PoliticsWest Bengal

প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, শোক, আগামীকাল অর্ধদিবস বন্ধ সরকারি দপ্তর

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত: প্রয়াত হলেন রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী এবং তথা মানিকতলা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক সাধন পাণ্ডে (Sadhan Pandey)। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অর্ধদিবস সরকারি অফিস খোলা থাকবে। দুপুর দুটার পর থেকে সরকারি অফিসগুলোতে শোক হিসেবে ছুটি থাকবে। রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্ত এই নির্দেশ জারি করেছেন। অন্যদিকে আজ শোক স্বরূপ সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা নামানো হয়েছে।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় মন্ত্রিসভায় ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

গত বছর জুলাই মাসে ফুসফুসের সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন তাঁকে কলকাতা একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সংজ্ঞাহীন হয়ে ভেন্টিলেশনে থাকায় তাঁকে মুম্বইয়ের হাসাপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই এদিন মৃত্যু হয় উত্তর কলকাতা এলাকার বাম-বিরোধী রাজনীতির অন্যতম পরিচিত মুখ।

একুশের ভোটে মানিকতলা আসনে বিজেপির কল্যাণ চৌবেকে ২০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন তিনি। তাঁকে জোড়া দফতরের দায়িত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের পাশাপাশি স্বনির্ভর এবং স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী করা হয়েছিল তাঁকে।

১০ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়ার পরে তাকে ভোক্তা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অসুস্থতার কারণে গত আগস্টে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে তার অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে সুব্রতর আকস্মিক মৃত্যুর পর আবারও হাত বদল হয় দুটি অফিসেরই। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধনকে দপ্তর ছাড়াই মন্ত্রী হিসেবে রেখেছিলেন।



প্রয়াত সাধন পান্ডের দখলে সেই রেকর্ড, যা স্বয়ং তাঁর দলনেত্রীরও নেই!



তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। সাধন পান্ডের এমন রেকর্ড আছে, যা স্বয়ং তাঁর দলনেত্রীরও নেই।
কি সেই রেকর্ড? বিধানসভা ভোটে সাধন পান্ডে কখনও হারেননি। ১৯৮৫ সালের মার্চে বড়তলা বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রথম বার জয়ী হন সাধন পান্ডে। ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই বড়তলা কেন্দ্র থেকেই অপরাজিত থাকেন তিনি।
১৯৮৫ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ছিলেন সাধন পান্ডে ছিলেন কংগ্রেসের বিধায়ক। ২০০১ থেকে আমৃত্যু তৃণমূলের বিধায়ক। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সাধন পান্ডের থেকে একমাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই বেশি বার নির্বাচিত বিধায়ক।

*শোক প্রকাশ করে টুইট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল,বিরোধী দলনেতা,বিজেপি সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির*

তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারী, বিজেপি তথা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

*সাধনের ছেড়ে যাওয়া মানিকতলায় প্রার্থী হবেন কে? কন্যা শ্রেয়াকে ঘিরেই জল্পনা*

রাজ্যের মন্ত্রী তথা মানিকতলার তৃণমূল বিধায়ক সাধন পাণ্ডে মুম্বইয়ে প্রয়াত হওয়ার পর শূন্য হয়েছে মানিকতলা আসন। যে মানিকতলার সঙ্গে তাঁর একেবারে নাড়ির টান ছিল। সেই মানিকতলাও আজ কার্যত অভিভাবক শূন্য হল। এবার কে ধরবেন সাধনের রেখে যাওয়া সেই পতাকা? এক্ষেত্রে সবথেকে আগে যে নামটি উঠে আসছে তিনি আর কেউ নন সাধন কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে। তবে বাবা জীবিত থাকাকালীনও দলের বিভিন্ন কর্মসূচি একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়তেন শ্রেয়া। ইদানিং সাধন পাণ্ডে অসুস্থ থাকার জেরে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছিলেন না। তখনও হাল ধরেন শ্রেয়া। একাধিক দলীয় কর্মসূচিতে, স্থানীয় এলাকায় নাগরিক পরিষেবা সুনিশ্চিত করার জন্য বার বার এগিয়ে এসেছেন শ্রেয়া। এদিকে উত্তর কলকাতায় সাধন পাণ্ডে বনাম পরেশ পালের দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। সেই দ্বন্দ্ব কমানোর নিরিখেও কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন শ্রেয়া। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের দিন যখন পরেশ পাল মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান তখন হাজির ছিলেন শ্রেয়া। আর এ যেন সেই দ্বন্দ্ব কমানোরই ইঙ্গিত। এদিকে মানিকতলা আসনে স্বাভাবিকভাবেই উপনির্বাচন হবে। সেই আসনে সাধন কন্যাকেই প্রার্থী হিসাবে চাইছেন অনেকেই।

সাধন পান্ডের দেহ রবিবারই নিয়ে আসা হবে কলকাতায়। দমদম বিমানবন্দরে তাঁর পরিবারের লোকজন মরদেহ নিয়ে আসবেন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তারপর তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখানে আজ রাতে সাধন পান্ডের মরদেহ শায়িত থাকবে। আগামীকাল তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

Leave a Reply