ASANSOL

ডেঙ্গুর সঙ্গে পাল্লা জ্বরের, সামাল দিতে জেলা হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড চালু, জেলাশাসক ও মেয়রের বৈঠক

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Dengue In Asansol ) আসানসোল পুরনিগমের পাশাপাশি গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়েই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন প্রতিদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে জ্বর। আর এইসব রোগীদের চিকিৎসার জন্য ও গোটা পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার থেকেই আসানসোল জেলা হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হলো।
এদিন এই কথা জানান পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান। তিনি জানান, আপাততঃ ৩০ শয্যার মহিলা ও পুরুষদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালু হয়েছে । ইএনটি ওয়ার্ডে কোনও রোগী ভর্তি না থাকায় সেই ওয়ার্ড খালি থাকতো । আপাতত সেখানেই এই নতুন ওয়ার্ড চালু করা হলো । সেখানে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা বেড রাখা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।


জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, জ্বর নিয়ে ২১৮ জন রোগী এদিন সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যা একটা রেকর্ড বলা যায়। তিনি আরো বলেন, যেখানে গড়ে ৬০০ পর্যন্ত রোগী প্রতিদিন ভর্তি থাকতো। এদিন তা বেড়ে ৮২০ হয়ে গেছে। বেড বাড়ানোর জন্য নতুন করে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়েছে।


অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুনপ্রসাদ ইতিমধ্যেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন বলে এদিন জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি বলেন, সমস্ত দিক নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা ও সমীক্ষা করা হয়েছে। কিছু বাইরে থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত আসছেন। যাদের আমরা ” মাইগ্রেন্ট ‘ বলে থাকি।
অন্যদিকে মঙ্গলবার আসানসোল পুরনিগমে মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে একটও বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিধান উপাধ্যায় বলেন, পুর এলাকায় গত ১২ দিনে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের বাড়ির লোকেরা কিন্তু পুরনিগমকে ঐ তিনজনের জ্বর হয়েছিলো বলে জানাননি। এখনো লক্ষ্য করে দেখা যাচ্ছে যাদের বাড়িতে জ্বর হচ্ছে তারা কিন্তু পুর কর্মীদের জানাচ্ছেন না। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারাই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের কাছে আবেদন তারা যেন অবশ্যই রক্ত পরীক্ষার জন্য পুরনিগমের স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সরকারি হাসপাতালে যান। তিনি আরো বলেন, সাফাই দপ্তরের কর্মীদেরকেও সব বলা হয়েছে। তারাও যথেষ্ট ভালো কাজ করছেন। যেখানেই ড্রেনের সমস্যা আছে সেটাও দ্রুত মেটাতে বলা হয়েছে। আমি বোরো চেয়ারম্যানদের বলেছি নিজেরা নিজেদের এলাকার প্রতি বিশেষ নজর দিন।


এদিকে, স্বাস্থ্য দপ্তরের মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু ভগৎ বলেন, আসানসোল পুরনিগমের পাঁচটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ( আসানসোলে দুটি ও জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ ও কুলটিতে একটি) এল্যাইজা মেশিন দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। পুরবাসীদের কাছে মেয়র পারিষদের আবেদন, আপনারা জ্বর হলে পুরনিগমের স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সরকারি হাসপাতালে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এদিকে, আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি এক ভিডিও বার্তায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পুর আধিকারিকদের কাছে আবেদন করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন পুরনিগমের সব আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে সম্পূর্ণ সচল রেখে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। আর এখনো বহু জায়গায় আবর্জনা পরিষ্কার হচ্ছে না । সেগুলো দেখতে হবে। সর্বোপরি সাফাইয়ের কাজের সাথে যারা যুক্ত তারাও যদি আক্রান্ত হয় তাদের উপর চিকিৎসার বিশেষ নজর দেওয়া উচিত প্রাক্তন মেয়র মনে করেন।

Leave a Reply