ASANSOL

স্কুলে পড়ুয়ার শ্লীলতাহানিতে দোষী সাব্যস্ত, জামুড়িয়া হাইস্কুলের লাইব্রেরিয়ানের পকসো আইনে তিন বছরের কারাদণ্ড

প্রায় ৬ বছর ধরে চললো মামলা,

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল: নাবালিকা সপ্তম শ্রেণীর এক স্কুল পড়ুয়াকে স্কুলের মধ্যে শ্লীলতাহানি করায় পকসো আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে তিন বছরের কারাদণ্ড হলো লাইব্রেরিয়ানের। সাজাপ্রাপ্ত ঐ লাইব্রেরিয়ানের নাম অরুপ সরকার। প্রায় ৬ বছর ধরে আদালতে এই মামলা চলার পরে গত মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন আসানসোলের জামুড়িয়ার রাজপুর নন্ডী হাইস্কুলের লাইব্রেরিয়ান। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আসানসোল জেলা আদালতের এডিজে ( দ্বিতীয়) বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক শরণ্যা সেন প্রসাদ পকসো আইনের ৮ নং ধারায় লাইব্রেরিয়ানকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন । সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা।

জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে দোষীকে। একইভাবে পকসো আইনের ১২ নং ধারায় ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে অতিরিক্ত ১ মাসের কারাদণ্ড হবে। দুটি সাজা একইসঙ্গে চলবে বলে বলে বিচারক তার রায়ে বলেছেন। তবে সাজার মেয়াদ ৩ বছর হওয়ায় বিচারক লাইব্রেরিয়ানের জামিন এদিন মঞ্জুর করেছেন। তবে লাইব্রেরিয়ান এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবেন, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। এই মামলায় সরকারি আইনজীবী বা পিপি হিসাবে ছিলেন তাপস উকিল।


জানা গেছে, ১২ বছরের ঐ নাবালিকা জামুড়িয়ার রাজপুর নন্ডী হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট অন্যদিনের মতো ঐ নাবালিকা স্কুলে আসে। অভিযোগ, ঐ দিন স্কুলে ক্লাসে দ্বিতীয় পিরিয়ড পড়াশোনার পরে সে স্কুলের লাইব্রেরিতে যায়। সেই সময় লাইব্রেরিয়ান অরূপ সরকার তাকে শ্লীলতাহানি করেন। সঙ্গে সঙ্গে ঐ পড়ুয়া স্কুলের স্টাফ রুমে গিয়ে শিক্ষকদের সেই ঘটনার কথা জানান। স্কুলের তরফে তার পরিবারের সদস্যদের স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে গোটা ঘটনার কথা জানান শিক্ষকরা। পরের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট পড়ুয়ার বাবা শেখ মোক্তার লাইব্রেরিান অরূপ সরকারের বিরুদ্ধে জামুরিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পকসো আইনের ৮ ও ১২ নং এবং ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪ নং ধারায় একটি মামলা ( নং ২৬৪ / ১৬) দায়ের করা হয়।

আসানসোল জেলা হাসপাতালে পড়ুয়ার শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সেই সময় আসানসোলে পকসো আদালত ছিলোনা। তাই এই মামলার বিচার শুরু হয় বর্ধমান আদালতে। পরে ঐ লাইব্রেরিয়ান জামিন পান। পরবর্তী কালে আসানসোল আদালতে পকসো আদালত চালু হলে, সেখানে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এই মামলার সরকারি আইনজীবী তাপস উকিল বলেন, এই মামলায় সব মিলিয়ে ১১ জন সাক্ষী দেন। গত মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি শেষে লাইব্রেরিয়ান দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো।

বৃহস্পতিবার আসানসোলের এডিজে বা অতিরিক্ত জেলা জজ ( দ্বিতীয়) তথা পকসো আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্র বিচারক শরণ্য সেন প্রসাদ পকসো আইনের ৮ নং ধারায় দোষীর তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার রায় দেন। জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ১২ নং ধারায় ১ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা বলেন। এই জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। উভয় সাজা একইসঙ্গে চলবে। সরকারি আইনজীবী আরো বলেন, তিন বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় বিচারক এদিন তাকে জামিন দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবেন ।

Leave a Reply