ASANSOL

শিল্পাঞ্চলে বেআইনি অটো ও টোটোর দৌরাত্ব, বাস ও মিনিবাস প্রায় বন্ধের মুখে

পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবারও নির্দেশ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ

বেআইনি অটো ও টোটো চলাচলের জন্য পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে বড়বাস ও মিনিবাস বন্ধ হয়ে গেছে। বা এখনো পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যেসব বাস ও মিনিবাস চলাচল করছে তা প্রায় বন্ধের মুখে। এইভাবে বেআইনি অটো ও টোটোর দৌরাত্বের জন্য বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাস মালিকদের পাশাপাশি বাস কর্মীরা কাজ হারিয়েছেন। এর পাশাপাশি এইভাবে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে বাস ও মিনিবাস মালিক সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে।


এইভাবে সংকটের মুখে পড়া বাস শিল্পকে বাঁচাতে
যেসব রুটে সম্পূর্ণভাবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে সেগুলো হলো (১ ) বরাকর থেকে ডিসেরগড় ঘাট, ( ২ ) আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে বার্ণপুর ভায়া আসানসোল আদালত, (৩ ) আসানসোল আরসিআই থেকে মহিশীলা কলোনি ভায়া জেলা হাসপাতাল, (৪ ) আসানসোল কল্যানপুর হাউসিং থেকে মহিশীলা কলোনি, ( ৫ ) কুলটি শীতলপুর থেকে চিনাকুড়ি, (৬ ) আসানসোল সেনরেলে থেকে আসানসোল স্টেশন ভায়া আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড, ( ৭ ) রানিগঞ্জ মোড় থেকে টিরাট, ( ৮ ) রানিগঞ্জ থেকে মেজিয়াঘাট, ( ৯ ) আসানসোল থেকে কুয়ারডি ভায়া চাঁদা, (১০ ) রানিগঞ্জ থেকে নুপুর, (১১ ) রানিগঞ্জ থেকে ধান্ডারডিহি, ( ১২ ) রানিগঞ্জ থেকে জেকেনগর, ( ১৩ ) মেজিয়াঘাট থেকে বাঁশরা ও (১৪ ) মেজিয়াঘাট থেকে কুনুস্তোরিয়া।

আর যেসব রুটে অটো ও টোটোর দৌরাত্বে মিনিবাস চলাচল প্রায় বন্ধের মুখে সেগুলো হলো (১ ) পান্ডবেশ্বর থেকে ছত্রিশগন্ডা, (২ ) জামুড়িয়া থেকে চুরুলিয়া, ( ৩ ) জামুড়িয়া থেকে দোমোহানী ও (৪) হরিপুর থেকে উখড়া। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫০ টি মিনিবাস বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার মুখে রয়েছে ৫০ টির মতো বাস। বড়বাসের সংখ্যাটাও সবমিলিয়ে ১০০ এর কাছাকাছি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বর্তমান রাজ্য সরকার এই বেআইনি অটো চলাচলের নিয়ে একটি হাইপাওয়ার কমিটি তৈরি করেছিলো।

সেই কমিটি ১৪-০৮-২০১৮ সালের ১৪ আগষ্ট একটি নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ( No. 3944 – WT / 3M – 01 / 2010Pt.II dt . 14/8/18 ) অটো চলাচলের একটি গাইড লাইন তৈরি করে। রাজ্যের সমস্ত জেলায় তা পালন করার নির্দেশ দেওয়া । কিন্তু রাজ্যের কোথাও এই নিয়মগুলি কার্যকর হয়নি।


২০১৯ সালের ২৬ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার আরো একটি নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ( Notification No. 2996 ( 2 ) WT / 3M 56 / 13 ( Pt – II dt . 26/7/19 ) টোটো চলাচলের গাইডলাইন তৈরি করে। একইভাবে রাজ্যের সমস্ত জেলায় তা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয় । কিন্তু এই নির্দেশও কোথাও কার্যকর হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর না হওয়া বাস মালিকরা আবারও আদালতের দ্বারস্থ হন। তার পরিপ্রেক্ষিতে
গত ২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের শুভ্রা ঘোষ এই সংক্রান্ত একটি মামলায় অটোরিক্সা ও টোটোরিক্সা চলার নিয়ে আবার ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের সরকারী গাইডলাইন কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।


রাজ্য সরকারের গাইডলাইনে বলা আছে, রাজ্য সড়ক বা জিটি রোড, জাতীয় সড়ক ও বাস-মিনিবাস রুটে অটো ও টোটো চলাচল করবে না। এইসব কিছু ঠিক করতে হবে জেলা প্রশাসনকে।


এই প্রসঙ্গে আসানসোল মিনিবাস এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় ও বড়বাস এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, জানিনা এরপর কি হবে। আমরা সবসময় জেলা প্রশাসনের তরফে ভরসা রাখি। সুদীপবাবু আরো বলেন, ২০১৯ সালে ২০২২ সালের মধ্যে এই নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ২৬ টি বৈঠক করেছি। বারবার আলোচনা হয়েছে কি করা হবে, তা নিয়ে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যত সময় গেছে একের পর এক রুটে বাস বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে এরপরেও যদি কিছু না হয় তাহলে তারা বন্ধের মতো আন্দোলনের পথে যাবেন? এই প্রশ্নে সুদীপ রায় বলেন, নতুন করে বন্ধ করার কিছু নেই। যা অবস্থা তাতে আস্তে আস্তে সবই বন্ধ হয়ে যাবে।


অন্যদিকে, এই নিয়ে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া বলেন, আমরা সবসময় বলছি বাস ও মিনিবাস রুটে অটো ও টোটো চলাচল বন্ধ করা হোক। এর পরিবর্তে টোটো ও অটোর নির্দিষ্ট রুট করা হোক।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে এই নিয়ে আলোচনায় বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *