানায়, রোগীর পরিবারের তরফে রোগীর মৃত্যুতে ঐ বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করা হয়েছে। সেই কারণে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের তরফে একটি আলাদা করে অভিযোগ করা হয়েছে।

Leave a Reply