ASANSOLASANSOL-BURNPUR

Double Murder: মা ভাইকে খুন, কোন অনুশোচনা নেই ধৃত আনোয়ার আলমের, ধার দেওয়া ১ লক্ষ টাকা না পেয়েই বদলা , ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড

বেঙ্গল মিরর ,আসানসোল .দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৭ সেপ্টেম্বরঃ নিজের মা ও ভাইকে খুন করার পরে ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কোনো অনুশোচনা নেই। শুক্রবার আসানসোলের হিরাপুর থানা থেকে আসানসোল আদালতে যাওয়ার পথে জোড়া খুনের অভিযোগে ধৃত মহঃ আনোয়ার আলম ওরফে পাপ্পু জানা, ভাই আফতাব আলম আমার থেকে ১ লক্ষ টাকা গত জানুয়ারি মাসে ধার নিয়েছিল। তার পর কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও বারবার সেই টাকা চেয়েও পাইনি। মা ভাইকে বারবার বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো। তাই টাকা না পেয়ে আমি বাধ্য হয়ে তাদেরকে খুন করেছি।

যদিও মৃত আফতাব আলমের স্ত্রী নুসরত খাতুন এবং তার পরিবারের সদস্য, পাপ্পুর অন্য ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীরা লক্ষ টাকা ধার নেওয়ার দাবি মিথ্যে বলেন। একইসঙ্গে তারা দাবি করেন, এই জোড়া খুনের পেছনে অন্য কোন ষড়যন্ত্র আছে। পরিবারের ছোট ভাই জাফর ইকবালের স্ত্রী শবনম পারভিন, বৃহস্পতিবার রাতে হিরাপুর থানায় এই জোড়া খুনের ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেন।

পরে, শবনম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে নাগাদ ভাসুর মহঃ আনোয়ার আলম দরজায় কড়া নেড়ে ঘরে ঢোকে। আমি তখন বাড়িতে আমার সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে বসেছিলাম। এরপর তিনি একটি ঘরে গিয়ে বসেন। আমি তাকে চা ও বিস্কুট দিলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন মা কোথায়? আমি বলি শাশুড়ি আখতারি খাতুন বাজারে গেছেন। এরপর উনি মাকে জরুরি কথা আছে বলে ফোন করে ডাকেন। আমি তখন আমার শিশুকে দুধ খাওয়ানোর জন্য অন্য ঘরে চলে যাই। আচমকাই সে ঐ ঘরে গিয়ে আমার মুখ হাত একটি তোয়ালে দিয়ে বেঁধে দেয়। আর হুমকি দিয়ে বলে বাড়াবাড়ি করলেই মেরে দেবে। তখন ওর হাতে তখন একটি বড় চপার বা ধারালো ছুরি ছিল ।

তারপর মা সঙ্গে করে এক ভাইপো
নিয়ে বাড়ি আসে। সে ভাইপোকে মুখ, হাত ও পা বেঁধে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে মাকে চৌবাচ্চার জলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ডুবিয়ে দেয়। এর মধ্যেই আমার আর এক ভাসুর আফতাব আলম আসে । তাকে চুলের মুঠি ধরে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে সে খুন করে। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ আনোয়ার পালিয়ে যায়।এরপর আমার স্বামী ঘরে আসেন। এইসব দেখার পর আমার বড় ভাসুরকে তিনি খবর দিলে সে পৌঁছান। জানা গেছে, এই পরিবারেই নুসরত সহ দুই বোনের বিয়ে হয়েছিল দুই ভাইয়ের সঙ্গে।


যদিও মাথা ন্যাড়া করা আনোয়ার আলম পুলিশকে জানায়, গত জানুয়ারি মাসে তার ভাই আফতাব আলমকে সে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ধার করে এনে দিয়েছিল। বিভিন্ন সময় ঐ টাকা ভাইয়ের কাছে চাইলে সে রোজ রোজ দেবো বলে ঘোরাচ্ছিলো। ভাইয়ের পাশেই মা থেকে তাকে সাহায্য করার আশ্বাস দেয়। বৃহস্পতিবার সে ঐ বাড়িতে যাওয়ার পর মাকে বলে আফতাব আলমকে তিনি ডাকো, একটা বড় গ্রিলের কাজের অর্ডার দিতে হবে। মা এরপর তিনবার আফতাবকে ফোন করে। তৃতীয়বার ফোন করার পর আফতাব বাড়িতে আসে এবং খুন হয়।


এদিন আনোয়ারা আলমকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তার জামিন নাকচ করে ৭ দিনের রিমান্ডের নির্দেশ দেন। পুলিশ তাকে এখন হেফাজতে নিয়ে জানার চেষ্টা করছে, সত্যি আনোয়ার আলম অন্য কারোর থেকে টাকা ধার করে ভাইকে দিয়েছিলো কিনা। বা এই খুনের পিছনে আর কি কারণ থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।


আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মোদি এদিন বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত হচ্ছে। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের আসল কারণ গুলি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ।
যদিও মৃতার বড় ছেলে সরবর আলম বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, তার মায়ের বেশ কিছু জমি ছিল যা ৭ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে সবাইকে সমান ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। আখতারি খাতুনের চারছেলে। মেজ ছেলে আনোয়ার আলম ওরফে পাপ্পু রেলপার রিলায়েন্স মার্কেটের কাছে ঝোপর পট্টিতে থাকে। বাকি তিন ভাই হিরাপুর থানায় ইসমাইলের আজাদ নগরেথাকে। মা ও ভাইকে খুন Double Murder করে আনোয়ার আলম বৃহস্পতিবার বিকেলে হিরাপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেছিল।