ASANSOL

সরকারি বকেয়া মেটাইনি জেলার প্রায় ২৮০ টি ইটভাটা

৪১৬ টি ইটভাটার রেজিস্ট্রেশন আছে সেখানে মাত্র ১৩৫ টি গ্রীন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে কাজ করছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য্য,আসানসোল। শীত শুরু হতে না হতেই আসানসোলসহ পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে লাল ইটের কারবার শুরু হয়ে গেছে ।আর এই কারবারে শতাধিক সংস্থা যারা অবৈধভাবে ইটভাটার কাজ করছেন বলে খোদ প্রশাসনের কাছেই অভিযোগ আছে। এইসব ইটভাটাগুলির অনেকের কাছে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর নোটিশ পাঠালেও তাতে তারা তেমন গুরুত্ব দেননি। অন্তত সরকারি পরিসংখ্যান তাই বলছে। জেলায় যেখানে ৪১৬ টি ইটভাটার রেজিস্ট্রেশন আছে সেখানে মাত্র ১৩৫ টি গ্রীন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে কাজ করছে । বাকিগুলি সরকারকে প্রকাশ্য দিবালোকেই ফাঁকি দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ।


সরকারি সর্বশেষ নির্দেশকে উপেক্ষা করে অবাধে মাটি চুরি করে এবং বিভিন্ন এলাকা পুকুরের জল বা অবৈধভাবে ইট তৈরি করছে। এতে দূষণ ছড়াচ্ছে এবং পরিবেশন নষ্ট হচ্ছে বলে পরিবেশবিদরা মনে করেন। শুধু তাই নয় বেশ কিছু ইটভাটা অবৈধ কয়লা উপর নির্ভর করে চলে বলেও অভিযোগ। ২০২০ – ২১ সালে রানীগঞ্জ, বারাবনি এবং কুলটিতে এমন সব অবৈধ বেশ কয়েকটি ইটভাটাতে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কাগজে-কলমে ৪১৬ টি ইটভাটার হদিশ আছে। কিন্তু তার মধ্যে ১৩৫ টি ইটভাটা গ্রীন বেঞ্চের সিদ্ধান্ত মেলে সরকারি নির্দেশ কে কাজে লাগিয়ে তারা ভাটা চালাচ্ছেন বলে খোদ ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের জেলা আধিকারিক অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ টুডু জানিয়েছেন ।

তিনি বলেন আমাদের কাছে সরকারি বকেয়া দীর্ঘদিন ধরে যারা মেটাইনি এদের সংখ্যাটাও প্রায় ২৮০। শুধু গতবছর নয় কোন কোন ইটভাটা সংস্থা আছে যাদের বেশ কয়েক বছরের পাওনার বড় অংশই তারা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর কে মেটাতে পারেননি। এই টাকার পরিমাণ আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা হবে। এদের সরকারিভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে ।এই দপ্তর সূত্রে জানা গেছে গত অর্থ বর্ষ অর্থাৎ ২০২১২২ এ শে ভূমি রাজস্ব দপ্তর ১ কোটি ৮৯ লক্ষ ১৭ হাজার ১৮৯ টাকা রাজস্ব বাবদ আয় করেছিল ইটভাটা গুলো থেকে।


যাদের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা আছে কিম্বা যারা দীর্ঘদিন অবৈধভাবেই এই কারবার করছেন তাদের ক্ষেত্রে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ইটভাটা সংস্থাকে নোটিশ পাঠিয়েছি। কাউকে একাধিকবারও নোটিশ দেয়া হয়েছে। এই নোটিশ মেনে যদি তারা ব্যবস্থা না নেন তাহলেই সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।তিনি বলেন শীত পড়তেই এইসব ইটভাটা গুলো যেহেতু সচল হয় স্বাভাবিকভাবেই আমরা শীঘ্রই এদের ডেকে আরেকবার নোটিশ ধরিয়ে নির্দিষ্ট সময় বলে দেবো। যদি ওই সময়ের মধ্যে তারা টাকা না দেন তাহলে সে ক্ষেত্রে জরিমানা নেওয়া হবে বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


তিনি জানান আগে ইটভাটার মাটির জন্য আলাদা করে সরাসরি কোন রাজস্ব সরকারের ঘরে আসতো না ।গত জুলাই মাসে সরকার মাটি পিছু একটি অর্থ ধার্য করে দিয়েছে। সেই অর্থ ইটভাটার মালিকদের দিতে হবে। এক্ষেত্র মালিকরা নিজেরা যে হিসেব দেন তাও সরজমিনে খতিয়ে দেখবেন আমাদের আধিকারিকরা।
বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে কিম্বা সরকারি জমির থেকে মাটি কেটে অবৈধভাবে নিয়ে গিয়ে তা দিয়ে ইট বানানো অভিযোগ হয়। দু’বছর আগেই দেখা গিয়েছিল বারাবনি ,কুলটি এলাকায় স্কুলের জমির সঙ্গে লাগুয়া জমি থেকে বিপুল পরিমাণ মাটি ইটভাটার মালিকরা কাটছিলেন। সেই তথ্য জেলা প্রশাসন জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। এমন অভিযোগ যদি থাকে তাহলে অবশ্যই তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে এই দপ্তরের এক উচ্চ বদ অস্ত্র আধিকারিক জানান।

Leave a Reply