তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সংগঠন ৪৮ ঘণ্টায় ধরনায়, বিজেপির প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি এবং বিলকিস বানোর মামলায় দোষীদের মুক্তির প্রতিবাদ
বেঙ্গল মিরর, কোলকাতা ঃ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১জন আসামিকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিবাদে কলকাতার গান্ধী মূর্তির কাছে ৪৮ ঘণ্টার ধরনা শুরু করেছে।সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সংগঠন দোষীদের এই মুক্তি দেওয়াকে, অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেছে যা আজকের সমাজে গ্রহণ করা যায় না। এর পাশাপাশি তাঁরা বিলকিস বানোর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেছে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস টুইট করে জানিয়েছে, “Today, our women wing leaders started a 48-hour dharna near Gandhi Murti to protest against the horrifying atrocities that was meted out against Bilkis Bano. The release of the accused in the case is shameful and unacceptable. Our fight for justice will continue,”গুজরাট সরকার ১৫ অগাস্ট, ২০০২ সালে গুজরাট গণহত্যার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করার জন্য অভিযুক্ত ১১ জন আসামিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এই ঘটনার পর, সেই অভিযুক্তদের গুজরাটের শাসকদলের সদস্যরা স্বাগত এবং মালা পরিয়ে অভিনন্দন জানান।




মহিলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা পশ্চিমবঙ্গের বাগদাতে বিএসএফ জওয়ানের হাতে সংঘটিত ভয়ঙ্কর ধর্ষণ-সহ, এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশের বিষয় আছে যা মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের শিথিল মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে, এবং সেইজন্য দলের মহিলা সংগঠন কেন্দ্রীয় সরকারের চরম নিন্দা করেছেন। বিক্ষোভকারীরা বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবেরও চরম নিন্দা করেছেন।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বসে, বাংলার মন্ত্রী ডঃ শশী পাঁজা বলেছেন যে, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘নারী শক্তি’ সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, “যদিও, সেই সন্ধ্যাতেই, আমরা দেখলাম গুজরাট সরকার ১১ জন দোষীকে ছেড়ে দিয়েছে, যারা বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় মূল শাস্তি প্রাপক। দেশের আইনানুযায়ী, আপনি যখন কোনো বন্দীর জন্য মকুবের কথা বিবেচনা করেন, তখন আপনি অবশ্যই ধর্ষণ ও পাচারের জন্য শাস্তি প্রাপকদের কথা বিবেচনা করবেন না। আমরা বুঝতে পারছি না কীভাবে এটি সম্ভব। তারপর থেকেই, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়, আমরা বারবার দোষীদের মুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চলেছি”।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন গুজরাট সরকারের এই ভীষণ পদক্ষেপে দেশের মহিলারা এখন অনিরাপদ এবং অপমানিত বোধ করছে;- এটি দাবি করে, ডঃ শশী পাঁজা বলেছেন যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাগদাতে বিএসএফ জওয়ানের হাতে সংঘটিত ধর্ষণের বিষয়ে কোনোরকম মন্তব্য না করে আবারও তার অযোগ্যতাকে প্রমাণ করেছে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা প্রশ্ন তোলেন যে, “বিএসএফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনস্থ। বিএসএফ কর্মকর্তারা, যাদের ভারতের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার কথা, তারা এখন জঘন্য অপরাধ করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এই ঘটনার তদন্ত করবেন এবং মহিলাদের ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানদের শাস্তি দেবেন?”
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১ জন দোষী সাব্যস্তদের মুক্তি দেওয়া, পেট্রোল-ডিজেল এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি-সহ অনেকগুলি বিষয়ের জন্য সোচ্চার হওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। বাংলার সব জেলা জুড়ে দলের মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে একইধরণের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
বাংলার অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন যে, যে রাজ্যগুলিতে অ-বিজেপি সরকার আছে, বিশেষ করে বাংলায়, কেন্দ্রীয় সরকার তার তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, “একই অভিযোগে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ তো দূর কোনোরকম ডাকও দেওয়া হয়না। অভিযোগ একই হলে, দলীয় রঙ নির্বিশেষে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বিজেপি সরকারের হাতে রক্ত লেগে আছে বলে দাবি করে;- চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় দোষীদের মুক্তি দিয়ে অত্যন্ত এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে এই বিজেপি সরকার যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেছেন, “আমরা প্রচণ্ড লজ্জিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নারী-শক্তি এবং নারীদের সম্মান দেওয়ার কথা বলেন, তবুও গুজরাটে তার দলের সদস্যরা জঘন্য অপরাধে দোষীদের মুক্তির অনুমতি দেয়।”