ASANSOL

আসানসোলে বৃদ্ধকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ, প্রেমিক-প্রেমিকার বিরুদ্ধে, তদন্তে পুলিশ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায় : আসানসোলে বৃদ্ধকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ প্রেমিক-প্রেমিকার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা পলাতক। তদন্তে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ।
আসানসোল দক্ষিণ থানার আড়াডাঙ্গা এলাকায় বিবাদকে কেন্দ্র করে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় এক তরুণী ও তার প্রেমিক মিলে বৃদ্ধকে মারধর করে। যার জেরে মৃত্যু হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। নিহতের নাম অমর সিং বলে জানা গিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ৪০ নং ওয়ার্ডের এলাকার কাউন্সিলরের স্বামী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। এলাকায় পৌঁছন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের এসিপি সেন্ট্রাল দেবরাজ দাস, আসানসোল দক্ষিণ থানার আইসি কৌশিক কুন্ডু, এস আই তপন দুবে সহ অন্যান্য পুলিশকর্মীরা পৌঁছন। তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।



অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করছেন অভিযুক্তের পরিজনেরা। অভিযুক্ত কিশোরীর মা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন তার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি। পুরো বিষয়টি কি হয়েছে তিনি জানেন না। একই সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিহত অমর সিং একজন কয়লা মজদুর ইউনিয়ন নেতা বলে জানা গেছে। অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।



এদিকে রাতের দিকে নিহত অমর সিং এর অন্য একটি বাড়ি আসানসোল পৌরনিগমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড আসানসোল হটন রোড মাস্টার পাড়ায় গেলে দেখা যায় নিহত অমর সিং এর দেহ সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিখা ঘটক বিষয়টি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক বলেন। তিনি বলেন নিহত এবং তার পরিবার তার খুবই পরিচিত। তার দলের লোক বলেই দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন যতটুকু শুনতে পাচ্ছি, চল্লিশ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়িতে তিনি ছিলেন বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ তিনি কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি থেকে বের হন এবং বাড়িতে আধঘন্টা পর ফেরত আসার পর দেখা যায় তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে এবং অক্সিজেন দেওয়ার আর্জি জানান তিনি। পাশের বাড়ির থেকে পোর্টেবল সিস্টেমের অক্সিজেন একটু দেবার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে তাকে তড়িঘড়ি হাসপাতাল নিয়ে আসার সময় অমর সিংয়ের মৃত্যু হয়। এরপরে মৃতদেহ আমার ওয়ার্ডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আমি পুলিশের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি যে যেহেতু পুলিশ কেস হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত না করা পর্যন্ত ডেথ সার্টিফিকেট ও পাওয়া যাবে না সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরেই মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবারের পাশে সবসময় আছি।



এরপরই মাস্টারপাড়ার বাড়ি থেকে অমর সিংয়ের মৃতদেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয় রাত প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ।

এরপরেই রাত প্রায় দশটা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি। তিনি এই ঘটনাকে মর্মান্তিক আখ্যা দিয়ে বলেন পরিবারের পাশে তিনি এবং তার দল রয়েছে। তিনি বলেন তিনি ওই এলাকার কর্মীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে ওই ব্যক্তি কোনো অবাঞ্চিত ঘটনা দেখে ফেলার জন্যই দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে মারা হয়েছে তাকে। এটির নিন্দা করেন। পুলিশ প্রশাসনের কাছে দোষীদের যত দ্রুত সম্ভব ধরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার ওপর প্রশ্ন তোলেন তিনি।



মৃতের ভাই বিজয় সিং বলেন তার আসানসোল বাজারে ফুটপাতে দোকান রয়েছে। তিনি দোকানে সেইসময় ছিলেন। হঠাৎ তার বাড়ি থেকে ফোন আসে যে তার দাদা পড়ে গেছেন। তিনি তড়িঘড়ি অন্যান্যদের সঙ্গে তার দাদাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্রে করে তিনিও ওই তরুণী এবং তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে জেলা হাসপাতালে উপস্থিত সমাজসেবী ও কয়লা মজদুর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতাপ সিং বলেন যে মৃত অমর সিং কয়লা মজদুর কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন হল তিনি আরাডাঙ্গাতে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।যতদূর শোনা যাচ্ছে যে তার আরডাঙায় পাড়ায় তার বাড়ির কিছু দূরে কিছু ব্যক্তি তাকে মারধর করে। পরে বাড়িতে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়। আসানসোল শহরে বারবার এরকম ঘটনা ঘটায় শহরের বাসিন্দারা চিন্তিত রয়েছে নাগরিক সুরক্ষা নিয়ে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের দিকে নিহতের স্ত্রীর পক্ষ থেকে আসানসোল দক্ষিণ থানায় মামলা দায়ের করা হয় বলে পুলিশ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

Leave a Reply