পশ্চিম বর্ধমান জেলায় করোনার গ্রাফ উর্ধ্বমুখী, সতর্ক পুলিশ প্রশাসন, চিন্তায় স্বাস্থ্য দপ্তর, আক্রান্ত হচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে কর্মী
রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ৭ জানুয়ারিঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলায় করোনার গ্রাফ ক্রমেই উর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার একদিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। যা গত কয়েক মাসের মধ্যে একদিনে সর্বাধিক বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি। অন্যদিকে, জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনার থাবা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। শুক্রবার বিকেলের শেষ খবর জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে সবমিলিয়ে আক্রান্তর সংখ্যা ১৩৯ জন। যার মধ্যে আসানসোল জেলা হাসপাতালেই আক্রান্তর সংখ্যা ৬৫ জন। তারমধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন ৮ জন। শুক্রবারই ২ জন চিকিৎসক নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
দূর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ১৯ জন ও জেলার ৮টি ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সবমিলিয়ে ৫৫ জন শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, আক্রান্ত হওয়া সবাই হোম আইসোলেশানে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। প্রত্যেকেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আসানসোল শহর তথা জেলায় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমেরও চিকিৎসক থেকে কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে, পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে মোট ১৪৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে আসানসোলের ২ জন এডিআরএম যেমন আছেন, তেমন রয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী থেকে অফিসের কর্মী। তবে আসানসোল ডিভিশনে রেলের চালক ও গার্ডেরা তেমনভাবে আক্রান্ত হননি।
ইতিমধ্যেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় আসানসোলের ডিভিশন রেল হাসপাতালে ৫৫ বেডের একটি আলাদা আবার নতুন করে করা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন রেল হাসপাতালে মেল মেডিকেল ওয়ার্ডের নং ১ ইউনিটকে করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হাসপাতালের আইসোলেশান ওয়ার্ডে সাধারণ সর্দি, কাশি সহ অন্য উপসর্গ রয়েছে এমন মানুষদের জন্য আলাদা আউটডোর করা হয়েছে।অন্য়দিকে আসানসোলের হট্টন রোড এলাকায় এর একটি ব্য়াংকের শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে ওই ব্য়াংক শাখার পাঁচ জন আধিকারিক ও কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার পজিটিভিটির হার ছিল ২৬.৬ শতাংশ। শুক্রবার জেলায় একদিনে আক্রান্ত হন ১০৪৩ জন। জেলায় গত ২ দিনে প্রায় ২ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এখন মোট আক্রান্তর সংখ্যা ৬২,928 জন। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি পজিটিভিটির হার ছিল ১৪.২ শতাংশ। গত ২৩ ডিসেম্বর সেটা ছিলো ০.৯ শতাংশ।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা বিচার করে আসানসোল ও দূর্গাপুর পুর এলাকা ৩০ টির বেশি ওয়ার্ড এবং আটটি ব্লকের ১০টির মতো গ্রামকে চিহ্নিত করে একটি তালিকা করা হয়েছে। তা জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে , দূর্গাপুর পুর এলাকা সংক্রমণের হার বেশি। জেলা প্রশাসন তার ভিত্তিতে কোথায় কোথায় কনটেনমেন্ট জোন ও মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন করা হবে, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ শেখ ইউনুস এদিন বলেন, জেলা হাসপাতাল সহ অন্য সরকারি হাসপাতালের ১৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে চিকিৎসকও আছেন। জেলাতেও আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে। যা চিন্তার। সব দিকেই নজরদারি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরী হয় নি।
এদিকে, জেলায় করোনার বাড়বাড়ন্তে বিধিনিষেধ বলবৎ করতে সদা সতর্ক আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ। প্রতিদিন রাত দশটার পরে আসানসোলের এসিপি (সেন্ট্রাল) মানবেন্দ্র দাসকে জিটি রোডে দেখা যাচ্ছে। শুক্রবার বিকালে তিনি জিটি রোডের হটন রোড মোড় এলাকায় পুলিশ নিয়ে নামেন। মাস্ক ছাড়া কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না। মাস্ক না থাকলে, তাকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। বলে দেওয়া হচ্ছে, মাস্কহীন থাকলে গ্রেফতার করা হবে।