ASANSOLRANIGANJ-JAMURIA

রানিগঞ্জে পুকুর ভরাট করে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ, শাসক দল ও পুর ইঞ্জিনিয়ারদের জড়িত থাকার দাবি

সোশাল মিডিয়ায় কটাক্ষ বিজেপি কাউন্সিলারের, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মেয়রের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২০ জুনঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল পুরনিগমের রানিগঞ্জ এলাকায় আবার পুকুর ভরাট করে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠলো। এই ঘটনায় সরাসরি নাম জড়িয়েছে ওয়ার্ডের শাসক দলের নেতৃত্ব ও পুর ইঞ্জিনিয়ারদের। এমনই দাবি করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
আসানসোল পুরনিগমের বিজেপি কাউন্সিলরদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি সোশাল মিডিয়া টুইটার ছবি সহ পোস্ট করে সরব হয়েছেন। রানিগঞ্জের বিজেপি মন্ডল ১ এর নেতৃত্ব এই নির্মাণ নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। এই অভিযোগ নিয়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন শাসক দল ও পুরনিগম কতৃপক্ষ।


যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি বিধান উপাধ্যায়, পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও সদ্য মেয়র পারিষদ হওয়া রানিগঞ্জ বোরো অফিসের দায়িত্ব পাওয়া দিব্যেন্দু ভগৎ। তারা সোমবার বলেন, কেউ জড়িত নয়। তদন্ত করা হচ্ছে। আগেও বেআইনি নির্মান আটকাতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এবারও হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।


জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের রানিগঞ্জের ৯২ নং ওয়ার্ডের চুড়ি পট্টি এলাকায় সাহেববাঁধ পুকুর লাগোয়া জনৈক সৌকত আলি খানের ৩ কাঁটা জমি আছে। অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে সেই জমিতে একটি বহুতল নির্মাণ করার নামে মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ৩ কাঁটা জমি বেড়ে ৭ কাঁটা হয়ে গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ও অভিযোগ। গত মে মাসে এই নির্মাণের কথা জানতে পেরে রানিগঞ্জ বোরো অফিসের সাব ইঞ্জিনিয়ার সেখানে যান। পরে কাজ বন্ধ করার নোটিশ পাঠানো হয়। রানিগঞ্জ থানার পুলিশও এলাকায় গিয়ে কাজ বন্ধ করে আসে। যদিও, তারপরও রবিবার সেখানে কাজ হচ্ছিলো বলে দাবি স্থানীয়দের।


মহঃ নামে এক বাসিন্দা বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুর ইঞ্জিনিয়ারদের যোগসাজশ না থাকলে কি করে ৩ কাঁটা জমি ৭ কাঁটা হয়? আমরা চাই এর তদন্ত করা হোক।
বিজেপির পুর কাউন্সিলদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি বলেন, অর্থবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি তৃনমুল কংগ্রেসের নেতাদের ঘুষ দিয়ে মন খুশি করে এই কাজ করছে। তাই পুর কতৃপক্ষের কোন হেলদোল নেই। মেয়র তো বলেছিলেন কোন বেআইনি কাজ হবে না। তিনি আরো বলেন, আসানসোল পুর এলাকায় আরো বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। আমরা আস্তে আস্তে সব প্রকাশ্যে আনবো। বিজেপির রানিগঞ্জ মন্ডল ১ এর সভাপতি দেবজিৎ খাঁ এদিন বলেন, শাসক দলের মদতে এটা হচ্ছে। আমরা সবকিছু নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।


তাদের বিরুদ্ধে উঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন রানিগঞ্জ বোরো অফিসের দায়িত্বে থাকা এ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ কোনার। তিনি বলেন, গত মে মাসের এই নির্মাণের খবর পেয়ে এসআই সেখানে যান। এই ভবনের কোন নকশা নেই। পুলিশও সেখানে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ করার নোটিশও দেওয়া হয়েছে। তারপরও কাজ হচ্ছে বলে জানা নেই। খবর নেওয়া হচ্ছে।
এই অভিযোগ নিয়ে কিন্তু তেমনভাবে কিছু বলতে চাননি ৯২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামা উপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। বলতে পারবো না।


যার বিরুদ্ধে পুকুর ভরাট করে জমি বাড়িয়ে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ সেই জমি মালিক সৌকত আলি খানকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে, তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গোটা অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বিধান উপাধ্যায় এদিন বলেন, ঠিক কি হচ্ছে তা জানার জন্য আসানসোল থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠানো হবে। তারা তদন্ত করে দেখবেন ও রিপোর্ট দেবেন। তার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোন বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।

Leave a Reply