ASANSOL

শিল্পাঞ্চলে সাড়ম্বরে পালিত হল বসন্ত উৎসব

আসানসোল গ্রাম ও শতাব্দী পার্কে দোল উৎসব কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় : ( Asansol News ) বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবগুলির মধ্যে দোল উৎসব অন্যতম। শুক্রবার সকাল থেকেই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বসন্ত উৎসব পালিত হল। বিগত দুই বছর সাধারণ মানুষ দোল উৎসব উদযাপন করতে পারেননি। করোনা মহামারীর কারণে ছিল অনেক ধরনের বিধি নিষেধ বলবৎ ছিল। তাই সেভাবে উদযাপন করা হয়নি দোল উৎসব।দীর্ঘ দুই বছর পর এ যেন এক বাঁধভাঙ্গা আনন্দ মাতোয়ারা হতে দেখা গেল শিল্পাঞ্চলের আপামর জনগণকে।এই দোল উৎসবে সামিল হয় শিল্পাঞ্চলের কবি সাহিত্যিক গীতিকার এবং সাংস্কৃতিক জগতের বহু মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ।

সকাল আটটা নাগাদ সমাজসেবী সংস্থা “আসানসোল মহিলা উদ্যোগ”- র পক্ষ থেকে একটি প্রভাত ফেরির আয়োজন করা হয়। ভগৎ সিং মোড় , আপকার গার্ডেন চত্বরে ট্যাবলোতে বাজতে থাকা রবীন্দ্রনাথের গানের তালে মহিলারা এবং শিশুরা নৃত্য পরিবেশন করার পাশাপাশি আবির খেলে বসন্ত উৎসব পালন করেন। উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী সুদেষ্ণা ঘটক, বিবি মুখার্জী, সুদীপ্তা তলাপত্র ছাড়াও আরো সদস্যারা।

এই প্রসঙ্গে সুদেষ্ণা ঘটক বলেন বসন্তের এই রং প্রত্যেকের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসুক এবং রঙিন করে তুলুক এই লক্ষ্যে আমরা এই উৎসব পালন করছি এবং সমাজের সাদা কালো দাগ মুছে আমরা বসন্ত উৎসবের মাধ্যমে রাঙ্গিয়ে তুলতে চাই। আগামী দিনে আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সকলের সঙ্গে দোল উৎসব উদযাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

এরই সঙ্গে সকাল আটটার সময় নাগাদ আসানসোল রবীন্দ্র ভবনের সামনে থেকে সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ প্রত্যয়ী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে একটি প্রভাত ফেরি আসানসোল জেলা আদালতের সামনে বিদ্যাসাগর মূর্তির সামনে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের গানের তালে মহিলারা এবং শিশুরা নৃত্য পরিবেশন করেন ও আবির খেলে বসন্ত উৎসব পালন করেন। উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী পার্থ নাগ, মধুমিতা জামিনদার, দেবাশীষ জামিনদার, নাট্য জগতের রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী, সহ আরো সাংস্কৃতিক ও নাট্য জগতের ছাড়াও আরো অনেকে। এ বিষয়ে অর্ণব মুখার্জি বলেন দীর্ঘ অতিমারীতে ২ বছর মানুষ ঘর বন্দী ছিলেন। আজ দোল উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন বহু মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছেন যার সংখ্যাটা দীর্ঘ মিছিল দেখলেই বোঝা যাবে।


এদিকে ওই অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘ অতিমারীতে মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেননি, কিন্তু আজকের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান দেখে খুবই ভালো লাগছে এই ভেবে যে আসানসোলের সেই পুরনো রঙিন চিত্র ফিরে আসছে আবার। কয়েক বছর আগে একটি আইসক্রিম বারে বসে আমি অর্ণব দা এবং সুদীপ্ত একসঙ্গে ঠিক করেছিলাম যে আসানসোলে এমন প্রভাত ফেরী কেনো হয়না। আজ এর স্বার্থকতা দেখা আনন্দ হচ্ছে। “হ্যাপি হোলি” না বলে “শুভ বসন্ত উৎসব” বা “শুভ দোল উৎসব” বললে ব্যাপারটা অনেক ভালো হয় যা বাঙালি সংস্কৃতির পরিচায়ক। সবাই ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন এটাই চাইব।” বাচিক শিল্পী সুদীপ্ত রায় বলেন, ” দীর্ঘদিন পর মানুষ সব বিভেদ ভুলে আবার মানুষ রঙিন হয়েছে ,মেলবন্ধন হয়েছে সবার, এটাই একটি বিশেষ পাওনা।”

এদিকে আসানসোলের শতাব্দি পার্কে পঞ্চম বসন্ত উৎসব কে কেন্দ্র করে বহু মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সেখানে সাংবাদিক ও গায়ক তারক চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্য শিল্পী , শিশু ও মহিলার গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।শিল্পাঞ্চলের সর্বত্রই একই চিত্র দেখা যায়। এবারের দোল উৎসব কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এবং মানুষ সাড়ম্বরে অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে নিরাপত্তার দিক দিয়ে দেখলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশি তৎপরতা ছিল কঠোর।

অন্য়দিকে আসানসোলে গ্রামে বসন্ত উৎসব কে কেন্দ্র করে বহু মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন সচিন্দ্রনাথ রায়, মীতা রায়, কাউন্সিলার ডা. অমিতাভ বসু, উদয় রায় প্রমুখ। দোল উৎসব কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এবং মানুষ সাড়ম্বরে অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply