আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে অভিযোগ দায়ের
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায় : এ যেন আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিহারের পাটনার জুলি এবং মটুকনাথের স্ক্রিপ্টের পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল। আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক বাংলাদেশি ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। ছাত্রীর অভিযোগ ছিল আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ক্লান্ত হয়ে ওই ছাত্রী বুধবার বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নেন এবং বিচারের জন্য সেখানকার ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে আবেদন করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার রিয়াজুল ইসলাম ভুক্তভোগী ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্গাপুরের মহিলা থানায় মামলা হয়।
তবে মহিলা থানায় এফআইআর-এর তারিখ ১০ এপ্রিল উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ ১৯ এপ্রিল বুধবার দূতাবাসে পৌঁছায়। সে যাই হোক, কিন্তু এখন এ ব্যাপারে পুলিশ অ্যাকশনে এসেছে। শুক্রবার ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় এবং এর পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়। বিষয়টি এখন অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। এর আগে কেএনইউ-এর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন ওই ছাত্রী। রাস্তা দিয়ে চলার সময় তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। শুক্রবার ছাত্রীটির জবানবন্দি রেকর্ড করা হলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানিয়েছেন, গত ১৫ দিন ধরে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আসানসোল মহিলা পুলিশ থানা এবং সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকদের কাছে একাধিকবার এই বিষয়ে অবহিত করেছেন কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আজাজুল আলী খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নির্যাতিতা জানান, বুধবার সকালে তিনি খাবার কিনতে বাজারে যাচ্ছিলেন, এমন সময় দুইজন বাইক আরোহী
এসে তাকে ধাক্কা মারে। তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাতে থাকা সব কল রেকর্ড, এসএমএস ও ছবির ভিডিও মুছে ফেলার চেষ্টা করে। তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে আওয়াজ পেয়ে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়। এ সময় সুযোগ বুঝে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ছাত্রীটি বাংলাদেশের রংপুর ঠাকুর গ্রামের হাজীপাড়ার বাসিন্দা এবং কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিজি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক আজাজুল আলী খানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক মাস ধরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। ছাত্রীটি তার শিক্ষক আজাজুলকে বিয়ের কথা বললেই আজাজুল তার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন। এমনকি তার ফোন তোলাও বন্ধ করে দেন। তার সাথে ঠিকমতো কথাও বলেন না এবং বলেন কাজের চাপ অনেক। ওই শিক্ষকের আচরণে বিরক্ত হয়ে ছাত্রী বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক আধিকারিককে অভিযোগের কপি দিয়ে বিচার চেয়ে আবেদন করেন ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপর পুলিশের সহায়তাও নেন তিনি। পুলিশও বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেও অভিযুক্ত না থাকায় পুলিশকে ফিরে যেতে হয়। এখন মামলাও নথিভুক্ত হয়েছে এবং পুলিশও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড: সাধন চক্রবর্তী জানান, নির্যাতিতার পুরো পরিবার বাংলাদেশে থাকে। তিনি আসানসোলের ত্রিবেণী দেবী ভালোটিয়া কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী এবং পরীক্ষায় ভালো করার পর কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানেই বাংলা শিক্ষকের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। পরে জানা যায়, ওই শিক্ষকের সঙ্গেও অন্য কারও সম্পর্ক ছিল, এরপর থেকেই দুজনের মধ্যে কলহ শুরু হয়। ঘটনার তদন্ত আগে থেকেই চলছিল। ভুক্তভোগী ছাত্রী এর আগে ৬-৭ এপ্রিল অভিযোগ দায়ের করেন, এরপর আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত চলছিল। এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।