আসানসোল বিবি কলেজে পড়ুয়া ভর্তির নামে ভুঁয়ো চক্রের হদিশ, চাঞ্চল্য
থানায় অভিযোগ দায়ের অধ্যক্ষের, অভিযুক্ত ফেরার, জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা
রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৪ ডিসেম্বরঃ ন্যাকের ” বি+” তকমা পাওয়া আসানসোলের বিবি বা বানোয়ারীলাল ভালোটিয়া কলেজে পড়ুয়া ভর্তির নামে এক ভুঁয়ো চক্রের হদিশ পাওয়া গেলো। প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য সাটিফিকেট ভেরিফিকেশনের সময় এই চক্রের কাজ প্রকাশ্যে আসে। গোটা ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ৬১ জন পড়ুয়ার কাছ থেকে কলেজে ভর্তির নামে হাজার হাজার টাকা নিয়েছে এই চক্রের মুল মাথা বিশাল পান্ডে নামে এক যুবক।




ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ অমিতাভ বসু আসানসোল দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ঐ যুবকের বিরুদ্ধে প্রতারণা সহ একাধিক ধারায় মামলা করেছে। পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, সবকটি ধারায় জামিন অযোগ্য। আসানসোলের জামুড়িয়ার বাসিন্দা ঐ যুবক আপাততঃ ফেরার রয়েছে। তার খোঁজে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ ঐ যুবকের বাবাকে থানায় ডেকে জেরাও করেছে। জানা গেছে, এই যুবক নিজেকে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের নেতাও বলে পড়ুয়াদেরকে বলেছিলো। পুলিশ ও কলেজ কতৃপক্ষের দাবি, বিশাল পান্ডের সঙ্গে আরো কয়েকজন আছে। সবকিছু খতিয়ে দেখার পরে কলেজ কতৃপক্ষের আরো দাবি, এর সঙ্গে কলেজের কেউ জড়িত নয়। গোটাটাই বাইরে থেকে করা হয়েছে।

জানা গেছে, যে ৬১ জন পড়ুয়ার কাছ থেকে ভর্তির জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের নাম ২০২১ – ২২ শিক্ষা বর্ষে কলেজের যে এ্যাডমিশন তালিকা প্রকাশিত হয়েছিলো, তাতে ছিলোনা। তারপরেও এই পড়ুয়ারা বিবি কলেজে ভর্তির জন্য বিশাল পান্ডেকে টাকা দিয়েছিলো অভিযোগ। কলেজের বাইরে ঐ যুবকের সঙ্গে এই পড়ুয়াদের পরিচয় হয় বলে তারা দাবি করেছে। ঐ যুবক এক একজন পড়ুয়ার থেকে এক এক রকম টাকা নিয়েছিলো বলে জানা গেছে। কারোর কাছ থেকে ৭ হাজার, কারোর থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। কারোর থেকে আবার ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।
এই টাকা নেওয়ার সময় পড়ুয়াদেরকে কলেজের নামে রসিদ বা মানি রিসিট দেওয়া হয়। কলেজ কতৃপক্ষের দাবি, সেই মানি রিসিট জাল। কোন কলেজ পড়ুয়ার থেকে আসল মানি রিসিট নিয়ে, তা ফটোসপের নকল করা হয়েছে। তারপর তা পড়ুয়াদের দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়ারা কলেজ কতৃপক্ষের কাছে দাবি করেছে, তাদেরকে ভর্তির জন্য সাটিফিকেট ভেরিফিকেশনের জন্য ঐ যুবক জামুড়িয়ায় নিয়ে গেছিলো।
শনিবার এই প্রসঙ্গে আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, আমরা যে তালিকা প্রকাশিত করেছিলাম কলেজে ভর্তির জন্য, তাতে এই পড়ুয়াদের নাম ছিলো না। তাই তাদের ভর্তি হওয়ার কোন প্রশ্নই ছিলোনা। এরপর যখন পড়ুয়াদের রেজিষ্ট্রেশন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন ভেরিফিকেশনের সময় গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। গোটা প্রক্রিয়াটাই যে ভুঁয়ো বা ফেক তার সব তথ্য প্রমাণ আছে। এইভাবে যে ভর্তি হওয়া যায়না তা সবার জানা। তা সত্বেও পড়ুয়ারা ঐ যুবকের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয়েছে। এর সঙ্গে কলেজ কতৃপক্ষ কোন ভাবেই দায়ী নয়। অধ্যক্ষ আরো বলেন, গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঐ যুবকের খোঁজ চলছে। কলেজ কতৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই যুবকের বিরুদ্ধে এর আগেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিলো। এমনকি সে পুলিশের নামেও টাকা তুলেছে।