ASANSOL

সিবিআইয়ের অভিযানের পরেই বিস্ফোরক মন্ত্রী পত্নী সুদেষ্ণা ঘটক, চাপে পড়ে এইসব করা হচ্ছে, সততার সঙ্গে রাজনীতি করে কি লাভ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ কয়লা পাচার মামলায় প্রায় ৫ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে আসানসোলে আপকার গার্ডেনে মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়ি থেকে যখন সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল বেরোচ্ছে তখন ঘড়িতে দুপুর দেড়টা। বাঙালির আচার বা রীতি অনুযায়ী কোন অতিথি বা কেউ বাড়িতে আসার পরে যখন
চলে যান, তখন তাকে গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও বলা যেতে তার কোন ব্যতিক্রম ঘটলো না। প্রায় পাঁচ ঘন্টা কয়লা পাচার মামলায় তদন্ত অভিযান চালিয়ে সিবিআইয়ের ৪ অফিসার যখন বলতে গেলে প্রায় খালি হাতেই নিচে নেমে এলেন, তাদের সঙ্গে বাড়ির গেট পর্যন্ত এসে বিদায় জানালেন মন্ত্রী মলয় ঘটকের স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘটক।
পরে একেবারেই সাধারণ ভঙ্গিতে কোনরকম উদ্বেগ ছাড়াই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী স্ত্রী বললেন, চাপে পড়ে এইসব করা হচ্ছে । সততার সঙ্গে রাজনীতি করে কি লাভ?


তার কাছে জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রী মলয় ঘটকের নাম কয়লা পাচারকাণ্ডে জড়িয়েছে ও বলা হচ্ছে কয়লা মাফিয়াদের কাছ থেকে নাকি টাকা আসত তার কাছে। ইডি তাই তাকে বারবার ডেকে পাঠাচ্ছে। এর উত্তরে তিনি বলেন, আমার শ্বশুর মশাই কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন। অন্ডাল এয়ারপোর্ট বা কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরের জমির একটা বড় অংশ আমার শ্বশুরমশাইয়ের। সেই জমি মন্ত্রী নিজের ভাইদের নামে করে দিয়েছেন। যিনি তার বাবার সম্পত্তি ভাগ করে দিতে পারেন নিজের ভাই ও খুড়তুতো ভাইদের, তিনি কয়লা মাফিয়াদের কাছ থেকে টাকা নেবেন এটা কেউ ভাবতে পারেন? কেউ বিশ্বাস করবে? এটা অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমার ছেলেও এখন খুব ভালো জায়গায় পৌঁছে গেছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখরাতে আমাদের অনেক সম্পত্তি আছে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন


এরপর তিনি বলেন, সিবিআই আধিকারিকরা আমাকে বলেছেন এটা একটা মন্ত্রীর বাড়ি ভাবতে পারি নি। আমরা যা ভেবেছিলাম সবই এসে উল্টো দেখলাম। তারা আমার সঙ্গে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেছেন। আমিও যতদূর পেরেছি সৌজন্যতা দেখিয়েছি। কয়েকটা আলমারি ভাঙ্গার জন্য তারা চাবি তৈরীর লোক ডেকে এনেছিলেন। এর উত্তরে সুদেষ্ণা ঘটক বলেন, সিবিআইয়ের অফিসাররা নন। আমি চাবিওয়ালাকে ডেকে এনেছিলাম। কেননা ঐসব আলমারির চাবি গুলো হারিয়ে গেছে। তারপর তারা আলমারির চাবি তৈরী করে সেগুলো খোলা করিয়েছেন। তারা কিছু কি পেয়েছে? আপনারা কি কিছু দেখলেন ওনাদের হাতে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি সাংবাদিকদের।

তারপর বলেন যে ফাইল হাতে নিয়ে তারা এসেছিলেন সেই ফাইলে নিয়ে গেছেন। তারা সব দেখে কিছু লেখালেখি করেছেন। আমাকে সইও করিয়েছেন। কোন কিছু তারা আমার বাড়ি থেকে নিয়ে যাননি। বাড়ির ভেতরে বিছানা থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিসপত্রে সিবিআইয়ের অফিসার কি কিছু করেছেন? তিনি বলেন না। আমাকে তারাই বলেন, সব নামিয়ে দিন। আমরা দেখে নিচ্ছি। ওরা ভদ্রতা দেখিয়েছেন। সবকটা ঘর, বাথরুম, রান্নাঘর ঠাকুর ঘর দেখার পর আমার কিছু ভাঙা জিনিসপত্র যেখানে আছে চিলেকোঠার ঘর দেখতে চান। সেখানে তাদের নিয়ে গিয়ে বললাম এখানেও দেখুন। তখন ওনাদেরই একজন বললেন ম্যাডাম ভাঙা জিনিসপত্র ঘরে রাখতে নেই। এটা শুভ নয়। যেমন আমার একটা আলমারি ও টেবিল ভাঙ্গা রাখা আছে।

তিনি বলেন, আমার এক বোন এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমি বলেছি না ঢুকতে পারবে না। যেটা নিয়ম সবাইকে সেটাই মানতে হবে। আমি বলেছি, আপনারা আপনাদের নিয়ম মেনে যার দেখার দেখুন। একাধিকবার সিবিআইয়ের অফিসাররা আমায় বলেন, আমরা অন্যান্য জায়গায় গিয়ে যা যা দেখেছি এখানেই তা তো দেখলাম না। “এটা আমরা ভাবতেই পারছি না”!

Leave a Reply