ASANSOL

স্বামী, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা, তদন্তে পুলিশ

পরিত্যক্ত পাথর খাদান থেকে উদ্ধার হওয়া চারজনের দেহ সনাক্ত

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* পরিত্যক্ত পাথর খাদানের জল থেকে উদ্ধার হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চারটি মৃতদেহর সনাক্ত হলো। মৃতরা একই পরিবারের। তারা সম্পর্কে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের দুই ছেলেমেয়ে। রবিবার সন্ধ্যার পরে এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা এলাকায়। মৃতদের নাম হলো বিজয় রাউত ( ৪৬), মিতু দেবী ( ৩৭), কৃষ্ণ রাউত ( ১০) ও লাডলি রাউত ( ৩)। বিজয় আসানসোল উত্তর থানার আরসিআইয়ের লালবাংলো এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতো। সে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের আসানসোল ডিভিশনের আসানসোলের জিটি রোডের সিটি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অফিসে ঠিকা কর্মী হিসাবে কাজ করতেন।


সোমবার বিকেলে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে চারটি মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। তারপর পুলিশ মৃতদেহগুলি বিজয় রাউতের দাদা ওমপ্রকাশ রাউতের হাতে তুলে দেয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোন সমস্যার কারনে বিজয় রাউত কমপক্ষে ৫ দিন আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরিত্যক্ত পাথর খাদানের জলে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যদিও, বিজয়ের দাদা ওমপ্রকাশ রাউত ও ভাগ্নে পিন্টু রাউত এখনই এই ঘটনা আত্মহত্যা বলে মানতে চাননি। তাদের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা কিছু বলবো। তবে এতটুকু বলতে পারি, বিজয় গোটা পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেনা। সে খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলো। সবার সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিলো। তাদের দাবি, এর পেছনে অন্য কিছু থাকলেও থাকতে পারে। যদিও, সোমবার বিকেল পর্যন্ত পরিবারের তরফে কোন অভিযোগ পুলিশ কাছে করা হয়নি। পুলিশ জানায়, পরিবার কোন অভিযোগ করলে, তার ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে।


জানা গেছে, চারজনের মৃতদেহে তেমন কোন জখম বা আঘাতের চিহ্ন নেই। ৪/৫ দিনের বেশি জলে থাকার কারণে মৃতদেহগুলিতে পচন ধরেছে।
উল্লেখ্য, রবিবার বিকেল সাড়ে চারটের পরে আসানসোল উত্তর থানায় খবর আসে যে, কাল্লার ছাতা পাড়ায় একটি পরিত্যক্ত পাথর খাদানের জলে চারটি মৃতদেহ ভাসছে। তড়িঘড়ি পুলিশ সেখানে আসে। নিয়ে আসা হয় জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর বা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের উদ্ধারকারী দলকে। এলাকায় প্রচুর মানুষেরা এসে জড়ো হন। বোঝা যায়, চারটি মৃতদেহ একজন পুরুষ, একজন মহিলা ও দুটি বাচ্চা। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় এলাকায় আলো লাগিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পরে এলাকার বাসিন্দাদের সাহায্যে পুলিশ তিনশো ফুটের বেশি গভীর খাদানের জল থেকে উদ্ধার করে চারজনের মৃতদেহ। বিজয়ের কাছ থেকে পাওয়া একটি পরিচয়পত্র দিয়ে পুলিশ রাত সাড়ে নটার পরে তাদের খোঁজ পায়। এরপর পুলিশ বিহারের জামুইয়ের গিধোড়ের বাসিন্দা বিজয়ের দাদা ওমপ্রকাশ রাউতকে ফোন করে ঘটনার কথা জানায়। তাকে পুলিশ আসানসোলে আসতে বলে। এরপর একে একে ভাগ্নে পিন্টু রাউত সহ অন্যান্যরা এই ঘটনার কথা জানতে পারেন। সোমবার সকালে লালবাংলো এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিজয় পরিবার নিয়ে যে ভাড়াবাড়িতে থাকতো, তার সামনে প্রচুর ভিড়। এমন ঘটনায় সবাই হতচকিত। তারা কেউই বুঝতে পারছেন না, কি করে এমন ঘটনা ঘটলো।


যে বাড়িতে বিজয় থাকতো তার মালিক মমতাদেবী বলেন, বিজয় খুব ভালো ছিলো। তার স্ত্রীও শান্ত স্বভাবের ছিলো। গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বিজয় ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বেরোনোর সময় বলে, তারা নানি ( দিদিমা) বাড়ি যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলে আসবে। তারপর দুদিন না আসায় আমি ওর দুটি মোবাইলে ফোন করি। দেখি সুইচ অফ। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কালরাতে পুলিশের কাছে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার কথা জানতে পারি।
বিজয়ের দাদা এদিন বলেন, কালরাতে পুলিশের ফোন পেয়ে গোটা ঘটনার কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। তড়িঘড়ি চলে আসি। বুঝতে পারছি না, কি করে এই ঘটনা ঘটলো। তিনি বলেন, ভাইয়ের চারকাঠা একটা জমি ছিলো। শুনেছিলাম ভাই সেই জমি দালানের মাধ্যমে ৪ লক্ষের বেশি টাকায় বিক্রি করতে চাইছিলো। তারজন্য সে দু’দফায় ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলো। তারপর আর কিছু জানিনা। তারপর এই ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, ঠিক কি হয়েছে।
এদিকে আরো জানা গেছে, ৯ জানুয়ারি বিজয় তার এক দিদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলো। বলেছিলো সব ঠিক আছে। বিজয়ের জমি ও তা বিক্রি করার কথা অনেকেই জানতো।


আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে পাথর খাদানের জলে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তাদের মৃত্যুর কারণ আরো পরিষ্কার হবে। সেই কারণে পরিবারের দাবি মতো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার রিপোর্টের ভিত্তিতে মৃতদেরগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে পরিবারের তরফে যদি কোন আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখিত অভিযোগ করা হয়, তাহলে তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।

Leave a Reply