ডান ও বাম প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত, খনি শিল্পাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সিপিএম ও কংগ্রেস, মত রাজনৈতিক মহলের
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৭ এপ্রিলঃ আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সর্বকালীন রেকর্ড ৩ লক্ষাধিক ভোটে জয় প্রত্যাশিত, না পরপর দুবার জেতা আসনে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের হার অপ্রত্যাশিত। সেটা বিচার বিশ্লেষণের বিষয়। কিন্তু আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের পরে এটা বাস্তব প্রমানিত হলো যে, আসানসোল – রানিগঞ্জ – জামুড়িয়া খনি এলাকায় ডান ও বাম ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিনত হচ্ছে। আরো বলা ভালো যে, আসানসোলের সাধারণ ভোটারদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সিপিএম ও কংগ্রেস।
আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায় ও কংগ্রেসের প্রসেনজিৎ পুইতুন্ডির জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মতো লোকসভা নির্বাচনে যা ভোট পড়বে, তার ৬ ভাগের একভাগ ৬/১) বা ১৬ শতাংশ পেলে, একজন প্রার্থীর জামানত বাঁচবে। সেই শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সিপিএম ও কংগ্রেসের দুই প্রার্থী সেই শতাংশ ভোট এবারের উপনির্বাচনে পাননি। আসানসোল লোকসভার সাতটি বিধান সভা থেকে পার্থ মুখোপাধ্যায় ৯০, ৪১২ ও প্রসেনজিৎ পুইতুন্ডি ১৫, ০৩৫ ভোট পেয়েছেন। শতাংশের হারে সিপিএম ৭ এর সামান্য বেশি ও কংগ্রেস ১ এর সামান্য বেশি ভোট পেয়েছে।
তবে এক দশক বা তার সামান্য আগে কংগ্রেস ও সিপিএমের এমন অবস্থা ছিলো। একটা সময় আসানসোল ও তার আশপাশের বিধান সভা কেন্দ্রগুলো বাম দূর্গ ছিলো। হাতের দাপট না থাকলেও একটা পকেট ভোট তাদেরও ছিলো।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলের সিপিএমের প্রার্থী বর্তমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ৮৭, ৬০৮ ভোট। সেই তুলনায় এবারের উপনির্বাচনে হাজার তিনেকের মতো বেশি ভোট পার্থ মুখোপাধ্যায় পেয়েছেন। এই ভোটে কংগ্রেসের বিশ্বরুপ মন্ডল পেয়েছিলেন ২১, ০৩৮ ভোট। ২০১৯ এর ভোটে বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় প্রায় ২ লক্ষ ভোটে জিতে আসানসোল থেকে দ্বিতীয়বারের জন্য সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি হারিয়েছিলেন তৃনমুল কংগ্রেসের মুনমুন সেনকে।
তার আগে, ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী ২, ৫৫, ৮৩৯ ভোট পান। কংগ্রেসের ইন্দ্রাণী মিশ্র পেয়েছিলেন ৪৮, ৫০২ ভোট।
এই নির্বাচনে আসানসোল থেকে প্রথম বারের জন্য বিজেপির প্রার্থী হয়ে বাবুল সুপ্রিয় ৭০ হাজারের মতো ভোটে হারিয়ে ছিলেন তৃনমুল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনকে।
নির্বাচনে ভোট পাওয়ার অংকের হিসাবে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই খনি এলাকায় বামেদের একটা ব্যাঙ্ক ছিলো। তারপর থেকে বামেদের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামতে শুরু করে। কংগ্রেসের সেই অর্থে কোন ভোট ব্যাঙ্ক না থাকলেও একটা সংগঠন ছিলো। সংগঠনের দিক থেকে বামেরাও একবারে প্রথমসারীতে ছিলো। কিন্তু এখন সবই অতীত।
এবারের আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে দলের প্রার্থীদের ভোট পাওয়া নিয়ে জেলা নেতৃত্ব বিশ্লেষণ করবে বলে জানা গেছে।
তবে, এই ভোটের পরে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে পথ হারিয়েছে বাম ও ডান। ২০২৪ এই দুই দলকে কিছু করতে হলে, এখন থেকেই নতুন করে শুরু করতে হবে। না হলে মুশকিল।