ASANSOL

আসানসোল উপনির্বাচনে ভোট পড়লো প্রায় ৮৩ শতাংশ, বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ

তৃনমুল ও বিজেপির সংঘর্ষ, পুনঃনির্বাচনের দাবিতে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে ধর্ণা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল পুরনিগমের ৬ নং ওয়ার্ডে উপনির্বাচনেও বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠলো। পাশাপাশি তৃনমুল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দেওয়া, এজেন্টকে মারধর করে বার করা ও হামলা চালিয়ে শিব শংকর পাসোয়ান নামে এক কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিজেপি। একই অভিযোগ করেছে অন্য দুই বিরোধী দুই দল সিপিএম ও কংগ্রেস। যদিও এই ওয়ার্ডের তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী তথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় ও আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তথা জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি অভিজিৎ ঘটক বিরোধী দলের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, বিরোধীদের পাশে মানুষেরা নেই। কোন সংগঠন নেই। শুধু শুধু মিথ্যে অভিযোগ করে বদনাম করা হচ্ছে। এই ওয়ার্ডের মানুষেরা উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিয়েছেন।


এদিকে নতুন করে এই ওয়ার্ডের ১৪ টি বুথেই নির্বাচনের দাবিতে রবিবার দুপুরের পরে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব আসানসোলে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ধর্ণায় বসে পড়েন। সেখানে বিজেপি প্রার্থী শ্রীদীপ চক্রবর্তী ছাড়াও ছিলেন জেলা সভাপতি দিলীপ দে, রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়রা। বিজেপি প্রার্থী ওয়ার্ডে পুনঃনির্বাচন চেয়ে এই ভোটের মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসার ( এমআরও) তথা আসানসোলের মহকুমাশাসক অভিজ্ঞান পাঁজাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। একইভাবে সিপিএমের তরফে ১২ টি বুথে আবার ভোট চেয়ে এমআরওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।


বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট ছিলো। সন্ধ্যা ছটার সময় এমআরও বলেন, মোট ভোট পড়েছে ৮২.৬৪ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, বিজেপি ও সিপিএমের তরফে পুনঃনির্বাচন চেয়ে লিখিত দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। এক জায়গায় সামান্য গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায়। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো।
বলা যেতে পারে যে, এদিন উপনির্বাচনের নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামুড়িয়ার পাশাপাশি আসানসোলের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
রবিবার সকাল সাতটা থেকে আসানসোল পুরনিগমের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের ১৪ টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল সকাল ভোট দিতে দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের বেশি করে । জেলা প্রশাসন ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ভোটে অশান্তি ঠেকাতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। ১৪ টি বুথে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন ছিলো। বুথের বাইরেও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছিলো সিসি ক্যামেরার নজরদারি। তারপরও অশান্তি ঠেকানো যায়নি।


সকালে এগারোটার পরে বিজেপির কর্মী ও সমর্থকরা রানিগঞ্জের জেকে নগর মোড়ে ২ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তারা কারচুপির পাশাপাশি একাধিক বুথ থেকে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বার করে দেয় বলে অভিযোগ করেন। খবর পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনোদ নুনিয়া সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় পৌঁছান। খবর পেয়ে দূর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই, জেলা সভাপতি দিলীপ দে সহ বিজেপি নেতা ও কর্মীরা জেকে নগর মোড়ে এলে পুলিশ তাদেরকে আটকায়। তখন সেখানে তৃনমুল কংগ্রেস এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরিস্থিতি হয়। তৃনমুল কংগ্রেসের নেতা বিনোদ নুনিয়া অভিযোগ করেন, বিজেপি নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে গাড়িতে করে দুর্গাপুর থেকে সমর্থকদের নিয়ে আসছে।

বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই অভিযোগ করে বলেন, তৃনমুল কংগ্রেসের উপনির্বাচনে কারচুপি করছে। তিনি জামুড়িয়ায় বিধায়ক হরেরাম সিংকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, শাসক দলের কর্মীরা নির্বিচারে বুথ দখল করছে। যদিও বিজেপির অভিযোগ তৃণমূলের পক্ষ থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
জামুড়িয়ার বিধায়ক বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে অশান্তি সৃষ্টি করতে গুজব ছড়াচ্ছে বিজেপি। পুর এলাকায় কোন অশান্তি হয়নি।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনেয়ালের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ও পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
জেলা কংগ্রেসের সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী ও সিপিএমের জেলা নেতা মনোজ দত্ত বলেন, সকাল থেকে তৃনমুল কংগ্রেসের গুন্ডা বাহিনী বুথ দখল করে ভোট লুঠ করেছে। সবাইকে শনিবার বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়।

Leave a Reply