ASANSOL

রানিগঞ্জে ইটভাঁটা কর্মী যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে থানায় বিক্ষোভ

বিজেপি নেতা সাতজনের নামে খুনের অভিযোগ বাবার, ধৃত তিন

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ইটভাঁটা কর্মী এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার চাঞ্চল্য ছড়ালো পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জ থানা এলাকায়। জামুড়িয়া থানার ডাহুকা গ্রামের বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম সুপ্রভাত মন্ডল (২২)। মৃত যুবকের বাবা ইসিএলের ছোঁড়া ১০ নং কোলিয়ারির কর্মী উত্তম মন্ডল ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে মোট সাতজনের নামে রানিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রবিবার সকালে। সাতজনের মধ্যে রয়েছেন রানিগঞ্জ থানার বক্তারনগরের বাসিন্দা বিজেপি নেতা জয়দেব খাঁ ও তার স্ত্রী অনিতা খাঁ। রানিগঞ্জে জয়দেব খাঁয়ের ইটভাঁটাতেই সুপ্রভাত মন্ডল গত ৭/৮ মাস ধরে কাজ করতো। অভিযুক্ত এই বিজেপি নেতা ২০২১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি বর্তমানে সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন। জয়দেবের বিরুদ্ধে একইসঙ্গে বেআইনি কয়লা ও বালি কারবারের অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে তার বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের সিআইডি তদন্তও করছে। বিজেপিতে যোগদানের পরেই আসানসোল দূর্গাপুর এলাকায় জয়দেব প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলো। উত্তম মন্ডল একইসঙ্গে ছেলেকে খুন করার অভিযোগ করেছেন নিজের শ্বশুর ও শ্যালক জামুড়িয়ার ডাহুকার বাসিন্দা গদাধর রানা ও দয়াময় রানার বিরুদ্ধে।


রবিবার সকাল থেকে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে যুবকের বাবা, মা, পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা রানিগঞ্জ থানার সামনে ধর্ণায় বসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। বিক্ষোভের জেরে থানা এলাকার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তম মন্ডলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ ও ১২০/বি নং ধারায় খুনের মামলা দিয়ে সাতজনের নামে এফআইআর করে । জয়দেব সহ চারজন ফেরার হয়ে গেলেও পুলিশ গদাধর রানা, দয়াময় রানা ও ঐ ইটভাঁটার কর্মী রাজকুমার পালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক। পরে বিকেলে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি (সেন্ট্রাল) তথাগত পান্ডে বলেন। তিনি আরো বলেন, যুবকের বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সাতজনের নামে খুনের মামলা করা হয়েছে। বাকি চারজনের খোঁজ চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। যুবকের বাবার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।


এদিকে রবিবার বিকেলে আসানসোল জেলা হাসপাতালে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পারে যে, শনিবার রাতে ঐ ইটভাঁটার একটি ঘরের মধ্যে সুপ্রভাত মন্ডলকে সিলিং ফ্যানে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রানিগঞ্জের হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে রানিগঞ্জ থানায় খবর দেওয়া হয়। রানিগঞ্জ থানা জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়িকে জানায়। রবিবার সকালে সেখানে থেকে যুবকের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়।


এদিন যুবকের বাবা বলেন , ছেলে দূরসম্পর্কের আত্মীয় জয়দেব খাঁয়ের ইটভাটায় কর্মরত ছিলো গত ৭/৮ মাস ধরে। আমি ছেলের চাকরির জন্য বেশ খানিকটা জমি কিনেছিলাম। জয়দেব খাঁ সেই জমি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য আমার উপর চাপ দিচ্ছিলো। একইসঙ্গে তাকে সাহায্য করছিলো আমার শ্বশুর ও শ্যালক। আমি তা না করে দেওয়ায় আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়। ছেলেকে ইটভাঁটায় আটকে রেখে, তাকে খুন করার হুমকি দেয় জয়দেব ও তার সঙ্গীরা। তিনি আরো বলেন, খানিকটা চাপ ও ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য সেই জমি আমি লিখে দিয়েছিলাম। কিন্তু জয়দেব খাঁ আমাকে কোন টাকা দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে, আমাকে আবারও হুমকি দেওয়া হয়। শনিবার রাত আটটা নাগাদ জয়দেব উত্তম মন্ডলকে ফোন করে তার ইটভাঁটায় আসতে বলে। আমি না যেতে চলায়, সে আমার বাড়িতে লোকজন সহ গাড়ি পাঠায়। তাও আমি যাইনি। রবিবার সকালে পুলিশ জানায়, আমার ছেলে মারা গেছে। রানিগঞ্জ থানায় আসতে বলে। উত্তম মন্ডল সহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করে বলেন, সুপ্রভাত মন্ডলকে জয়দেব খাঁ ও তার লোকেরা অত্যাচার করে খুন করেছে। সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে।

Leave a Reply