ASANSOL

রেলওয়ে স্কুলগুলি বন্ধ করার প্রতিবাদে এবার সোচ্চার হল আসানসোলের সাংস্কৃতিক জগৎ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : আসানসোল রেল ডিভিশনের তরফে রেলওয়ে স্কুলগুলি বন্ধ করার নির্দেশিকার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের আন্দোলনের পাশাপাশি এবার এগিয়ে এলেন আসানসোলের সাংস্কৃতিক জগতের অতি পরিচিত মানুষেরা।বৃহস্পতিবার বিকেলে আসানসোল রবীন্দ্র ভবনের বিপরীতে আসানসোলে হাট বসার স্থানে সাংস্কৃতিক জগতের পক্ষ থেকে ইস্টার্ন রেলওয়ে স্কুল এবং রেলওয়ে পরিচালিত অন্যান্য স্কুলগুলি বন্ধ করার নির্দেশিকার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
ওই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাহিত্যিক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সাহিত্যিক ড: অরুণাভ সেনগুপ্ত, মানবাধিকার কর্মী সুমন কল্যাণ মৌলিক, নজরুল একাডেমী এর কালচারাল সেক্রেটারি সোনালী কাজী, অমিতদ্যুতি ঘোষ, মধুমিতা জমিনদার, সুজিত পাঁজা, বাচিকশিল্পী সোমা বিশ্বাস ও সুদীপ্ত রায়, নাট্যজগৎ থেকে অমিত দাস, রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী, সমাজকর্মী চন্দনা মুখার্জী, গৌর শর্মা, ভারতী ব্যানার্জী, পায়েল দাস শর্মা, অর্ণব মুখার্জী, চিত্রশিল্পী পার্থ নাগ প্রমুখ।

ওই প্রতিবাদ সভা থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও ডিআরএম – র কাছে একটি স্বারকলিপি দেওয়ার জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়।প্রতিবাদ সভা থেকে বিশিষ্ট আইনজীবী অমিতাভ মুখোপাধ্যায় রেল কর্তৃপক্ষের রেল স্কুলগুলি বন্ধ করার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন যে , “আসানসোল ইস্টার্ন রেল স্কুলসহ অন্যান্য রেল স্কুলগুলির ঐতিহ্য রয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুল এবং রেল পরিচালিত স্কুলগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত রীতিমতো তুঘলকি। সারাদেশেই কেন্দ্র সরকার বেসরকারীকরণের পথে হাঁটছে এই স্কুলগুলো বন্ধ করার নেপথ্যে এরকমই কোনো সুদূরপ্রসারী চিন্তা ধারা কেন্দ্র সরকারের মাথায় রয়েছে এটাই মনে হয়। এর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।”

এদিকে সুমন কল্যান মৌলিক বলেন যে, “আসানসোল ইস্টার্ন রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ৯০০ জন পড়ুয়া রয়েছে, হাই স্কুলে ৩০০ জন, মিক্সড প্রাইমারী স্কুলে ৫২০ জন অর্থাৎ প্রায় ১৭২০ জন পড়ুয়া রয়েছে। এদিকে অন্ডাল ইস্টার্ন রেলওয়ে হাইস্কুলে ৮৭০ জন পড়ুয়া রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাচ্ছে এই স্কুলগুলিতে খুব কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে যা আদতে ভিত্তিহীন। এমনকি আদ্রা ডিভিশন এরকম অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

ডা: অরুনাভ সেনগুপ্ত বলেন যে, ” যুগ যুগ ধরে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে রেলওয়ে স্কুলের ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন জগতের প্রখ্যাত মানুষ এই স্কুলে পড়াশোনা করে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক এবং সমস্ত জগতের মানুষ যারা সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তারা এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। হঠাৎ করেই ভিত্তিহীন কারণ দেখিয়ে এই সমস্ত স্কুল গুলি বন্ধ করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আসানসোলের মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।”

অমিতদ্যুত ঘোষ তার বক্তব্য রাখার সময় কেন্দ্র সরকারের শিক্ষানীতির তীব্র বিরোধিতা করে বলেন কেন্দ্র সরকারের শিক্ষানীতিতে যা বলা হয়েছে বাস্তবে তার উল্টো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এই লড়াই অনেক বড় লড়াই। এটি আসানসোলের ডি আর এম এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এটি আসলে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই। অবিলম্বে সবাইকে একজোট হয়ে এই সিদ্ধান্তকে রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার নিন আসানসোলবাসী।প্রতিবাদ সভার একদম শেষে সোনালী কাজী কবি নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি ও গানের মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন।

বলে রাখা ভাল যে, রেলওয়ে পরিচালিত স্কুলগুলো বন্ধের নির্দেশ জারি করার পর অভিভাবকদের মধ্যে রীতিমত ক্ষোভ রয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ছাড়াও অন্যান্য দলের পক্ষ থেকেও রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম এর নিকট ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।ওই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থেকে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বলেন, তারা কোনো অবস্থাতেই তাদের সন্তানদের এখান থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাবেন না, এই স্কুলেই তারা ছেলেমেয়েদের পড়াবেন, রেল প্রশাসনের এই আদেশ তুঘলকি, হাজার হাজার শিশুর ভবিষ্যত নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। বেসরকারি স্কুলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন জারী থাকবে।

Leave a Reply