ASANSOL

আসানসোল লোকসভা : প্রথম ফুটলো ঘাসফুল, সর্বকালীন রেকর্ড ভোটে জিতে সংসদে আবার গেলেন শত্রুঘ্ন সিনহা

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ১৬ এপ্রিলঃ সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক নয়া নজীর গড়লো আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র। একই সঙ্গে জন্ম লগ্ন থেকে এই প্রথম আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে ঘাস ফুল ফুটলো।
১৯৫২ সালের পর থেকে এখনো পর্যন্ত যত গুলো ( ১৮ বার) লোকসভা নির্বাচন আসানসোলে হয়েছে, তাতে ২০২২ এর উপনির্বাচনে সর্বকালীন রেকর্ড ভোটে জিতলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। ছাপিয়ে গেলেন ২০১৯ সালের বাবুল সুপ্রিয় জেতা ১ লক্ষ ৯৭ হাজারের বেশি ভোটে জেতার মার্জিনও। এবারের উপনির্বাচনে ২০১৯ সালের ভোটের তুলনায় ১০ শতাংশ কম ভোট পড়লেও, শত্রুঘ্ন সিনহার জয়ের মার্জিন ১ লক্ষেরও বেশী বেড়েছে। তার জয়ের ব্যবধান ৩ লক্ষ ৩ হাজার ২০৯ ভোট।

শত্রুঘ্ন সিনহার প্রাপ্ত ভোট ৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৫৮। তিনি পোস্টাল ব্যালটে ভোট পেয়েছেন ৩, ৭৭২ ভোট। শতাংশের হারে শত্রুঘ্ন সিনহার ভোট হলো ৫৬.৬২। তার নিকটতম বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৪৯ ভোট। তিনি পোস্টাল ব্যালটে ভোট পেয়েছেন ১, ১০৬ ভোট। বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৩০.৪৬ শতাংশ ভোট।
এরপর থাকা অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেসের দুই প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ পুইতুন্ডি পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪১২ ও ১৫ হাজার ৩৫ ভোট। সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রার্থী পোস্টাল ব্যালটে ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ৫৪৮ ও ১৫০ ভোট।


এর আগে ২০০৫ সালে তৎকালীন সিপিএমের সাংসদ বিকাশ চৌধুরীর মৃত্যুতে উপনির্বাচন হয়েছিলো। সেই উপনির্বাচনে সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী ২, ২৯, ৯৪১ ভোটে জিতেছিলেন। সেই ব্যবধান ছিলো এখনো পর্যন্ত সর্বাধিক জয়। ২০২২ সালের উপনির্বাচনে শত্রুঘ্ন সিনহার ব্যবধান, ২০০৫ সালের ব্যবধানকে পেছনে ফেলে দিলো।
প্রসঙ্গতঃ, ২০১৪ সালে বিজেপি আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে রীতিমতো চমক দিয়ে প্রার্থী করেছিলো গায়ক নায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে। তিনি সেই ভোটে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনকে ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারান। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার বিজেপি আবার আসানসোলে প্রার্থী করে বাবুল সুপ্রিয়কেই। বাবুল সেই ভোটে তৃনমুল কংগ্রেসের ২০১৪ সালের সাংসদ মুনমুন সেনকে ২০১৪ এর ব্যবধানের দেড়গুণের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন। কিন্তু ২০২১ সালের বাংলা দখলের লড়াইয়ে বিজেপির হারার পরে বঙ্গ রাজনীতি অন্যদিকে মোড় নেয়। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়ে বাবুল প্রথমে দল ও পরে সাংসদ পদ ছাড়েন। বাবুলের ছেড়ে যাওয়া আসানসোল উপনির্বাচনে আর ধরে রাখতে পারলোনা কেন্দ্রের শাসক দল।

বলা ভালো বিজেপি আসানসোলে পর্যদুস্ত হলো। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে যে অঙ্কে বিজেপি বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করে বাজিমাৎ করেছিলো। এবার সেই অঙ্কেই শত্রুঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী করে লেটার মাকস্ পেলো রাজ্যের শাসক দল।
দলের প্রথম বারের জয়ে উচ্ছ্বসিত পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। বিশেষ করে রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক। কেন না, তিনি বাম জমানায় পর পর ৫ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হয়ে জিততে পারেননি। দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি আর প্রার্থী হননি। ২০২১ এর পর ও ২০২৪ আগে আসানসোলের উপনির্বাচন মলয় ঘটকের কাছে অগ্নি পরীক্ষা ছিলো। যে পরীক্ষায় তিনি সসম্মানে পাশ করে গেলেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

Leave a Reply