আসানসোলে পুলিশের সঙ্গে বচসা জিতেন্দ্র তেওয়ারির, করোনা বিধি উপেক্ষা করে ভোটের প্রচারে দিলীপ ঘোষ, মানতে নারাজ পদ্ম শিবির, কমিশনে অভিযোগ শাসক দলের
বেঙ্গল মিরর,রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১০ জানুয়ারিঃ ( Asansol Live News Today) আসানসোল পুরনিগম নির্বাচনের ( Amc ELection) প্রচারে এসে সোমবার দুপুরে আসানসোলের রেলপার এলাকায় করোনা বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠলো বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষের ( Dilip Ghosh) বিরুদ্ধে। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙ্গাল এলাকায় দিলীপ ঘোষ সহ আসানসোল জেলা বিজেপি নেতাদের করোনা বিধি ( Covid Restrictions) মেনে ৫ জন নিয়ে ডোর টু ডোর প্রচার করার কথা বলে। পুলিশ রাস্তা আটকে দাঁড়ায়।
পুলিশ আধিকারিকরা জানান, এত লোকের মিছিল নিয়ে যাওয়া যাবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো করোনা বিধি মেনে ৫ জন নিতে যেতে হবে। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির বচসা বেঁধে যায়। অন্য নেতারাও, পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুধু করে দেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, পুলিশের ভূমিকায় প্রতিবাদ জানিয়ে জিতেন্দ্র তেওয়ারি রাস্তায় বসে পড়েন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দিলীপ ঘোষ জেলা নেতাদের নিয়ে রেলপার এলাকার ২৭ নং ও ২৯ নং ওয়ার্ডে বিকেল পর্যন্ত ভোট প্রচার করেন। দিলীপ ঘোষ অবশ্য তার প্রচারে করোনা বিধি উপেক্ষিত হয়েছে, তা মানতে চাননি।
শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই ভোট প্রচারের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিকেলেই শাসক দলের তরফে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এবারের আসানসোলের পুর ভোটে রেলপার এলাকার ২৭ নং ওয়ার্ড থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি স্ত্রী চৈতালি তেওয়ারি। অন্যদিকে পাশের ওয়ার্ড ২৯ নং ওয়ার্ডের বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন জিতেন্দ্র তেওয়ারির অন্যতম ছায়া সঙ্গী গৌরব গুপ্তা। এদিন দুপুরে এই দুটি ওয়ার্ডে প্রথম পর্যায়ের প্রচারে আসানসোলের রেলপারের ২৭ নং ওয়ার্ডে আসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
তিনি রামকৃষ্ণ ডাঙ্গালে একটি মন্দিরে প্রথমে পুজো দেন। সঙ্গে ছিলেন জেলা সভাপতি দিলীপ দে, রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, জিতেন্দ্র তেওয়ারি, বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই, নির্মল কর্মকার সহ জেলা নেতারা। পুজো দিয়ে মন্দির থেকে বেরিয়ে দিলীপ ঘোষ প্রচার শুরু করতেই প্রচুর দলের কর্মী ও সমর্থক তাদের পিছু নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। সেই ভিড় মিছিলের আকার নেই। কোথাও ছিলোনা করোনা বিধি মেনে চলার ছবি। অলি গলি ঘুরতে থাকেন দিলীপ ঘোষ। তাকে লক্ষ্য করে ছাদের উপর থেকে ফুল ছোঁড়াও হয়।
বেশ কিছুক্ষুন পরে রামকৃষ্ণ ডাঙ্গাল মোড়ে আসানসোল পুলিশের সিআই বা সার্কেল ইন্সপেক্টর স্নেহময় চক্রবর্তী বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বিজেপির সেই প্রচার আটকায়। সিআই বলেন, এইভাবে প্রচার করা যাবে না। এতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ভঙ্গ করা হচ্ছে। করোনা বিধি মানা হচ্ছে না। সেই সময় জিতেন্দ্র তেওয়ারি পুলিশ আধিকারিকের কাছে, তাদের আটকানোর কারণ জানতে চান। রীতিমতো চড়া গলায় জিতেন্দ্র তেওয়ারি পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। অন্য জেলা নেতারাও গলা মেলান। দিলীপ ঘোষ সবার মাঝে দাঁড়িয়ে তা দেখতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষুন ধরে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের এই বাকবিতন্ডা চলে। বিজেপি নেতারা বলেন, আমরা ৫ জনই এসেছি। পেছনে এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করে আসছেন। আমরা কি করতে পারি? একটা সময় পুলিশের ভূমিকায় প্রতিবাদ করে জিতেন্দ্র তেওয়ারি রাস্তায় বসে পড়েন। মিনিট পরে দিলীপ ঘোষ নিজে জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে তুলে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যান। পুলিশ সরে দাঁড়ায়। এরপর পুলিশ পরে আরো একবার বিজেপির নেতাদের আটকানোর চেষ্টা করে। দিলীপবাবুরা তাতে না দমে ২৯ নং ওয়ার্ডে বিকেলে চারটের পরে স্টেশন রোড এলাকায় গিয়ে প্রচার শেষ করেন।
দিলীপ ঘোষ পুলিশের বাধা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কোন বিধি ভঙ্গ করিনি। এত মানুষের ভিড় ও তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে তৃনমুল কংগ্রেস ভয় পেয়েছে। তাই তারা পুলিশকে দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছে। পুলিশ তো এখন তৃনমুল কংগ্রেস হয়ে গেছে। বিজেপি সাংসদ কটাক্ষ করে বলেন, করোনা বিধি বলে কিছু আছে নাকি? থাকলে তো ভঙ্গ করার প্রশ্ন উঠে। তৃনমুল কংগ্রেসের নেতারা যখন হাজার হাজার কর্মী নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যায়, তখন বিধি ভঙ্গ হয়না? বিধি কি শুধু বিজেপির জন্য? আমার প্রচারে কোন বিধি ভঙ্গ হয়নি।
শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস অবশ্য এতো সহজে ছেড়ে দেয়নি। ২৭ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সুব্রত বিশ্বাস বলেন, আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ওরা বাড়াবাড়ি করলে, আমরা তো ছেড়ে দেবোনা। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছি। আশা করি কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।